ঢাকা, ৩০ চৈত্র (১৩ এপ্রিল) :

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ আগামীকাল ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত
বাণী প্রদান করেছেন :
“শুভ নববর্ষ।

পহেলা বৈশাখ বাঙালির জাতীয় জীবনে পরম আনন্দের দিন। আনন্দঘন এ দিনে আমি দেশে ও
দেশের বাইরে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিকে বাংলা নবর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

চির নতুনের বার্তা নিয়ে আমাদের জীবনে বেজে উঠে বৈশাখের আগমনি গান। দুঃখ, জরা,
ব্যর্থতা ও মলিনতাকে ভুলে সবাই জেগে ওঠে মহানন্দে। বাঙালি জাতির শাশ্বত ঐতিহ্যের প্রধান
অঙ্গ পহেলা বৈশাখ। ফসলি সন হিসেবে মোঘল আমলে যে বর্ষগণনার সূচনা হয়েছিল, সময়ের
পরিক্রমায় তা আজ সমগ্র বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক স্মারক উৎসবে পরিণত হয়েছে।
পহেলা বৈশাখের মাঝে বাঙালি খুঁজে পায নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও চেতনার স্বরূপ। বৈশাখ শুধু
উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আত্মবিকাশ ও বেড়ে ওঠার
প্রেরণা। বাঙালি জাতির অসাম্প্রদায়িক চেতনায় চিড় ধরাতে ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানি সামরিক
সরকার বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনসহ সকল গণমুখী সংস্কৃতির অনুশীলন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা
করে। সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ধর্মীয় ও
গোষ্ঠীগত ভেদাভেদ ভুলে নববর্ষ উদ্‌যাপনে এক কাতারে শামিল হন। সেসময় বাঙালি সংস্কৃতির
বিকাশ, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও মুক্তিসাধনায় পহেলা বৈশাখ ছিল মূল শক্তি। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে
সংস্কৃতির এই শক্তি রাজনৈতিক চেতনাকে দৃঢ় ও বেগবান করেছিল।

২০১৬ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য
হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতীয় সংস্কৃতির এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি জাতি হিসেবে বাঙালির জন্য
পরম গৌরব ও মর্যাদার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাষ্ট্রদর্শন ও আদর্শের
অন্যতম ভিত্তি ছিল দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশ ও জাতীয় চেতনার উন্মেষ। বঙ্গবন্ধু কারারুদ্ধ জীবনে
সহবন্দিদের নিয়ে যে নববর্ষ উদ্‌যাপন করেছিলেন সেখানে এ চেতনাই ক্রিয়াশীল ছিল। পহেলা বৈশাখ
আমাদেরকে উদার হতে শিক্ষা দেয় এবং জাতীয়তাবাদে উজ্জীবিত হয়ে বিশ্বমানবের সঙ্গে মিশে
যাওয়ার প্রেরণা জোগায়। এই উদারনৈতিক চেতনাকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রদর্শন, বাংলাদেশ
প্রতিষ্ঠার আদর্শ এবং রাষ্ট্রভাষা চেতনার বহ্নিশিখা অন্তরে ধারণ করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত
সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ হোক আজকের দিনে সকলের অঙ্গীকার। সকল অশুভ ও অসুন্দরের

ওপর সত্য ও সুন্দরের জয় হোক। ফেলে আসা বছরের সব শোক-দুঃখ-জরা দূর হোক, নতুন বছর নিয়ে
আসুক সুখ ও সমৃদ্ধি – এ প্রত্যাশা করি।
জয় বাংলা।
খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”