স্টাফ রিপোর্টার:
সিনেমা শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে অভিনয়শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীদের আরও উৎসাহিত করার জন্য ১৯৭৬ সাল থেকে সরকারি অনুদান প্রথা চালু হয়। মাঝে কয়েক বছর রাজনৈতিক কারণে বন্ধ থাকলেও এ প্রথা এখনো চলমান। কিন্তু এ অনুদান প্রথা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। সিনেমা নির্মাণের জন্য সরকারি অনুদান আসলে কাকে দেওয়া হয়, কারা অনুদান পাওয়ার যোগ্য, অনুদান পেয়ে কারা ঠিকঠাক নিয়ম মেনে সিনেমা নির্মাণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেন, কারা অনিয়ম করেন, এসব বিষয় নিয়ে নানা অভিযোগ অনুদান দেওয়ার শুরু থেকে হয়ে আসছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, অনুদানের সিনেমা কী আদৌ সফল হচ্ছে? বা যে কারণে অনুদান দেওয়া হচ্ছে সেই উদ্দেশ্য কী পূরণ হচ্ছে? কারণ, অনুদান প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর থেকে হাতেগোনা কয়েকটি সিনেমা ছাড়া বেশিরভাগই ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ অর্থাৎ জনগণের অর্থের অপচয় হয়েছে। বিশেষ করে এ সময়ে এসে সরকারি অনুদানে নির্মিত একটি সিনেমাও সফলতার মুখ দেখছে না।
গত কয়েক বছরের সরকারি অনুদানের সিনেমার কথা বলতে গেলে আলোচনা আসার মতো কোনো সিনেমা পাওয়া যাবে না। ১৯৭৬ থেকে সর্বশেষ ২০২১ সালে সরকারি অনুদানে নির্মিত হিটের তালিকায় রাখার মতো কোনো সিনেমা নেই। সবশেষ সরকারি অনুদানে নির্মিত দুটি সিনেমা মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত ‘আশীর্বাদ’ ও ইস্পাহানী আরিফ জাহান পরিচালিত ‘হৃদিতা’ মুক্তি পায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ দুটি সিনেমা হলে দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়। তার কয়েক মাস আগে অভিনেতা মীর সাব্বির পরিচালিত ‘রাত জাগা ফুল’ও হলে দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়। চলতি বছর ঈদুল ফিতরে মুক্তিপ্রাপ্ত সরকারি অনুদানে নির্মিত শাকিব খান অভিনীত ‘গলুই’ সিনেমা নিয়ম মেনে নির্মাণ করলেও এর প্রতি দর্শকের আগ্রহ ছিল না।
কেন অনুদানের সিনেমা ব্যর্থ হচ্ছে? এ নিয়ে অনেকেরই জিজ্ঞাসা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিনেত্রী ও নির্মাতা কোহিনুর আক্তার সুচন্দা বলেন, জহির রায়হানের ‘আমি হাজার বছর ধরে’ উপন্যাস অবলম্বনে একটি সিনেমা নির্মাণ করি সরকারি অনুদান নিয়ে। এ সিনেমার কথা সবাই বলতে পারবেন। এর সফলতা পাওয়ার পর আমি ‘বরফ গলা নদী’ নামে আরেকটি গল্প সরকারি অনুদানের জন্য জমা দিই। কিন্তু এর জন্য আমাকে অনুদান দেওয়া হয়নি। অনুদানের সিনেমা সফল হয় না এমন সমালোচনাই প্রায়ই শুনি, কিন্তু কবে এ সমালোচনা ঘুচবে আমি জানি না। এখন কাদের অনুদান দেওয়া হয়, কেন দেওয়া হয়, অন্যদের মতো আমারও এমন প্রশ্ন। উপযুক্ত লোক নির্বাচন না করে যত অনুদান দেওয়া হোক, সিনেমা ভালো হবে না।’
সুচন্দার সঙ্গে একমত হয়ে একই কথা বলেছেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সিনেমার প্রযোজক মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা)। তিনি বলেন, ‘অভিনয় ও নির্মাণ না জানলে যতই টাকা খরচ করা হোক, সিনেমা হবে না। সিনেমার ক্ষেত্রে বাজেট একটি বড় বিষয়। তবে শুধু বাজেটই মুখ্য বিষয় নয়। গল্প, নির্মাতা এবং অভিনয়শিল্পীর বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে। যোগ্য লোক, সুন্দর গল্প এবং অভিনেতা, এমনকি গান এবং কে গাইবে-সব বিষয়ের ওপরও গুরুত্ব দিয়ে অনুদান দেওয়া উচিত। তাহলে দর্শক সিনেমা দেখবে। আর এটি শুধু অনুদানের সিনেমার ক্ষেত্রে নয়, সব প্রযোজনার ক্ষেত্রে এসব বিষয় মাথায় রাখা উচিত। অন্যথায় সিনেমা নির্মাণ করা যাবে, কিন্তু হলে দর্শক যাবে না।’