১৪ অগাস্ট ২০২৩
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নির্মাণাধীন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের বিভিন্ন অংশ। এরমধ্যে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া তেমুহনী এলাকায় পাথর ও মাটি সরে যাওয়ায় ৪৫০ মিটার দেবে গেছে লাইন।
সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের কাজ শেষ হয়েছে ৮৭ শতাংশ। আগামী সেপ্টেম্বরে এপথে ট্রেন চলাচল শুরুর আশা করলেও সাম্প্রতিক বন্যায় কয়েকটি স্থানে মাটি ও পাথর সরে উঁচু-নিচু হয়ে গেছে লাইনটি।
তাতে সংশয় দেখা দিলেও প্রকল্প পরিচালক মো. মফিজুর রহমান বলছেন, নির্ধারিত সময়েই পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল করবে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে।
তবে বন্যায় লাইনের এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রকল্পের ক্ষেত্রে একটি ‘শিক্ষা’ হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন তিনি।
গত সপ্তাহে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া উপজেলা। তার মধ্যে সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের তেমুহুনি এলাকায় রেললাইনের পাথর ও মাটি সরে বসে গেছে রেললাইন।
চট্টগ্রাম সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকায় ভারি বৃষ্টির সময় তীব্র পাহাড়ি ঢলে পাথর ও মাটি সরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার নির্মাণাধীন রেললাইনের কিছু অংশ দেবে গেছে; কোথাও কোথাও লাইন বেঁকেও গেছে |ছবি: সুমন বাবু
রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, এডিবির অর্থায়নে তৈরি করা এ রেললাইন নির্মাণের আগে আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে সমীক্ষা করানো হয়েছিল। তারা যেভাবে বলেছে, সেভাবেই রেল লাইন বসানো হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণেই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
দোহাজারি- কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পানিতে রেললাইনের মাটি ও পাথর সরে গিয়ে ৪৫০ মিটার লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই ক্ষতিগ্রস্ত লাইন সংস্কার করবে।
“এটা নতুন কিছু নয়। শুধু কক্সবাজার রেললাইন নয়, চট্টগ্রাম-ঢাকা-সিলেটসহ বিভিন্ন অঞ্চলের রেল লাইনে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। আগের জায়গা মতো পাথর ও মাটি দিলেই এটা ঠিক হয়ে যাবে।
বর্তমানে চট্টগ্রামের দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন রয়েছে। সেখান থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ১০১ কিলোমিটার নতুন সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হচ্ছে। তাতে দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে সারাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন হবে।
আগামী বছরের জুনে শেষ হতে যাওয়া এ প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার বেশি। আগামী সেপ্টেম্বরে এ লাইনে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু করতে চায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান জানান, দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ৯০ কিলোমিটার নতুন রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ১২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ কাজও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে।
বন্যার জন্য রেললাইনের দায় কতটা?
স্থানীয়দের অভিযোগ, যেখানে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো ছিল ফসলি বিল। প্রতিবছর পাহাড়ি অঞ্চল থেকে ভাটি এলাকা সাতকানিয়া, দোহাজারি, চন্দনাইশ উপজেলায় পানির ঢল নামে, যে পানি বিল দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু নতুন বসানো রেললাইনে পানি চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত কালভার্ট তৈরি না করায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়ার নয়াখালের মুখ থেকে রেললাইন ধরে উত্তর দিকে দুই কিলোমিটার গেলেই কেঁওচিয়া ইউনিয়নের তেমুহুনি এলাকা।