ঢাকা, ৪ পৌষ (১৯ ডিসেম্বর) :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ১৯ ডিসেম্বর ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস –
২০২১’ উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :

“বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস- ২০২১’ উপলক্ষ্যে এ বাহিনীর সকল সদস্যকে
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বিজিবি ২২৬ বছরের
একটি ঐতিহ্যবাহী বাহিনী। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর সাহসী ও গৌরবময় ভূমিকা
অবিস্মরণীয়।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে
সাড়া দিয়ে তৎকালীন ইপিআর-এর বাঙালি সদস্যবৃন্দ পাক হানাদারবাহিনীর বিরুদ্ধে
সর্বপ্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে ইপিআর-এর
বেতারকর্মীরা পিলখানা থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা দেশের
প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়্যারলেসযোগে প্রচার করায়
ইপিআর-এর সুবেদার মেজর শওকত আলীসহ তিনজনকে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী নির্মমভাবে
হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশপ্রেমিক জনসাধারণের সঙ্গে এ বাহিনীর
সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর ৮১৭ জন অকুতোভয় সদস্য
তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেন। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ বীরত্বের জন্য এ বাহিনীর দু’জন
বীরশ্রেষ্ঠসহ ১১৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা সদস্য খেতাবপ্রাপ্ত হয়েছেন। আমি তাঁদের মহান

আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। এ বাহিনীর ‘স্বাধীনতা পদক’ অর্জন মহান
মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানেরই অনন্য স্বীকৃতি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই এ বাহিনীর পুনর্গঠন ও
আধুনিকায়নের কাজ শুরু করেন। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার এ
বাহিনীকে যুগোপযোগী সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। এ লক্ষ্যে
‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০’ প্রণয়নসহ ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১’ এর
পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। বিজিবি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ০৫টি নতুন রিজিয়ন স্থাপন করে
কমান্ডস্তর বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। সীমান্তে বিজিবি’র কার্যকর নজরদারির লক্ষ্যে
০৫টি রিজিয়নাল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোসহ নতুন ০৫টি সেক্টর, ১৫টি ব্যাটালিয়ন, ১৪২টি বিওপি
ও ৩৪টি বিএসপি সৃষ্টি করা হয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সুন্দরবনের গহীন অরণ্যের
৬০ কিলোমিটার জল-সীমান্তে ০২টি ভাসমান বিওপি স্থাপন করা হয়েছে। বিজিবি’র অপারেশনাল
সক্ষমতা বৃদ্ধি, বিওপিতে কর্মরত বিজিবি সদস্যদের বাসস্থান সেবা উন্নতকরণ, ভৌত সুবিধা
এবং কাঠামোগত নিরাপত্তা জোরদারসহ বাহিনীর সার্বিক কল্যাণ এবং উৎকর্ষ বৃদ্ধির
লক্ষ্যে আরো ৭৩টি নতুন আধুনিক কম্পোজিট বিওপি নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। গত ১২
বছরে সৈনিকসহ এই বাহিনীতে ৩৩ হাজারের অধিক জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের
সরকার বিজিবিতে প্রথম নারী সৈনিক নিয়োগ দিয়ে নারীর ক্ষমতায়ণ নিশ্চিত করেছে। ২০১৫
সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাচে সর্বমোট ৮৬৮ জন নারী সৈনিক ভর্তি করা হয়েছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১’ এর আওতায় আরো ১৫ হাজার জনবল নিয়োগ
প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিজিবি’র প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ডের কলেবর বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায়
রেখে বিজিবিতে কর্মরত অফিসার, জুনিয়র কর্মকর্তা, সৈনিক ও অসামরিক কর্মচারীদের
উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা অর্জনের জন্য ‘বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার
এন্ড কলেজ’ সাতকানিয়া চট্টগ্রামের পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় আধুনিক প্রশিক্ষণ
সুবিধাসম্বলিত আরো একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং
এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিজিবিকে একটি বিশ্বমানের আধুনিক
ত্রিমাত্রিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিজিবিতে একটি
স্বতন্ত্র এয়ার উইং সৃজন করে রাশিয়া হতে দুইটি অত্যাধুনিক এমআই-১৭১-ই প্রযুক্তির
হেলিকপ্টার সংযোজন করা হয়েছে। যার ফলে দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি
সীমান্ত এলাকায় নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অরক্ষিত সীমান্ত ও দুর্গম পাহাড়ি
এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ‘বিজিবি ত্রিমাত্রিক বাহিনী’ হিসেবে জল, স্থল ও
আকাশপথে দায়িত্বপালনে সক্ষম হচ্ছে। এছাড়া ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্রের পরিবর্তে তদস্থলে
১৪টি আধুনিক, যুগোপযোগি ও কার্যকর এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন্স, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ
সীমান্তে ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় বিজিবি’র সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ১২টি আর্মার্ড
পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) এবং ১০টি রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল, সীমান্তে চোরাচালান
প্রতিরোধে টহল কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে যেকোনো দুর্গম রাস্তায় চলাচলে

সক্ষম ২৪৭টি অল ট্যারেইন ভেহিক্যাল (এটিভি) ক্রয় করা হয়েছে। আধুনিক ডিজিটাল
প্রযুক্তির সাহায্যে সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধ এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনের
লক্ষ্যে সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৩২৮
কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় ‘স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স এন্ড ট্যাকটিকাল বর্ডার
রেসপন্স সিস্টেম’ স্থাপন ও সম্প্রসারণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দেশের দক্ষিণ-
পশ্চিমাঞ্চলে সুন্দরবনের গহীন অরণ্যের জল-সীমান্তে এবং মায়ানমার সীমান্তের নাফ নদী ও
সেন্টমার্টিন দ্বীপের সাগর উপকূলে ইয়াবা পাচারসহ আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে কার্যকর
ভূমিকা রাখতে বিজিবি’র বহরে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিভিন্ন সিরিজের ১২টি আধুনিক জলযান
সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়াও বিজিবি’র জন্য অত্যাধুনিক ৪টি এয়ার বোট ক্রয় কার্যক্রম
প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

দেশের সীমান্তের নিরাপত্তা ও শান্তিরক্ষা, সীমান্ত এলাকায় মাদক চোরাচালান, নারী
ও শিশু পাচার প্রতিরোধসহ অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন ও
দুর্যোগকালীন উদ্ধার কর্মকাণ্ডে বিজিবি অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে।
আমি আশা করি, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখতে এ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে সততা, নিষ্ঠা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে তাঁদের ওপর অর্পিত
দায়িত্ব আন্তরিকভাবে পালন করবেন।

আমি ‘বিজিবি দিবস- ২০২১’ এর সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”