ঢাকা, ৪ পৌষ (১৯ ডিসেম্বর) :
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ আজ ১৯ ডিসেম্বর ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)
দিবস -২০২১’ উপলক্ষ্যে নিম্নে উল্লিখিত বাণী প্রদান করেছেন :
“বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস ২০২১’ উপলক্ষ্যে আমি এ বাহিনীর সকল
সদস্যকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
বীরত্ব ও ঐতিহ্যে গৌরবমণ্ডিত ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ বিজিবি’র রয়েছে সুদীর্ঘ
দু’শ ছাব্বিশ বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর রয়েছে অবিস্মরণীয়
অবদান। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাক-হানাদার বাহিনী ঢাকার পিলখানাস্থ তৎকালীন
ইপিআর সদর দপ্তর আক্রমণ করে। ইপিআর সদর দপ্তর থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়্যারলেসযোগে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়া
হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ এবং বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফসহ এ
বাহিনীর ৮১৭ জন অকুতোভয় সদস্য আত্মোৎসর্গ করে দেশপ্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন
করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বাহিনীকে ২০০৮ সালে স্বাধীনতা
পদকে ভূষিত করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশমাতৃকার প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় বিজিবি’র যে
সকল সদস্য আত্মত্যাগ করেছেন আমি তাঁদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি এবং তাঁদের
আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করছি।
সীমান্ত সুরক্ষার মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’
হিসেবে এ বাহিনী প্রশংসনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি চোরাচালান
প্রতিরোধ, নারী-শিশু এবং মাদক পাচার রোধে সীমান্তে নিরবচ্ছিন্ন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে
বিজিবি। দেশের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানসহ
দুর্যোগকালীন উদ্ধার কার্যক্রমেও বিজিবি’র ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার। একুশ শতকের
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিজিবিকে একটি বিশ্বমানের আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে
তোলার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অত্যাধুনিক
এমআই-১৭১-ই প্রযুক্তির দু’টি হেলিকপ্টার, আধুনিক জলযান, আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার
(এপিসি), রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল ও এটিভিসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সংযোজনের
মাধ্যমে ইতোমধ্যে বিজিবি’কে ত্রিমাত্রিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।
‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন ২০১০’ প্রণয়ন ও ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১’
পরিকল্পনা গ্রহণের ফলে এ বাহিনীর সার্বিক কর্মকাণ্ডে গতি সঞ্চারিত হয়েছে। সরকারের এ
সকল পদক্ষেপ বিজিবি’র অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।
বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ
আজ সারা বিশ্বে উন্নয়ন আর অগ্রযাত্রার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এই অগ্রযাত্রায়
বিজিবিও তার অবস্থান হতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে। দেশের স্বার্থ সমুন্নত
রাখতে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বিজিবি’র সকল সদস্য সততা,
নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করবেন – এটাই সকলের প্রত্যাশা।
আমি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের অব্যাহত সাফল্য কামনা করি।
জয় বাংলা।
খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”