ঢাকা, ২৩ অগ্রহায়ণ (৮ ডিসেম্বর) :

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ আগামীকাল ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস
উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :

“বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষ্যে আমি মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত
হোসেনের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক
‘বেগম রোকেয়া দিবস ২০২১’ উদযাপন ও ‘বেগম রোকেয়া পদক’ প্রদানের উদ্যোগকে আমি
স্বাগত জানাই।

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে বেগম রোকেয়া তাঁর শানিত অন্তদৃষ্টি দিয়ে উপলব্ধি
করেছিলেন যে, সমাজে নারীর অধস্তন অবস্থা নারী উন্নয়নের পথে প্রধান অন্তরায়। তাই
তাঁর চিন্তা-ভাবনা-উদ্বেগ সর্বক্ষণ আবর্তিত ছিল নারী জাগরণ ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠাকে
কেন্দ্র করে। তিনি শুধু নারী শিক্ষার অগ্রদুতই ছিলেন না, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী
নিবেদিতপ্রাণ একজন সমাজকর্মীও ছিলেন। নারীকে অবরোধবাসিনী করে বিকলাঙ্গ করার
প্রথা উচ্ছেদসহ নারী মুক্তি, নারীর অগ্রযাত্রা ও নারী শিক্ষা প্রবর্তনে তাঁর ত্যাগী ভূমিকা
তাঁকে মহীয়সী করেছে। “কন্যাগুলিকে সুশিক্ষিত করিয়া কার্যক্ষেত্রে ছাড়িয়া দাও- নিজের
অন্নবস্ত্র উপার্জন করুক” – শতবর্ষ আগে এভাবেই বেগম রোকেয়া তাঁর ক্ষুরধার লেখনীর
মাধ্যমে নারীদের শিক্ষিত তথা আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বেগম
রোকেয়ার চিন্তার গভীরতায় এবং দৃষ্টির প্রসারতায় রচিত সাহিত্য আমাদের জাতীয় জীবনে
সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে রোল
মডেল। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাল্যবিবাহ
নির্মূলসহ তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীর পেশাগত জ্ঞান ও মেধা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টির বিভিন্ন
কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় গ্রহণ
করা হয়েছে নারীবান্ধব নানা উদ্যোগ ও কর্মকৌশল। সরকারের বিচক্ষণ, গতিশীল ও বলিষ্ঠ
পদক্ষেপের কারণে রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, আইন প্রণয়ন, প্রশাসন, সশস্ত্রবাহিনী,
অর্থনীতি, সাংবাদিকতা, শিল্প-সংস্কৃতি ও খেলাধুলাসহ পেশাভিত্তিক সকল ক্ষেত্রে নারীদের
আজ গর্বিত পদচারণা। নারীরা এভারেস্ট বিজয় থেকে শুরু করে শান্তি মিশনের ঝুঁকিপূর্ণ
দায়িত্বও সম-দক্ষতায় সম্পাদন করছে। সমাজের সকল স্তরে নারীর ক্ষমতায়নের পথ সুগম
করতে পুরুষদের সহযোগিতা খুবই জরুরি। বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি
বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে আমি সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

এ বছর যাঁরা ‘বেগম রোকেয়া পদক’ পেয়েছেন আমি তাঁদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও
অভিনন্দন জানাচ্ছি। বেগম রোকেয়ার কর্ম ও জীবনাদর্শ অনুসরণ করে আমাদের নারী সমাজ
উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাবে- বেগম রোকেয়া দিবসে আমি এ প্রত্যাশা করি।
জয় বাংলা।

খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”