ঢাকা, ১ অগ্রহায়ণ (১৬ নভেম্বর) :
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, মৈমনসিংহ গীতিকাসহ
বাংলার সমৃদ্ধ লোকজ সংস্কৃতিকে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে দিতে প্রচলিত ধারার বাইরে
বেরিয়ে আসতে হবে। এই লক্ষ্যে সংস্কৃতিকে ডিজিটাইজ করা অপরিহার্য। তিনি সংস্কৃতি
সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে দেশীয় সংস্কৃতিকে বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে একযোগে কাজ করার
আহ্বান জানান।
মন্ত্রী আজ ঢাকায় বাংলা একাডেমি মিলনায়তনে ৫৫ জন বাউলের ২ হাজার গান নিয়ে
‘নেত্রকোণার বাউলা গান’ শিরোনামের বইয়ের প্রকাশনা উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ আহ্বান জানান।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সমাজ
কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু. সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ,
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক, সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল,
বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অপু উকিল. সাবেক সচিব মাসুদ
সিদ্দিকী এবং বইটির সম্পাদক ও বাউল গান সংগ্রাহক কেন্দুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল
ইসলাম বক্তৃতা করেন।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ‘নেত্রকোণার বাউলা গান’ বইটিকে বাংলার লোকজ সাহিত্যের
একটি সমৃদ্ধ ভাণ্ডার আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, চন্দ্রকুমার দে – দ্বীনেশ চন্দ্র সেনের
রত্নভাণ্ডার মৈমনসিংহ গীতিকার পর নেত্রকোণার বাউলা গান সংকলনটি লোকজ সাহিত্যে
আরো একটি গর্বের ধন। তিনি বলেন, ভৈরব বাজার থেকে উত্তরে গারো পাহাড়ের পাদদেশ
পর্যন্ত বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষের জীবনধারা বৈচিত্র্যময়। সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই
বর্ষায় লম্বা অবসর সময়ে বাউল গান এখানকার মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ অংশ।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি মোস্তাফা জব্বার বলেন, লেখাপড়া
নাই কিন্তু আপন মনের মাধুরি মিশিয়ে বাউলেরা যে গান রচনা করেন ও সুর আরোপ করেন তা
মাটি থেকে উঠে আসা সুর। এটি যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পৃথিবী জয় করবে উল্লেখ করেন
তিনি। মন্ত্রী বাউলা গান বইটি প্রতিটি অঞ্চলে সাংস্কৃতিক কর্মীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার
প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, বাউল গানের সুর, কথা, বাণীর গভীরতা
কাঁদা মাটির সাথে যুক্ত আছে। তিনি জানান ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের উদ্যোগে
লোকজ সাহিত্যের রত্নভাণ্ডার খ্যাত মৈমনসিংহ গীতিকা পুণমুদ্রণ করা হচ্ছে ।

সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, নেত্রকোণার লোকজ সাহিত্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ।
মৈমনসিংহ গীতিকার সিংহভাগ এখানকার মানুষ প্রাণ খুলে গাইতে পারে। মহুয়া-মলুয়া উপখ্যান
নেত্রকোণা অঞ্চলের বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বইটির সম্পাদক নুরুল ইসলামের
উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, নুরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের সম্পদ তৈরি করেছেন।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ ও
কিশোরগঞ্জ অঞ্চল লোকজ সংস্কৃতির জন্য প্রসিদ্ধ। লোকগানের কিংবদন্তি পুরুষ শাহ
আবদুল করিম, রাধারমণ, দূরবীণ শাহ নেত্রকোণার বাউল গান দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।
এমনকি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বাউল গানে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি তাঁর কবিতা ও গানে
বাউল গানের মর্মবাণী ও সুর সচেতনভাবে ব্যবহার করেছেন।