বরিশাল, ২৮ ফাল্গুন (১৩ মার্চ) :
জনস্থানে ও গনপরিবহনে নারী ও কন্যা শিশুদের উপর যৌন হয়রানি ও সহিংসতা নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনস্থানে নারী ও কন্যা শিশুর উপর হয়রানি বন্ধে বিদ্যামান আইন ও নীতিমালাগুলো যথেষ্ট নয়। অনলাইন প্লাটফর্মসহ জনস্থান সমূহে নারীদের জন্য আরও নিরাপদ ও স্বস্তিকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত, সম্মিলিত ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
বরিশালে জনস্থানে নারীর নিরাপত্তা প্রাচারাভিযান নিয়ে এক মতবিনিময় সভার বক্তারা এসব কথা বলেছেন।
রবিবার (১৩ মার্চ) বেলা ১১টায় নগরীর ফকিরবাড়ি রোডস্থ আইসিডিএ মিলনায়তনে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই), তরুণদের প্লাটফর্ম ইয়াং বাংলা, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানবাধিকার কর্মসূচি এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সহযোগিতায় ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এ সভার আয়োজন করে।
মূল উপস্থাপনায় বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮.২ এবং ৩৫ নম্বর অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রীয় ও জনজীবনের সবক্ষেত্রে নারীদের সমান অধিকার এবং চলাফেরার স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ অনুযায়ী শ্রমবাজার ও কর্মক্ষত্রে সমান অধিকারসহ সব ধরনের জাতীয় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। তবে প্রতীয়মান যে, জনস্থানে নারী ও মেয়ে শিশুদের ওপর হয়রানি বন্ধে বিদ্যামান আইন ও নীতিমালা গুলো যথেষ্ট নয়।
এসম বক্তারা বলেন, জনসমাগম স্থল ও চলার পথকে নারীদের জন্য নিরাপদ করতে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা ও হয়রানি রোধে জনসচেতনতার কোন বিকল্প নেই। একজন নারীর নিরাপত্তা ও চলার পথকে মসৃন করতে হলে, তাঁকে অবশ্যই উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নারীর নিরাপত্তা বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনসহ তরুণ সমাজ ও নাগরিকদের ধারণা, দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা দরকার বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।
সংলাপে প্রতীকি যুব সংসদের চেয়ারপারসন মো: আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণমাধ্যমকর্মী ও নারীনেত্রী অধ্যাপক শাহ সাজেদা। ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে একাত্তর টেলিভিশনের বরিশাল ব্যুরো প্রধান বিধান সরকার, দৈনিক দক্ষিনের কাগজের বার্তা সম্পাদক শাওন খান, মাই টিভি বরিশাল প্রতিনিধি পারভেজ রাসেল, যুগান্তরের ব্যুরো রিপোর্টার অনিকেত মাসুদ, আজকের পরিবর্তনের স্টাফ রিপোর্টার হেলাল উদ্দিন, হ্যালো বরিশালের বার্তা সম্পাদক জিয়াউল করিম মিনারসহ বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকরা আলোচনায় অংশ নেন।
ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান জানান, জনস্থানে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট অংশীজনসহ তরুণ সমাজ ও নাগরিকদের ধারণা, দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা এই প্রচারাভিযানের অন্যতম লক্ষ্য। এই ক্যাম্পেইনের আর একটি লক্ষ্য হলো নারীর নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে নীতিমালার সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে তা নীতি নির্ধারকদের জানানো যাতে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া যায়। যার ধারাবাহিকতায় গত এক বছর ধরে ১০ টি যুব সংগঠন ১০ টি জেলায় প্রচারাভিযানটি পরিচালনা করছে।
বরিশাল জেলায় এই প্রচারাভিযানের মাধ্যমে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের সংগঠিত করা, জেলা পর্যায়ে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক কর্মশালার আয়োজন করা, বাস্তবতার নিরিখে প্রচারাভিযান পরিচালনার জন্য অংশগ্রহণমূলক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা, যুব সংগঠন, গণমাধ্যম কর্মী, স্থানীয় নাগরিক, পরিবহন খাত ও শপিং মল ও হাটবাজারকে সম্পৃক্ত করে স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন অংশীজনের সভা আয়োজন করা, যুব সংগঠনগুলোর মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক বিশ্লেষণ এবং গণপ্রচারাভিযান চালানো হয়।
জনস্থানে নারী ও কন্যা শিশুদের হয়রানি ও সহিংসতা বিষয়ে নিরবতা ভাঙ্গা, সময়ের সাথে সাথে আচরনে ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনা, ক্যাম্পেইনে ভূমিকা রাখতে যুব সংগঠনগুলোকে যুক্ত করা, ভুক্তভোগী ও নির্যাতনের শিকার নারীদের সহিংসতা বন্ধে কথা বলতে উৎসাহিত করা, অপরাধীদেরকে দৃঢ় ও সুনির্দিষ্ট বার্তা দেয়া, এবং এই সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের প্রচলিত বিধি-বিধানের সাথে সমন্বিত করা এই ক্যাম্পেইনের অন্যতম অর্জন।