সবুজ বাংলাদেশ প্রতিবেদন :
১২ অক্টোবর ২০২২
ভোটকেন্দ্রে নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার আসনের উপনির্বাচন বুধবার সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে কয়েকঘণ্টা ভোট না চলতেই ভোট কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠে। এরপরই নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুরো ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়।
বেলা সোয়া ২টার দিকে ঢাকায় নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সামনে এসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, প্রথমে নানা অনিয়মের কারণে ৫১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম পুরো নির্বাচনি এলাকায় ভোটগ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার। সেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। সেখানে আর ভোট হচ্ছে না। আরপিওর ক্ষমতাবলে ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।ভোটের বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হবে। বন্ধ হওয়া ভোটের বিষয়ে আইন পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ সময় গোপন কক্ষে অযাচিত লোকদের উপস্থিতি, এজেন্ট বের করে দেওয়া, সিসিটিভির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ নানা অভিযোগের কথা স্বীকার করেন সিইসি।
এই নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে মাহমুদ হাসান রিপন, জাতীয় পার্টির এএইচএম গোলাম শহীদ (লাঙ্গল), বিকল্প ধারার জাহাঙ্গীর আলম (কুলা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান (আপেল), স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান (ট্রাক) প্রতীক নিয়ে ভোটে অংশ নেন।
ভোটে অনিয়মের অভিযোগ এনে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন থেকে নৌকার প্রার্থী ছাড়া বাকি সবাই সরে দাঁড়িয়েছেন।দুপুরে গাইবান্ধার বগারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে একসঙ্গে জাতীয় পার্টিসহ ৪ প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
এরপরেও অনিয়ম বাড়তে থাকায় শেষ পর্যন্ত ১৪৫ কেন্দ্রের মধ্যে ৫১টির ভোট বন্ধ করে ইসি। এক পর্যায়ে ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু না থাকায় পুরো নির্বাচনের ভোটগ্রহণ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।
সিইসি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করলাম কিছু কিছু কেন্দ্রে সিসিটিভি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে আমরা তথ্য সংগ্রহ করতে পারছিলাম না। আমরা আমাদের পদস্থ কর্মকর্তাদের রেখে দুপুর সাড়ে ১২টায় কক্ষ ত্যাগ করেছি। এরপরে আরও ৭টি কেন্দ্র থেকে আমাদের অনুমোদন নিয়েছেন। আমরা সম্মত হয়েছি। ৫০টি কেন্দ্রের ভোট আমরা বন্ধ করেছি এবং একজন রিটার্নিং অফিসার একটি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করেছেন। অর্থাৎ সর্বমোট ৫১টি ভোট আমরা বন্ধ করেছি।
পরে পুরো নির্বাচন স্থগিত করে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কমিশনের সব সদস্য মিলে এরপরে আমরা পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। যেহেতু ১৪৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫১টি কেন্দ্রই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই অবশিষ্ট কয়েকটি কেন্দ্র থেকে সঠিক মূল্যায়ন করা সম্ভব না। আইনেও বলা আছে যে, কমিশনের কাছে ভোট যদি নিরপেক্ষ না হয়ে তবে তারা যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন।’
সিইসি বলেন, কিছু কিছু কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সঠিকভাবে হচ্ছে না তাই আমরা ভোট বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয় সে লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন অনেক কঠোর অবস্থানে আছে। নির্বাচনটাকে নির্বাচনের মতোই দেখতে চাই আমরা। অনিয়মের কারণে আমাদের এমন করতে হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে অনধিকার প্রবেশ বা আইন ভঙ্গ করে প্রবেশ করতে আমরা সচক্ষে দেখেছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘মূল অ্যাকশন হিসেবে আমরা কেন্দ্র বন্ধ করেছি। এখন চাকরি বিধি অনুযায়ী বা অন্য বিধি অনুযায়ী কী অ্যাকশন নেব তা পরে দেখব। আমরা টেলিফোনে এসপি, ডিসি, রিটার্নিং অফিসারকে বলেছি যে আমরা এখান থেকে সিসি ক্যামেরায় দেখতে পেয়েছি। তাই সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছি।’
‘কমিশন যদি মনে করে নির্বাচন সঠিকভাবে হচ্ছে না তাহলে কমিশন নির্বাচন বন্ধ করতে পারে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে কেন চলে গেল তা আমরা বলতে পারব না। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে অনেকটাই। আপনারাও দেখতে পেয়েছেন যে গোপন কক্ষে কী হচ্ছে এবং সুশৃঙ্খলভাবে হচ্ছে না। কেন হচ্ছে এখন- তা চটজলদি বলতে পারব না।’
এ সময় সিইসি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঠিকমতো কাজ করছে কি না, তা আমরা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। ইভিএমেরও কোনো ত্রুটি দেখতে পাচ্ছি না। ওই যে মানবিক আচরণ, আরেকজন ঢুকে যাচ্ছে, দেখিয়ে দিচ্ছে। আবার অনেকেই দেখছি গেঞ্জি পরে, শাড়ি পরে যেখানে প্রতীক আছে দেখিয়ে দিচ্ছে। তারা আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেছে এবং এটা সুশৃঙ্খল নির্বাচনের পরিপন্থী। এরাই ডাকাত, এরাই দুর্বৃত্ত। যারাই আইন মানছেন না তাদেরই আমরা ডাকাত-দুর্বৃত্ত বলতে পারি। কারণ আইনের প্রতি সবার শ্রদ্ধা করতে হবে। সবাই যদি আইন না মানি নির্বাচন কমিশন এখানে বসে সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারবে না।’
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ দাবি করছেন, কোনো কেন্দ্রেই নৈরাজ্য হয়নি।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, গাইবান্ধা-৫ আসনের নির্বাচনে কোনো কেন্দ্রেই নৈরাজ্য হয়নি।ঢাকায় কমিশন ভবনে বসে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এতগুলো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিতের সিদ্ধান্ত ইসি কীভাবে নিল- তা বোধগম্য নয়।