বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশের যেসব দূতাবাস রয়েছে, তারা আসলে কী কাজ করে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ করা উচিত। কারণ প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের রক্ষণাবেক্ষণ, শ্রমবাজার সম্প্রসারণ ও দূতাবাস সেবার মানোন্নয়নের প্রয়োজনে বিদেশের দূতাবাসগুলোকেও সংস্কারের আওতায় আনা উচিত
বহির্বিশ্বের সকল বাংলাদেশি দূতাবাস/হাই কমিশনে যে সকল সংস্কার জরুরী প্রয়োজন, (বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো) তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তুলে ধরা হলো।
আরবি ভাষার জ্ঞান: মধ্য প্রাচ্যের প্রধান ও মাতৃভাষা হচ্ছে আরবি। আমরা লক্ষ্য করছি আরব বিশ্বে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োগকৃত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আরবি ভাষা সম্পর্কে অজ্ঞ। আরবি ভাষা জ্ঞান না থাকায় আমাদের কর্মকর্তাগণ বাংলাদেশ মুসলিম দেশ হওয়া সত্বেও মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে মত বিনিময়, আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে আমাদের শ্রমবাজার রক্ষণাবেক্ষণ ও সম্প্রসারণে কূটনৈতিক নৈপুণ্য প্রদর্শনে উল্লেখযোগ্যভাবে সফলতা আনতে পারেননি ৷ ফলশ্রুতিতে বিশাল সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার এখন আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়া ও নেপালের দখলে। রেমিট্যান্স যোদ্ধারা এখানে যুগের পর যুগ একই সমস্যায় জর্জরিত। অথচ বাংলাদেশ থেকে আরবি ভাষায় দক্ষ, অভিজ্ঞ ও আরব বিশ্বে গ্রহণযোগ্য কর্মকর্তা প্রেরণের বিশাল সুযোগ থাকা সত্ত্বেও গতানুগতিক মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক কূটনৈতিক ব্যবস্থাপনায় সংস্কার না করায় বাংলাদেশের শ্রমিক ও শ্রমবাজার আজ হুমকির মুখে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও আগামী সরকারের কাছে একজন প্রবাসী হিসেবে অনুরোধ জানাচ্ছি – মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক ব্যবস্থায় আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে পরিবর্তন আনুন। কেন্দ্রীয় রিজার্ভ সমৃদ্ধ, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও উন্নয়নশীল বাংলাদেশ গড়তে মধ্যপ্রাচ্যের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বিরাজমান সমস্যার সমাধান ও সৌহার্দ্যপূর্ণ কূটনৈতিক ব্যবস্থা গড়তে আরবি ভাষা জ্ঞানে দক্ষ ও আরব বিশ্বের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক মিশনে নিয়োগ দান করুন।
দলীয় ক্যাডারদের অপসারণ: আরব বিশ্বের বিভিন্ন দূতাবাসে এখনো পতিত সরকারের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে নিয়োগকৃত ক্যাডারগণ বহাল তবিয়তে আছেন। বিগত দিনে প্রবাসীদের দুতালয় সেবার চেয়েও তারা স্বার্থ ও দলসংশ্লিষ্ট বিষয়ে অধিক সচেতন ছিলেন। প্রবাসীরা নিগৃহীত ও তাদের হাতে জিম্মি। তাদের কাছে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের মূল্যায়ন নেই। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থে পরিবারবর্গের ভরণপোষণ, আনুষাঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার পরেও তারা রাষ্ট্রীয় ও প্রবাসীদের স্বার্থকে গুরুত্ব দেয় না। নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও দল মতের বিপরীতের লোকদের সহযোগিতার পরিবর্তে হয়রানি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। দূতাবাসের সকল সম্মান, সুযোগ- সুবিধা তারা সংরক্ষিত রেখেছেন শুধু নির্দিষ্ট দলের ব্যক্তিদের জন্য। তাই এ সকল দলীয় ক্যাডারদের অপসারণ ও ট্রান্সফার অতি জরুরী ভিত্তিতে করা উচিত । রাষ্ট্রীয় ও প্রবাসী বান্ধব দূতাবাস গড়ে তুলুন। প্রবাসের দূতাবাসে রক্ষক কর্মকর্তা নয়, রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য মানবিক গুণসম্পন্ন সেবক চাই। অন্যদিকে স্থানীয় নিয়োগকৃত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। এখানে পতিত সরকারের দালালদের নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। ওরা সাধারণ প্রবাসীদের হয়রানি ও অর্থ কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত। ওরা দূতাবাসের কর্মকর্তাদের মধ্যে ভুল তথ্য দিয়ে দূতাবাস ও প্রবাসীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে রেখেছেন।
জাতীয় দিবসে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ: প্রত্যেক দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক বাংলাদেশের জাতীয় দিবস যেমন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, অভিবাসী দিবস ইত্যাদি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। এ সকল অনুষ্ঠানে সকল বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ থাকবে, যাদের সুযোগ আছে ,তারা অংশগ্রহণ করবে,এটাই হওয়া স্বাভাবিক। প্রতিবছর সোশ্যাল মিডিয়ায় সাধারণ প্রবাসীদের জাতীয় দিবসে আমন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু আমাদের এ বছরের বিজয় দিবসে সাধারণ প্রবাসীদের উন্মুক্ত দাওয়াত না করে কতিপয় ব্যবসায়ী ও দূতাবাসের পছন্দের দলীয় ব্যক্তি বিশেষদের নিয়ে বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়। অজ্ঞাত কারণে সাধারণ প্রবাসীদের রাষ্ট্রীয় অধিকার থেকে কেন বঞ্চিত করা হয়েছে? তা তদন্তপূর্বক জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। যদি আইনি বাধা থাকে, আইন করে প্রবাসীদের জাতীয় দিবসে অংশগ্রহণের সুযোগ সংরক্ষিত করা প্রয়োজন। আর নয় প্রবাসীদের অবহেলা,”দেশে বা প্রবাসে সকল প্রবাসী কর্মীর অধিকার, নিরাপত্তা ও মানব মর্যাদা রক্ষা” প্রবাসীদের সাংবিধানিক অধিকার, ধারা ২৫ (উপ-ধারা ১-ক), অভিবাসী আইন ২০২৩।
দূতাবাসের কর্মক্ষমতা ও সময় বৃদ্ধি: বাংলাদেশের দূতাবাস,হাইকমিশনে বছরান্তে প্রায় অর্ধেক ছুটি থাকে । বাংলাদেশের সকল ছুটি, স্থানীয় দেশের রাষ্ট্রীয় ছুটি, সাপ্তাহিক ছুটি, বিভিন্ন সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় ছুটি,কর্মকর্তাদের মেডিকেল ও অন্যান্য ছুটি ইত্যাদি মিলিয়ে দূতাবাসগুলো বছরের অর্ধেক সময় বন্ধ থাকে। ফলে প্রবাসীদের দূতাবাস সেবা পেতে বিঘ্ন ঘটে। আইন অনুযায়ী সময় মত কার্য সম্পাদনা করতে না পারায় নিরীহ প্রবাসীদের বিভিন্ন দেশে আর্থিক জরিমানা দিতে হয়। পাসপোর্ট, এনআইডি কার্ডসহ অন্যান্য দোতালয়?? সেবা যথাসময়ে প্রবাসীরা পাচ্ছে না। তার উপরে দূতাবাসের কার্যক্ষমতা ও জনবল সঙ্কট প্রকট। এমতাবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে প্রবাসীদের প্রত্যাশা বৈদেশিক মিশনে যথোপোযুক্ত সংস্কারের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় ছুটি বাতিল করে প্রবাসের কর্ম দিবসে বাংলাদেশ দূতাবাস/ মিশনগুলো চালু রেখে প্রবাসীদের জন্য গতিশীল দূতাবাস পরিষেবার সুযোগ করে দেওয়া। প্রবাসীদের কল্যাণকর গতিশীল দূতাবাসের কার্যক্ষমতা ও কর্ম সময় বৃদ্ধি করে রেমিট্যান্স প্রবাহ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করা সময়ের অপরিহার্য দাবী। তাছাড়া দূতাবাস কর্মকর্তাগণ কেন দুই দেশের ছুটি ভোগ করবে,প্রবাসী শ্রমিকরা যখন কর্মস্থলে থাকে, বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে, তখন দেখা যায় সাপ্তাহিক ছুটি ও বাংলাদেশের ছুটির কারণে চার পাঁচ দিন দূতাবাস একটানা বন্ধ