ঢাকা, ১৫ পৌষ (৩০ ডিসেম্বর) :
ঢাকার চারটি ভেন্যুতে ০২ দিন ব্যাপী আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় দক্ষতা প্রতিযোগিতা-
২০২১’ এর চূড়ান্ত পর্ব শেষে আজ (৩০ ডিসেম্বর) আগারগাঁও এর বিনিয়োগ ভবন
মিলনায়তনে সমাপনী ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ের এ চূড়ান্ত
প্রতিযোগিতায় ৮ টি ট্রেডে ৯ জন চ্যাম্পিয়ন কে পুরস্কৃত করা হয়। পুরষ্কার হিসেবে
বিজয়ীগণকে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। সমাপনী ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এর সচিব মো: তোফাজ্জল
হোসেন মিয়া এবং সভাপতিত্ব করেন জনাব দুলাল কৃষ্ণ সাহা, নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব),
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
গত ২৯ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকার ন্যাশনাল হোটেল এন্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট,
মহাখালী, বাংলাদেশ-কোরিয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মিরপুর, ড্যাফোডিল
ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি বাংলাদেশ, পান্থপথ এবং ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, তেজগাঁও
এই চারটি ভেন্যুতে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় দক্ষতা প্রতিযোগিতা-২০২১’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয়
পর্যায়ের এ চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় ১৩ টি ট্রেডে বিভাগীয় পর্যায়ে নির্বাচিত ৬৬ জন
প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেছেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সচেতনতামূলক কর্মসূচি ও
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু জাতীয় দক্ষতা প্রতিযোগিতা-২০২১ পাওয়ার্ড
বাই কেএসআরএম। বিভাগীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য সারাদেশের ১৭০৭
জন প্রতিযোগী অনলাইনে নিবন্ধন করেছিল।
‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় দক্ষতা প্রতিযোগিতা-২০২১’ এর চূড়ান্ত পর্বের ৯ জন বিজয়ী আগামী
বছর অক্টোবর মাসে চীনের সাংহাইতে অনুষ্ঠিতব্য ৪৬তম ওয়ার্ল্ড স্কিলস কমপিটিশন-
২০২২ এ সরকারি ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।
উল্লেখ্য যে, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দেশের তরুণ
সমাজকে দক্ষতা প্রশিক্ষণে উদ্বুদ্ধ করা, দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে মানবসম্পদকে
গতিশীল করা, বিভিন্ন দেশের সাথে দক্ষতা উন্নয়নের সেতু বন্ধন তৈরি করা, নতুন নতুন
কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং ওয়ার্ল্ড স্কিলস্ কম্পিটিশনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে
দেশব্যাপী ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় দক্ষতা প্রতিযোগিতা ২০২১’ এর আয়োজন করেছে।
‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় দক্ষতা প্রতিযোগিতা ২০২১’ এর পাওয়ার্ড বাই পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রয়েছে
কেএসআরএম স্টিল প্ল্যান্ট লিমিটেড।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় দক্ষতা প্রতিযোগীতা ২০২১ এ ট্রেড ভিত্তিক বিজয়ীরা হলেন-
পেইন্টিং অ্যান্ড ডেকোরেটিং এ ঢাকার আব্দুল মুত্তাদির, প্ল্যাস্টারিং অ্যান্ড ড্রাই ওয়াল
সিস্টেম এ ঢাকার শ্রী প্রিতম কুমার দাস, ফ্যাশন টেকনোলজি তে ঢাকার লামিয়া নাসিব
রাইসা, বেকারি বিভাগে খুলনার মোঃ সাব্বির হোসেন হৃদয়, কুকিং এ সিলেটের শেখ তাসনিয়া
তাবাসসুম, পেস্ট্রি অ্যান্ড কনফেকশনারি এ রাজশাহীর মুমতাহিনা জাফরিন, ওয়েব
টেকনোলজিস এ ঢাকা থেকে নাজমুল হক সাকিব, সাইবার সিকিউরিটিতে চট্রগ্রামের ইফাদুল
ইসলাম এবং মুত্তাকিম চৌধুরী।
অবশিষ্ট ৫ টি ট্রেডে ওয়ার্ল্ড স্কিল ইন্টারন্যাশনাল এর মান অর্জন না করতে পারায়
কাউকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা যায়নি।
জানা যায়, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর তত্ত্বাবধায়নে চূড়ান্ত পর্যায়ে বিজয়ীদের
নিয়ে ঢাকায় ছয় মাসব্যাপী গ্রুমিং সেশন অনুষ্ঠিত হবে এবং পরবর্তীতে তারা চীনের সাংহাইতে
অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড স্কিলস্ কম্পিটিশন-২০২২ এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।
সমাপনী ও পুরষ্কার বিতরণী এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জনাব
মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিশেষ অতিথি ড. আহমেদ
মুনিরুছ সালেহীন, সচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, সভাপতি
জনাব দুলাল কৃষ্ণ সাহা, নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব), এনএসডিএ, এবং কেএসআরএমের
রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট উইংয়ের জিএম কর্নেল (অব.) মো. আশফাক উল ইসলামসহ
আমন্ত্রিত অতিথিগণ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন
কর্তৃপক্ষের যুগ্মসচিব ও সদস্য (নিবন্ধন ও সনদায়ন), জনাব মো. নূরুল আমিন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, এখন অনেক বিদেশী বিনিয়োগ
আসছে, বিদেশী প্রতিষ্ঠান আসছে, আমাদের ও উৎপাদন বাড়ছে। তাই আমাদের দক্ষতা
বাড়ানোর বিকল্প নেই৷ দেশের প্রযুক্তি সক্ষমতা বাড়াতে প্রযুক্তি খাতেও সমান তালে দক্ষ
জনশক্তি তৈরী করতে হবে। প্রাইভেট সেক্টরেও আমাদের প্রচুর যোগ্য লোক প্রয়োজন।
ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, প্রতি বছর আমরা প্রচুর জনশক্তি রপ্তানী করি। তবে
বেশি পরিমাণ জনশক্তি বিদেশে পাঠানোর চেয়ে দক্ষ জনশক্তি অল্প পরিমাণে পাঠিয়ে বেশি
রেমিট্যান্স উপার্জন করা কৃতিত্বের।
দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। দীর্ঘদিন এই প্রবৃদ্ধির ধারা ধরে রাখতে
হলে আমাদের দক্ষতা অর্জন করতে হবে৷ একশ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে, ৩৯ টি
হাইটেক পার্ক হচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রীণ ইকোনোমি তে ১১ লাখ দক্ষ লোক দরকার
হবে, হেলদ সেক্টরে ২০৩০ সালের মধ্যে কয়েক লাখ দক্ষ জনবল প্রয়োজন হবে। দক্ষতার
অভাবে আমাদের শ্রমিকের প্রোডাক্টিভিটি অনেক কম৷ আমাদের দক্ষতা অর্জনে দক্ষ
শিক্ষক, দক্ষ প্রতিষ্ঠান এবং সমৃদ্ধ গবেষণাগার প্রয়োজন৷
কর্নেল (অব.) মো. আশফাক উল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যে সকল মেগা প্রকল্প
চলমান আছে এবং আরো যে সকল মেগা প্রজেক্ট শুরু হতে যাচ্ছে এ সবগুলোর কারণে দেশের
সমগ্র শিল্প কল কারখানাতে যেমনি উৎপাদন চাহিদা বৃদ্ধি পাবে, তেমনি এ
প্রকল্পগুলোকেও সঠিকভাবে গতিশীল রাখতে প্রয়োজন হবে দক্ষ হাত ও মেধা৷ KSRM
গভীরভাবে এটা উপলদ্ধি করতে পেরেছে, তাই KSRM এর এ অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ততা যথাযথ
মনে করছে।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ ২০১৭ সালে ওয়ার্ল্ড স্কিলস্ ইন্টারন্যাশনাল এর ৭৯ তম দেশ
হিসেবে সদস্য পদ লাভ করে। বাংলাদেশের পক্ষে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ওয়ার্ল্ড
স্কিলস্ ইন্টারন্যাশনাল-এ প্রতিনিধিত্ব করছে।