ঢাকা, ২৮ আশ্বিন (১৩ অক্টোবর) :
বাংলাদেশ থেকে কৌশলে মধ্যপ্রাচ্যে মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম মূল হোতা টুটুল ও তার সহযোগী তৈয়বসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।
মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত রাজধানীর  বাড্ডা থানার লিংকরোডে টুটুল ওভারসিজ, লিমন ওভারসিজ ও লয়াল ওভারসিজে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা  হলেন-মোঃ সাইফুল ইসলাম ওরফে টুটুল (৩৮), জেলা-মেহেরপুর, মোঃ তৈয়ব আলী (৪৫), জেলা- রংপুর, শাহ্ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন লিমন (৩৮), জেলা- গোপালগঞ্জ, মোঃ মারুফ হাসান (৩৭), জেলা- পটুৃয়াখালী, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (৩৮), জেলা- মেহেরপুর, মোঃ লালটু ইসলাম (২৮), জেলা- মেহেরপুর, মোঃ আলামিন হোসাইন (৩০), জেলা- শরয়িতপুর ও  মোঃ আব্দল্লাহ আল মামুন (৫৪), জেলা- কুষ্টিয়া।আজ বুধবার  দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন র‌্যাব-৪ এর  কমান্ডিং অফিসার (অধিনায়ক) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।
এসময় র‍্যাবের আইনও গনমাধ্যম শাখার কর্মকর্তারাসহ অন্যান্য অফিসাররা উপস্হিত ছিলেন।
ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, সম্প্রতি কয়েকজন নারী ভিকটিমের অভিভাবকের মধ্যপ্রাচ্যে মানবপাচার সংক্রান্ত অভিযোগের ভিত্তিতে  র‌্যাব-৪ এর সদস্যরা ছায়া তদন্ত শুরু করে ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে রাজধানীর বাড্ডা থানা এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করে।
এসময় মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যদের কবল থেকে দুই নারী – দুই পুরুষসহ ৪ ভিকটিমকে উদ্ধার, ১০টি পাসপোর্ট, ৭টি ফাইল, ৪টি সিল, ১৭টি মোবাইল, ৫টি রেজিস্টার, ৪ টি ব্যাংকের চেক বই, ২টি কম্পিউটার, ৩টি লিফলেট এবং নগদ ১০ হাজার ৭০ টাকা জব্দ করা হয়।
র‌্যাব-৪ এর  কমান্ডিং অফিসার সাংবাদিকদের  বলেন, সামান্য একজন মুদি দোকানদার থেকে তিনটি ওভারসিজ এজেন্সির মালিক বনে যাওয়া এ সংঘবদ্ব চক্রের  মূল হোতা টুটুল- তৈয়ব আটকের পর তারা মানবপাচারের ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর  তথ্য  প্রদান করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, মেহেরপুরের গাংনী থানার সাইফুল ইসলাম ওরফে টুটুল (৩৮) এইচএসসি পাস করে প্রথমে ছিলেন মুদি দোকানদার। ঢাকায় আসা যাওয়ার মাঝে অধিক লাভের আশায় মানবপাচার চক্রে জড়িয়ে পড়েন। শুরুতে চক্রের দালাল হিসেবে বিভিন্ন এজেন্সিতে বিদেশে লোক পাঠানোর কাজ করতেন। পরে নিজেই খোলেন তিনটি ওভারসিজ প্রতিষ্ঠান। তবে, ওই তিন প্রতিষ্ঠানের বৈধতা না থাকায় অন্য বৈধ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বেকার ও শিক্ষিত অর্ধ-শতাধিক নারী-পুরুষকে বিদেশে পাচার করেন। এভাবে হাতিয়ে দেন কোটি টাকা।
এছাড়া টুটুলের এই প্রতারণার কাজে অন্যতম দালাল বা সহযোগী ছিলেন মো. তৈয়ব আলী (৪৫)। তিনিও চায়ের দোকানদার হলেও পরিচয় দিতেন স্বনামধন্য এয়ারলাইন্সের ম্যানেজার হিসেবে। অনেককে দিয়েছেন চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্রও।
অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, মানবপাচার চক্রের অন্যতম সহযোগী শাহ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন লিমন ও মারুফ হাসান ছিলেন বেতনভুক্ত কর্মচারী। জাহাঙ্গীর আলম, লালটু ইসলাম, আলামিন হোসাইন ও আব্দল্লাহ আল মামুন টার্গেট সংগ্রহ, প্রার্থীর পাসপোর্টের ব্যবস্থা, কথিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, টাকা সংগ্রহ, প্রাথমিক মেডিকেল সম্পূর্ণ করাসহ অন্যান্য কাজে সহায়তা করে আসছিল।
এ সংঘবদ্ব প্রতারক চক্রের সদস্যরা বিদেশে মানব পাচারের সাথে জড়িত উল্লেখ করে র‌্যাবের এ কর্মকর্তা আরো  বলেন, প্রতারক টুটুল ও তৈয়বের নির্দেশে চক্রের সদস্যরা টার্গেট করে দেশের বেকার ও অস্বচ্ছল যুবক-যুবতীদের সৌদি আরব, জর্ডান ও লেবাননসহ বিভিন্ন দেশে লোভনীয় বেতনে কাজ দেওয়ার নাম করে প্রলুব্ধ করতো। এরপর বিদেশ যেতে আগ্রহীদের ঢাকায় মূলহোতা টুটুল ও তৈয়বের কাছে পাঠাতো। পরবর্তীতে তারা বিভিন্ন কৌশলে নারী -পুরুষ ভিকটিমদের
কাছ থেকে টাকা আদায় করতো। এছাড়া পাসপোর্ট অফিসের দালালেদের সঙ্গেও সখ্যতা ছিল এ মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যদের।
তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্হা গ্রহন করা হয়েছে।