যশোরের বেনাপোল-শার্শা সীমান্তে ইছামতী নদীর পাড় থেকে একদিনে ৩ যুবকের মরদেহ উদ্ধার হলেও রহস্য উদঘাটন হয়নি এখনও। পরিবার ও পুলিশ বলছে, বিএসএফের নির্যাতনেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। বিজিবি-বিএসএফ ক্যাম্প পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হলেও উচ্চ পর্যায়ে পতাকা বৈঠক বা কোনও প্রতিবাদ স্বরূপ পত্র পাঠানো হয়নি। প্রশাসনের সবাই বলছে তদন্ত চলছে।

ঘটনার ৩ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়নি, তদন্ত চলছে। এলাকাবাসী ও পুলিশ ধারণা করছে, বিএসএফ পিটিয়ে তাদের হত্যা করেছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার পাচভূলাট সীমান্তে বিজিবি বিএসএফের সুবেদার পর্যায়ে একটি পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সেখানে বিএসএফ বলেছে, ঘটনাটি তারা তদন্ত করে জানাবে। তবে নিহতদের পরিবারের দাবি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের নির্যাতনে তাদের মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে আত্মীয়স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। দুজনকে বেনাপোলে ও একজনকে চৌগাছার শাহাজাদপুরে দাফন করা হয়েছে।

নিহতরা হলেন, দিঘিরপাড় গ্রামের আরিফুল ইসলামের ছেলে সাবুর আলী (৩৫) ও কাগজপুকুর গ্রামের ইউনুচ আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩০) ও চৌগাছার শাহাজাদপুর গ্রামের জামিলুর রহমানের ছেলে সাকিবুর রহমান (২২)।

জাহাঙ্গীরের ভাই আলমগীর জানান, তার ভাই ভারতীয় একটি মেয়েকে বিয়ে করে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ভারতে বসবাস করেন। বর্তমানে ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় জাহাঙ্গীর অবৈধ পথে কয়েক দিন আগে ভারত থেকে বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। মঙ্গলবার রাতে ভারতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে রওনা দেয়। পরে সকালে লোকমুখে খবর পায় জাহাঙ্গীরের মরদেহ পাঁচভূলাট সীমান্তে ইছামতী নদীর পাড়ে পড়ে আছে।

সাবুর আলীর স্ত্রী হাসি বেগম বলেন, মাঝে মাঝে সাবু মালামাল আনতে ভারতে যেত। ভোর রাতে লোকমুখে খবর পায় পুটখালী সীমান্তে ইছামতী নদী পাড়ে তার স্বামী আহত অবস্থায় পড়ে আছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে আসার পথেই তার মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ এসে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। বিএসএফের নির্যাতনে তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন হাসি বেগম।

সাকিবুরের মামা আজগার আলি বলেন, সাকিবুর ট্রাকে হেলপারি করতো। মঙ্গলবার দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয় রাতে বাড়ি ফেরেনি। এদিক ওদিক খোঁজ করেও সন্ধান পাওয়া যায়নি। বুধবার বিকেলে লোকমুখে খবর পেয়ে শার্শার অগ্রভূলাট সীমান্তে ইছামতি নদীর পাড়ে গিয়ে তার মরদেহ শনাক্ত করি। পরে জানতে স্থানীয় কিছু চোরাকারবারির সঙ্গে মঙ্গলবার রাতে চোরাচালানের পণ্য আনতে ভারতে যায়।

বেনাপোলের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, যে সীমান্ত হত্যার ঘটনায় যে ৩ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে তাদের ৫-৭ জনের একটি গ্রুপ আছে। তারা ভারত থেকে ফেনসিডিলসহ চোরাচালানি পণ্য পাচার করে এনে দেশে বিক্রি করে। বিএসএফের হাতে তারা আটক হয়। বিএসএফ আটকের পর তাদের বেদম মারপিট করে। মৃত্যু নিশ্চিত করে রাতের আধারে সীমান্তের ইছামতি নদীর পাড়ে ফেলে রেখে যায়। স্থানীয় লোকজন মরদেহ দেখে বিজিবি ও পুলিশকে খবর দেয়। পরে সকালে ২টি ও বিকালে ১টি মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। উদ্ধারকৃত মরদেহের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমির আব্বাস জানান, বিজিবির মাধ্যমে খবর পেয়ে পাঁচভূলাট সীমান্ত থেকে জাহাঙ্গীর ও অগ্রভূলাট সীমান্ত থেকে সাকিবুরের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি তারা চোরাকারবারি। ভারতে যায় ফেনসিডিল আনার জন্য। ধারণা করা হচ্ছে ভারতীয় বিএসএফ তাদের পিটিয়ে হত্যা করে মরদেহ ইছামতি নদীর পাড়ে ফেলে গেছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেলে হত্যা রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে। তদন্ত চলমান আছে।

খুলনা ২১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল খুরশিদ আনোয়ার জানান, পাঁচভূলাট, অগ্রভূলাট ও পূটখালী সীমান্তের ইছামতী নদীর পাড় থেকে বুধবার সকালে ও বিকালে পৃথক পৃথক স্থানে মরদেহ পাওয়া যায়। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। ঘটনার দিনই সুবেদার পর্যায়ে (পাঁচভূলাট বিজিবি-ডুমারপাড়া বিএসএফ) পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএসএফ কিছু জানে না বলে জানিয়েছে। বিএসএফ বলেছে, তারা তদন্ত করে দেখবে তাদের পাশে এধরনের কোন ঘটনা ঘটেছে কি না।