লেখকঃ মোঃ হায়দার আলীঃ
মাদকের কারণে যুব সমাজ আজ ধ্বংসের পথে, এদের বাঁচাতে না পারলে সমাজ দেশের ব্যপক ক্ষতি হবে। আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এক সময় লুকিয়ে থাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থার তালিকাভুক্ত মাদ্রক মাদক ব্যবসায়ী ও সম্রাটরেরা এলাকায় ফিরে এসে, অসৎ কিছু পুলিশ, ডিবিপুলিশ, জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ,পরোক্ষ সহযৌগিতায় বীর দাফটে তাদের অবৈধ মাদক কারবার শুরু করেছেন। এটা সমাজ, দেশের জন্য সুখকর হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষনা করলেও মাদক কারবার বন্ধ হচ্ছে না। বরং বেড়েই চলেছে মাদক কারবার। মাদক ব্যবসায়ীরা লক্ষ লক্ষ টাকা উৎকোচের বিনিময়ে বিনিময়ে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের পদ পদবী বাগিয়ে নিয়েছেন, বিভিন্ন সংস্থার তালিকাভুক্ত মাদক সম্রাট, মাদক ব্যবসায়ীরা। এক এক জনের বিরুদ্ধে ৩/৪ টি বেশী মাদকের মামলা চলমান রয়েছে অথচ ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা উৎকোচ দিয়ে হয়েছেন প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন থেকে পৌরসভার, উপজেলা পর্যায়ে সভাপতি, সাধারন সম্পাদক, সাংগাঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদ পেয়েছেন। ওই সব হাইব্রিড, পরগাছা, অনুপ্রবেশকারী নেতারা পদ পেয়ে গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকাণ্ডে ছড়িয়ে পড়ছেন, মাদক, টেনাডারবাজি, চাঁদাবাজি, জমি দখল, খাসপুকুর দখল, সরকারি খাদ্যগুদামে রাতারাতি গম, ধান, চাল অবৈধভাবে প্রবেশ করিয়ে অঙ্গুল ফুলে কলাগাছ, তার পরে বটবৃক্ষ হয়েছেন। তারা এখন দল থেকে বহিস্কার হচ্ছেন। পদ হারিয়েও যেন তারা কোটিপতি, ফুলে ফেঁপে উঠেছে। শুধু কি তাই নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব খাটিয়ে হয়েছেন মেম্বার, কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান, মেয়র। তারা নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে মাদক ব্যবসাকে আরও উৎসাহিত করছেন। কিছু অসৎ পুলিশ, ডিবি পুলিশ সদস্য, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকতা, মাদকব্যবসায়ীদের সাথে সুসম্পর্ক রাখার অভিযোগ অনলাইন, স্থানীয়, জাতীয় পত্রিকা, টিভি সংবাদে উঠে এসেছে, মূলত এদের কারনে প্রধানমন্ত্রীর নিদেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে।
১০/১৫ বছর আগে যারা যারা কামলা, লেবার, মেকার, কুলি, রিকসা চালক, বয়েল ডিম বিক্রেতা, ঢাকা গাড়ীর হেলপার, নৌকার মাঝিগিরি করতো তারা মাদক ব্যবসা, হন্ডি ব্যবসা করে শূন্য থেকে শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে গেছেন, যে সকল ব্যাংক কর্মকতা হন্ডি, মাদক ব্যবসায়ীদের সহযৌগিতা করছেন, আশ্রয় প্রশয় দিচ্ছেন নিরপেক্ষ তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনসহ সকল অবৈধ সম্পদ সরকারী কোষাগারে জমা করার ব্যবস্থা গ্রহনের ব্যবস্থা করলে মাদক বন্ধ হতো বলে জন্য সচেতন মহল মনে করেন।
ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায় মাদক দ্রব্যের উপস্থিতি সুপ্রাচীনকাল থেকেই। খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ বছর আগে মেসোপটেমিয়া, এসিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে আফিমের নেনাক প্রমাণাদি পাওয়া যায়
বাংলার প্রাচীনতম কাব্য চর্চা পদেও তার যথেষ্ট প্রমান রয়েছে। সবচেয়ে প্রাচীন মাদকটির নাম হচ্ছে আফিম গাঁজা, ফেনসিডিল, নতুন সংযোজন হয় ইয়াবা। এ ছাড়া গাঁজা, আফিম, চরশ, বাংলা মদ, গুল, মরফিন, কোকেন, বিয়ার, ওয়াইন, হেরোইন, প্যাথেলিন, মারিজুয়ানা, ডেক্রপরটেন, প্যাথেডিন কোকেন চোলাইমদসহ বর্তমানে মাদক, মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীর তালিকা দিনে দীর্ঘ হচ্ছে। কোন ভাবে থামানো যাচ্ছেনা এ অবৈধ মাদক কারবার। ফলে সব চেয়ে ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে যুব সমাজ। দেশে মাদকের বিস্তৃতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তরুণ ও যুবসমাজ ব্যাপক হারে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।
মাদকে আক্রান্ত তরুণ ও যুবসমাজ ধ্বংসের পথে। বর্তমান সমাজে মাদক জন্ম দিচ্ছে একের পর এক অপরাধ। শুধু মাদকের কারনে ছেলের হাতে বাবা মা ভাই, স্ত্রী হাতে স্বামী, স্বামীর হাতে স্ত্রী, প্রেমিকের হাতে প্রেমিকা, প্রেমিকার হাতে প্রেমিক খুন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুনাক্ষনির ঘটনা ঘটছে। যা পত্র পত্রিকায় কথা পত্র পত্রিকায় খবর বের হয়েছে।
মাদকের ছোঁয়ায় সম্ভাবনাময় তারুণরা অধঃপতনের চরম শিখরে উপনীত হচ্ছে। মাদক এখন সহজলভ্য। রাজধানী শহর-নগর, গ্রামসহ মফস্বল এলাকায়ও হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় মাদক। আশির দশকের শেষ দিকে হেরোইন ফেনসিডিলের আবির্ভাব হয়। পর্যায়ক্রমে এটার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। নব্বইয়ের দশকে মাদকের জগতে সংযোজন হয় ইয়াবা। এ ছাড়া গাঁজা, আফিম, চরশ, বাংলা মদ, গুল, মরফিন, কোকেন, বিয়ার, ওয়াইন, হেরোইন, প্যাথেলিন, মারিজুয়ানা, ডেক্রপরটেন, প্যাথেডিন কোকেন চোলাইমদসহ রকমারি মাদকের প্রতি তরুণদের আসক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২৭ জানুয়ারি গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে রাত ১১টা থেকে রাত তিনটা পর্যন্ত গোদাগাড়ী পৌর এলাকার রেলওয়ে বাজার এলাকায় গরুর খামার বাড়িতে অভিযান চালানোর সময় বাড়ির মালিক ফরিদুল ও কেয়ারটেকার সোহেল রানা কৌশলে দেওয়াল টপকিয়ে পালিয়ে যান। অভিযানে ৮ কেজি ৪০০ গ্রাম উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত হেরোইন গুলোর আনুমানিক মূল্য ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আসামী গ্রেফতার করতে না পারলেও এ ঘটনায় পলাতক আসামী করে ওই গ্রামের আজিজুল হক বানুর ছেলে ফরিদুল ইসলাম ও বাড়ীর কেয়ারটেকার মহিশালবাড়ী গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে সোহেল রানার নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুর রহমান (পিপিএম) বলেন, ফরিদুল ও সোহেল চিহ্নিত মাদক কারবারি। তাদের বিরুদ্ধে এর আগেও মাদকের মামলা হয়েছে। জামিনে বের হয়ে আবারও মাদক কারবারে জড়িয়ে যাচ্ছে। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক সরবরাহ করতো। এই দুই মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এখনও প্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। সবচেয়ে নিরাপদ এলাকা হচ্ছে উত্তরবঙ্গের গোদাগাড়ী পৌরসভা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা কেন না।
এ রুটে ৬ দিনে ২২ কেজি ১৪০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করেছে আইন প্রয়োগকারি সংস্থার সদস্যগন। দেশ ও ভারতের মাদক চোরাকারবারীরা একজোট হয়ে বিজিবি, বিএসএফ এর চোখ ফাঁকি দিয়ে রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী পথগুলি দিয়ে বিষবাষ্পের মত পাচার করছে বড় বড় হেরোইনের চালান।
এসব মাদক ব্যবসায়ীদের পদ্মা নদীর ওপারে মানিক চক, কোদলকাটি, আষাড়িয়াদহ, আলাতুলি, চর অনুপনগর, বগচর, চাটাইডিগি, ক্লাবঘাট, জালিয়াপাড়া এবং নদীর এপারে মাদারপুর, ডাঙ্গাপাড়া, পুরাতন মহিউদ্দীন কলেজ, শিবসাগর, সিএন্ডবি, গড়ের মাঠ, আদর্শপাড়া, হেলিপেড, হাটপাড়া, সুলতানগজ্ঞ, সারাংপুর প্রেমতুলী, বিদিরপুর, পিরিজপুর, বসন্তপুর প্রভূতি এলাকায়।
শুধু কি তাই রাজশাহী, ঢাকা, পাবনা, বগুড়া, চিটাগাং প্রভূতি এলাকায় রয়েছে বিলাসবহুল, রাজকীয় বাড়ী, মার্কেট। এদের নামে বেনামে সম্পদের পাহাড় দেখে মনে হয় রুপকথার গল্পকেও হারমানায়। বিজিবি, পুলিশ, ডিবিপুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যগণ যখন পদ্মানদীর ওপারে অভিযান পরিচালনা করে তখন তারা এপারে রাজকীয় বাড়ী আশ্রয় গ্রহন করেন এবং পারে অভিযান শুরু করলে, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা পাবনা বগুড়ায় পালিয়ে যায়।
গত ৩১ জানুয়ারি বিকেলে গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী হাট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৫০০ গ্রাম হেরোইনসহ রুবেল ( সুমন) (২৯) কে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৫। আরএমপি রাজপাড়া থানার আলীগঞ্জ আদর্শগ্রাম এলাকার মাহাতাবের ছেলে। উদ্ধারকৃত হেরোইনের মূল্য ৫০ লাখ টাকা।
গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ৮কেজি ৪০০ গ্রাম উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত হেরোইন গুলোর আনুমানিক মূল্য ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
একই দিন ডিবি পুলিশ গোদাগাড়ী থানা এলাকা হতে খুব ভোরে অভিযান পরিচালনা করে ৩০০ (তিনশত) গ্রাম অবৈধ হেরোইনসহ একজন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার করেছে।
গত ২৭ জানুয়ারী মধ্যরাতে অপরাধ বিরোধী অভিযান চলাকালে র্্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্্যাব) সদস্যরা রাজশাহী চাঁপাই নবাবগঞ্জ সড়কের পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৫ কেজি হেরোইন উদ্ধার করেছেন। উদ্ধারকৃত হেরোইনের মূল্য ৫ কোটি টাকা বলে জানা গেছে।
গত ২১ জানুয়ারী ৮৪০ গ্রাম হেরোইনসহ জন পেশাদার মাদক কারবারী মোঃ জহুরুল ইসলাম ওরফে বাদলকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) র্যাব-৫।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন চর আলাতুলি ইউনিয়নের মধ্যচর গ্রামের মোঃ জহুরুল ইসলাম ওরফে বাদল (৪১) পিতা- মোঃ সাইফুল ইসলাম, স্থায়ী সাং- সরকার পাড়া বর্তমানে মধ্যচর, থানা- সদর, জেলা- চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর পূর্বমুখী বসতবাড়ির পূর্বমূখী টিনের ছাপড়া রান্নাঘরের মাটির চুলার ভিতর হইতে ৮৪০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধারসহ গ্রেফতারকৃত হেরোইনের মূল্য ৭৫ লাখ টাকা। গ্রেফতারকৃত আসামীকে অবৈধভাবে মাদকদ্রব্য হেরোইন অজ্ঞাত স্থান হতে গোপনে সংগ্রহ করিয়া রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রয় করিয়া আসিতেছিল। উক্ত আসামী একজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী বলিয়া এলাকায় পরিচিত। তাহার বিরুদ্ধে আরএমপি এর বোয়ালিয়া থানার এফআইআর নং-১৮, তারিখ- ০৪ নভেম্বর, ২০২০; জি আর নং-৭৩৯, তারিখ- ০৪ নভেম্বর, ২০২০; ধারা- মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর ৩৬(১) সারণির ৮(গ)/৪১ বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের উক্ত গ্রেফতারকৃত আসামীকে অবৈধভাবে মাদকদ্রব্য হেরোইন অজ্ঞাত স্থান হতে গোপনে সংগ্রহ করিয়া রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রয় করিয়া আসিতেছিল।
গ্রেফতারকৃত উক্ত আসামীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর থানায় এজাহার মুলে হস্তান্তর করা হয়েছে।
গত ১৯ জানুয়ারী সিপিএসসি, র্্যাব-৫ কর্তৃক চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানাধীন দূর্গম চর হতে অভিনব কায়দায় মাটির নীচে পোতানো অবস্থায় ০৫ কেজি ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ মাদক সম্রাজ্ঞী মোছাঃ রোকসানা (৩৮) আটক করা হয়।
র্যাব জানায়, ঘটনার দিন ৪ টা ৪৫ মিনিটের সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানাধীন চরকোদালকাটি শান্তিপাড়া এলাকায় অপারেশন পরিচালনা করে ০৫ কেজি ১০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা এর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মাদক সম্রাজ্ঞী মোছাঃ রোকসানা (৩৮)কে গ্রেফতার করা হয়। তার স্বামীর নাম মোঃ আলম, পিতার মোঃ ইব্রাহিম। বাড়ী চাঁপাই সদর উপজেলার চরকোদালকাটি শান্তিপাড়া গ্রামে। অবৈধ মাদক ব্যবসা করে শূন্য থেকে আঙ্গলফুলে কলাগাছ তারপর বটবৃক্ষ হয়েছেন। উদ্ধারকৃত হেরোইনের মূল্য ৫ কোটি টাকা।
এব্যপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। গত বছর ৩০ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৩ ঘটিকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানাধীন চর দেবীনগর নামক এলাকায় অপারেশন পরিচালনা করে ২ কেজি উদ্ধারসহ মাদক সম্রাট মোর্তজা আলীকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃত মোঃ মোর্তজা আলী (২৮) এর পিতার নাম মৃত সাইদুর রহমান, বাড়ী চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ জেলার সদর উপজেলার
চর দেবীনগর (ইব্রাহিম মন্ডলের টোল), গ্রামে। র্- এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৫, রাজশাহীর সিপিএসসি, মোল্লাপাড়া ক্যাম্পের একটি অপারেশন দল জানতে পারে যে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানাধীন চর দেবীনগর (ইব্রাহিম মন্ডলের টোল) গ্রামস্থ মাদক ব্যবসায়ী মোঃ মোর্তজা আলী (২৮), পিতা-মৃত সাইদুর রহমান এর বসত বাড়ীতে অবৈধ মাদকদ্রব্য হেরোইন এর একটি বড় চালান পাচারের জন্য ক্ষণিকের জন্য মজুদ করে রেখেছে এবং উক্ত মাদকের চালান রাতেই পাচার হবে। এরই প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল মাদক ব্যাবসায়ী মোঃ মোর্তজা আলী এর বসত বাড়ীতে পৌঁছে বাড়ীর চতুরদিক ঘেরাও কালে ০১ জন ব্যক্তি রাতের আধারে পালিয়ে যায় এবং ০১ জন ব্যক্তি বাড়ির ভিতর হতে গেট খুলে পালানোর চেষ্টাকালে র্যাবের টিম তাকে হাতে নাতে আটক করে। আটককৃত ব্যক্তিকে হেরোইনের চালানের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে অস্বীকার করে। পরবর্তীতে র্যাবের আভিযানিক দল দীর্ঘ সময় আটককৃত ব্যক্তির বসতবাড়ী তল্লাশী করে তার শয়নকক্ষে সানসেটের উপরে অভিনব কায়দায় লুকায়িত অবস্থায় উক্ত মাদকদ্রব্য হেরোইন উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
আটককৃত মোর্তজা আলীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে একজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। সে দীর্ঘদিন যাবত অজ্ঞাত স্থান থেকে মাদকদ্রব্য হেরোইন সংগ্রহ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট সরবরাহ করে। ইতিপূর্বে মাদকের আরো কয়েকটি চালান পাচার করেছিল বলে স্বীকার করে।
এ ঘটনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী র্যাব- ৫ মোল্লাপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা চাঁপাইনবাবগঞ্জে অভিযান চালিয়ে ১ কেজি ৫০০ গ্রাম হেরোইনসহ এক শীর্ষ মাদক কারবারীকে আটক করেছে। মঙ্গলবার ভোর রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর থানার চরহরিশপুর এলাকায় এ অভিযান চালায় র্যাব। আটক মাদক কারবারীর নাম রুবেল (১৬)। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর থানার চরহরিশপুর গ্রামের হাসেন আলীর ছেলে। আটক রুবেল শীর্ষ মাদক কারবারী বলে জানিয়েছে র্যাব। তবে তার সহযোগি আনারুল নামে একজন পালিয়ে গেছে।
র্যাবেরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজশাহী র্যাব-৫ এর মোল্লাপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা জানতে পারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর থানার চরহরিশপুর এলাকায় রুবেল তার বাড়িতে হেরোইন মজুদ রেখে বিক্রি করছে। এমন সংবাদ পেয়ে র্যাবের দল মঙ্গলবার ভোর রাত পৌনে ৫টার দিকে তার বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় আটক করা হয় রুবেলকে। পরে তার বাড়িতে তল্লাশী চালিয়ে দেড় কেজি হেরোইন উদ্ধার হয়। উদ্ধার হেরোইনের মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা বলে জানিয়েছে র্যাব।
আটক রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, রুবেল ও আনারুল ইসলাম পরস্পর যোগসাজসে ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে অবৈধ মাদকদ্রব্য এনে হেরোইন এনে তার বাড়িতে মজুদ করে। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী র্যাব আনারুলের বাড়িতে অভিযান চালানোর সময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে বাঁশের চাটির ভিতর আঙ্গিনার বেড়া ভেঙ্গে পালিয়ে যায়। পরে আনারুল ইসলামের বাড়িতে তল্লাশী চালিয়ে কাঠের চৌকির উপর পুরাতন কাথা, কম্বল ও লেপের নীচে অভিনব কায়দায় লুকানো অবস্থায় হেরোইন উদ্ধার হয়। পরে রুবেলকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় সোপর্দ করে তার বিরুদ্ধে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।
৮ কেজি হেরোইন উদ্ধার করা হলো কিন্তু বড় চালান ১০কেজি/২০ কেজি/৩০কেজি পুলিশ, বিজিবিসহ বিভিন্ন সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশের বিভন্ন স্থানে পাচার করা হয়েছে, আর এগুলি সেবন করে হাজার হাজার অকালে পুঙ্গত্ববরণ করছেন। লাখ পরিবারের মাঝে অশান্তি বিরাজ করছে মাদক ব্যবসায়ীরা, অসৎ পুলিশ সদস্যগণ কখনও চিন্তা করেন? শুধু মাত্র গোদাগাড়ী পৌরসভায় কয়েক শ লোক মাদকব্যবসা করে শূন্য থেকে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, বিভিন্ন মার্কেটে দোকান, রাজকীয় বাড়ী, প্লট, জমি ব্যাংক, ব্যালেন্সসহ সম্পদের পাহাড় গড়েতুলছেন রহস্যজনক কারণে প্রশাসন দেখে না দেখার ভান করছেন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বিধ্বংসকারী মাদকের বিস্তার সমাজে যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে সচেতন অভিভাবক মহল, প্রশাসনও উদ্বিগ্ন। মাদক ব্যবসায়ীগণ ভারত থেকে কোটি কোটি টাকার হেরোইন দেশে নিয়ে আসে আর বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা কিছু অসৎ ব্যাংক কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ পরোক্ষ সহযোগিতায় হন্ডির মাধ্যমে পাচার করার ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। এদের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে দেশের ব্যাপকক্ষতি হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৮ বছরের ওপরে শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ মানুষ মাদকাসক্ত। মাদকাসক্তদের মধ্যে ৮৫ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। না বুঝেই অনেক তরুণ এ পথে পা দিয়ে বিপথগামী হয়ে যাচ্ছে। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, মাদক সেবনের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর ৮০ লাখ মানুষ এবং বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষ মারা যায়। বাস্তবে এই সংখ্যা আরো বেশি।
মাদকাসক্ত সন্তানের কারণে এক একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মাদকাসক্ত সন্তানকে নিয়ে পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পড়ছে। পথশিশুরাও আজ ভয়াবহ নেশায় আসক্ত হচ্ছে। মাদকের নেশা কেবল আত্মঘাতী নয়, সমাজ, দেশ, মনুষ্যত্ব সর্বোপরি বিশ্বব্যাপী ডেকে আনছে বিপর্যয়। ব্যক্তিজীবনে যেমন মাদক স্বাস্থ্য, সম্পদ, মানসম্মান, প্রভাব-প্রতিপত্তি নষ্ট করে ব্যক্তিকে করে তোলে সমাজের ঘৃণা ও নিন্দার একশেষ, তেমনি সমাজজীবনেও আনে অস্বাস্থ্য, অলসতা, অকর্মণ্যতা এবং সামাজিক অপরাধের সীমাহীন নিষ্ঠুরতা। ধ্বংস হয়ে যায় মাদকসেবীর রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, চাকরি, সামাজিক মূল্যবোধের মতো অমূল্য গুণগুলো। আজকের পৃথিবীতে এই ব্যাধি পরিব্যাপ্ত দেশ থেকে দেশান্তরে। নেশার উপর ভর করে একদল নেশার ব্যবসায়ী আজ মানুষ কর্তৃক মানুষ মারার নেশায় বুঁদ হয়ে ধ্বংস করতে যাচ্ছে বিশ্বের সর্বজনীন মূল্যবোধ, প্রেম-প্রীতি, স্নেহ-ভক্তি রসধারাকে সীমাহীন আত্মঘাতী নিষ্ঠুরতায়।
সমাজসেবা অধিদফতরের এক গবেষণায় দেখা যায়, শহর, গ্রাম থেকে নিয়ে স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও মাদকাসক্ত হচ্ছে। দেশের ভিতরে যত্রতত্র চলছে মাদকের রমরমা বাণিজ্য। প্রতিনিয়িত বসছে নেশার আড্ডা। অনেকে নেশার টাকা জোগাড় করতে নেমে পড়ছে অপরাধ জগতে। মাদকের চাহিদা মেটাতে তরুণ-তরুণীরা ক্রমেই অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। অনেক শিক্ষার্থী নেশার মোহে পড়ে সম্ভাবনাময় জীবনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে একজন মানুষ যখন অপরাধজগতে পা বাড়াচ্ছে।
পারিবারিক বিপর্যয়গুলো বিশেষজ্ঞদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। এই সর্বনাশ মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্রকে মোটেও বিচলিত করে না। তারা কেবলই বোঝে ব্যবসা। তরুণ প্রজন্মের হাতে তুলে দিচ্ছে মরণনেশার উপকরণ মাদক। তরতাজা তরুণদের মেধা, বিবেক, লেখাপড়া, মনুষ্যত্ব সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে ইয়াবার ভয়াবহ নেশা। বিনষ্ট করে দিচ্ছে স্নেহ, মায়া, ভালোবাসা, পারিবারিক সুবন্ধন। মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে অহরহ বাবা-মা, ঘনিষ্ঠ স্বজন নির্মম হত্যার শিকার হচ্ছে। নেশাখোর বাবা মাদক সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে কান্ডজ্ঞান হারিয়ে প্রিয় সন্তানকে খুনও করছে অবলীলায়। নেশার টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা, মাকে জবাই করা, আদরের সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়ার মতো জঘন্য ঘটনাও ঘটছে।
প্রতিবছর দেশে ঘটা করে ২৬ জুন মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস। ওই দিবসের মাদকব্যবসায়ীদের উপস্থিত লক্ষ্য করা যায়। এ যেন সরিষায় ভুতের মত অবস্থা।
নেশা মানুষের স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত করে তোলে। মাত্রাতিরিক্ত মাদক সেবন রোগীর মানসিক অবসাদ ঘটায় এবং হেপাটাইটিস বি ও সি, এইচআইভি-এইডস ও যক্ষ্মার মতো ভয়ানক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দেয়। এই নেশাবিরোধী অভিযান, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং পুনর্বাসন কর্মসূচিতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। সুতরাং ঘন ঘন রোগে আক্রান্ত হওয়া কিংবা মারা যাওয়া উভয় ক্ষেত্রেই দেশের প্রচুর অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হয়। এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, নেশাবিরোধী অভিযান সরকারি অর্থের সুরক্ষা করতে পারে।
নেশাগ্রস্ত লোক যে শুধু নিজের ক্ষতি করে এমন নয়, পারিপার্শ্বিক মানুষের নিরাপত্তাও সঙ্কটাপূর্ণ করে তোলে। নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি চালালে পথ দুর্ঘটনায় চালকের যেমন ক্ষতি হয় পথযাত্রীদের সমান খেসারত দিতে হয়। গবেষণায় জানা গেছে, ভাং খেয়ে গাড়ি চালালে দুর্ঘটনার আশঙ্কা ৯.৫ গুণ এবং কোকেন ও ব্যাঞ্জোডায়াজিপাইনের ক্ষেত্রে ২ থেকে ১০ গুণ বৃদ্ধি পায়। এম্ফিটামিন ড্রাগে এই আশঙ্কা ৫ থেকে ৩০ গুণ এবং মদের সঙ্গে অন্য ড্রাগ মিশিয়ে খেলে ২০ থেকে ২০০ গুণ বৃদ্ধি পায়।
বিশ্বের প্রায় সবক’টি মহাদেশেই অবৈধ মাদক উৎপাদিত হয় কিংবা ব্যবহৃত হয়, যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশও এই বিষয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশে আফিম ও ভাং এর প্রচলন সুপ্রাচীন। বিগত তিন দশকে হেরোইন, এম্ফিটামিন, কোকেন এবং নানা ভেষজ ওষুধ রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে প্রবেশ করেছে, যা অবৈধ মাদকের ভয়াবহতাকে আরও উসকে দিয়েছে। এক সময় গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল অর্থাৎ মায়ানমার, লাওস ও থাইল্যান্ড কিংবা গোল্ডেন ক্রিসেন্ট অর্থাৎ আফগানিস্তান, ইরান ও পাকিস্তান থেকে অবৈধ ড্রাগ বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে শুধু পাচার হতো। কিন্তু আজ এই চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইয়াবা নামক নেশা দ্রব্য আজ সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে সৃষ্ট করছে নানা বিপর্যয়।
এক বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রায় ৬৫ লক্ষ নেশাসক্তদের মধ্যে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতীদের সংখ্যাই বেশি। ক্রমবর্ধমান এই সংখ্যাটি ক্রমশ শহরতলি ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের ড্রাগ ও অপরাধ নিবারক সংস্থা যৌথভাবে অবৈধ মাদক সেবন সংক্রান্ত বিষয় পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন পেশ করেছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ১২ থেকে ১৮ বছরের কিশোরদের মধ্যে অ্যালকোহল ২১.৪ শতাংশ, ভাং ৩ শতাংশ, আফিম ০.৭ শতাংশ এবং অন্যান্য অবৈধ ড্রাগ ৩.৬ শতাংশ সেবনের প্রবণতা দেখা গেছে। অবৈধ মাদক সেবনের এই প্রবণতা সারা দেশে এক রকম নয়। যেমন উত্তরবঙ্গে যা বেশি চলে দক্ষিণে কম আবার পূর্বে যা বেশি পশ্চিমে তা কম। তবে ফেনসিডিলের ব্যবহার দেশের সর্বত্রই বিদ্যমান।
আন্তর্জাতিক নারকোটিক্স কন্ট্রোল বোর্ডের ২০২২ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, অবৈধ ড্রাগ পাচারকারীরা সরকারের দুর্বল প্রশাসনিক স্তরে আঘাত করে তাদের এই অবৈধ বাণিজ্য বেপরোয়াভাবে চালায়। ফলে স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। ড্রাগ পাচারকারীরা অর্থনৈতিক দুর্নীতির মাধ্যমে প্রশাসনকে পঙ্গু করে তোলে এবং তাদের অবাধ বাণিজ্য চালায়।
গত ২৫ আগষ্ট একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, সময় ইয়াবা লুকিয়ে হাতেনাতে ধরা খেলেন মাহমুদুল হাসান নামে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা। তার কাছ থেকে ১ হাজার ২২ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। মামলা দায়েরের পর গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। আদালত সূত্রে জানা যায়, মাদকদ্রব্যের বেশ কিছু মামলা আদালতে নিষ্পত্তি হওয়ার ২৩ আগস্ট বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে ইয়াবা, ফেন্সিডিল, মদসহ মাদকদ্রব্য ধ্বংস করার আয়োজন করা হয়। এসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জালাল উদ্দিনসহ আরো কয়েকজন বিচারক উপস্থিত ছিলেন। ধ্বংস করার জন্য নিয়ে আসার আসার সময় এক প্যাকেট ইয়াবা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী প্রসিকিউটর মাহমুদুল হাসান।
এসময় তার প্যান্টের পকেট উঁচু হয়ে থাকায় সন্দেহ হয় উপস্থিত ম্যাজিস্ট্রেটের। এসময় উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের বলা হয় মাহমুদুল হাসানকে তল্লাশি করতে। তল্লাশি করে তার প্যান্টের পকেট থেকে এক হাজার ২২ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, যে পথে দেশের ইয়াবার চালান ঢুকছে, সেই একই পথে ঢুকছে আইস। জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে নৌপথে নাফ নদী পেরিয়ে ৯০ শতাংশ আইস দেশে আসছে। অধিকাংশ বড় চালানই ধরা পড়েছে গত দেড় বছরে। আশির দশকের শুরুতে দেশে মাদক বলতে মূলত ছিল ফেনসিডিল। ভারত সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকা দিয়ে এ মাদক দেশে ঢুকত। তবে গত এক দশকে পরিস্থিতি পালটে যায়। ফেনসিডিলের পরিবর্তে দেশে ইয়াবার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। এখন আসছে আইস। সুতরাং, চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে দেশে মাদকের, বিশেষত নতুন নতুন মাদকের সরবরাহ বাড়ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে অপ্রচলিত বিভিন্ন ধরনের মাদকও ধরা পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফেনইথাইলামিন, এলএসডি, ডায়মিথাইলট্রিপ্টামাইন বা ডিএমটি, ম্যাজিক মাশরুম, খাত (ইথিওপিয়ার উঁচু ভূমিতে জন্মানো এক ধরনের উদ্ভিদের পাতা), কুশ (মারিজুয়ানা প্রজাতির গাছ), এক্সট্যাসি, হেম্প, ফেন্টানিল, মলি ও এডারল। বিদেশে এসব মাদক প্রচলিত হলেও বাংলাদেশে অপ্রচলিত। তবে নতুন এসব মাদকের প্রভাব ইয়াবার চেয়েও বেশি। গত তিন বছরে এসব মাদক বিভিন্ন দেশ থেকে নানাভাবে এ দেশে এসেছে। কোনো চালান এসেছে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে, কোনোটি বিদেশ থেকে উড়োজাহাজে কোনো যাত্রী নিয়ে এসেছেন। আবার কোনো কোনো মাদক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ধরা পড়েছে।
সম্প্রতি মাদক সম্পর্কিত আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মাদক ব্যবসার কারণে দেশে বছরে পাচার হয় প্রায় ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাড তাদের ওয়েবসাইটে অবৈধ অর্থপ্রবাহ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। পাচার করা টাকার হিসাব অনুমানভিত্তিক হিসাবে তুলে ধরেছে সংস্থাটি। এতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৯টি দেশের মাদকসংশ্লিষ্ট অবৈধ অর্থপ্রবাহের হিসাব তুলে ধরা হয়। তথ্য বিবরণীতে আরও বলা হয়েছে, মাদকসংশ্লিষ্ট অর্থ পাচারের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। আর এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে। অবৈধ অর্থপ্রবাহ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে আঙ্কটাড বলেছে, মাদক ব্যবসার কারণে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর পাচার হয় ৪৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা।
মাদকদ্রব্য অপব্যবহারের বিরুদ্ধে আইন ও শাস্তির বিধান : হেরোইন, ফেনসিডিল, আফিম, মরফিন, নেশার ইনজেকশন, গাঁজা, ভাং, মদ, তাড়ি, ঘুমের ওষুধ ইত্যাদির উৎপাদন, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বহন-পরিবহণ, ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবহার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে নিষিদ্ধ ও মারাত্মক অপরাধ। এসব অপরাধ দ্রুত বিচার আদালতে বিচার্য এবং এক্ষেত্রে সাধারণত জামিন দেওয়া হয় না। মাদক অপরাধের শাস্তি সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড।
মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও মাদকাসক্তি দেশের উন্নয়নে অন্যতম বাধা বলে মনে করছেন অনেকেই। তাই এ বাধা দূর করতে মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। সেই সঙ্গে মাদকসহ গ্রেফতারকৃতরা এবং মাদক ব্যবসায়ীরা যাতে জামিনে ছাড়া না পায়, সেজন্য নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা। মাদকাসক্ত ও তার পরিবারের প্রতি বাড়াতে হবে সহযোগিতার হাত, তবেই বাস্তবায়ন হবে প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি। কারণ, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’। মাদক-ব্যবসায়ী ও মাদক চোরাচালানকারীরা দেশ ও জাতির সবচেয়ে বড় শত্রু। এদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধে সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণ প্রয়োজন। মাদকাসক্ত অভ্যাস নির্মূলের জন্য যুব সমাজের একটি সিদ্ধান্ত যথেষ্ট। যুব সমাজের একটি দৃপ্ত শপথই পারে তাদের মাদকের অন্ধকার থেকে ফেরাতে। মাদকাসক্ত হয়ে পৃথিবীতে কেউ কিছুই করতে পারেনি নিজেকে ধ্বংস ছাড়া। তাই আসুন মাদক মুক্ত সমাজ গঠনে সামাজিক আন্দোলন শুরু করি। মাদকমুক্ত সমাজই হোক তারণ্যের অহঙ্কার
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিষ্ট
মো. হায়দার আলী, প্রধান শিক্ষক, মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ।