নদীর দেশ বাংলাদেশে বর্তমানে নদীর বেহালদশা। পদ্মা নদীসহ শ শ নদী মরে যাচ্ছে, অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে । দেশে জলবায়ুর প্রতিকূল প্রভাব পড়ছে । এখন শুধু ইতিহাসের পাতায় লেখা একটি নদীর নাম পদ্মা । এটা কি নদী ? বিশ্বাস করা যায় না । পদ্মার সেই খরস্রোত নেই কেন ? এমন সব প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে একালের শিশু-কিশোর, ছাত্র-ছাত্রীসহ কোন আগন্তুককে । বিশাল-বিস্তৃত ধুধু বালুচর আর পানির ক্ষীণ বিল কিংবা লেকের মতো পদ্মার ঐতিহ্য অস্তিত্বকে এতটা বিপন্ন করেছে।
ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মিত হয়েছে আবহমানকাল ধরে প্রবাহিত গঙ্গা-পদ্মা নদীর ভারতের অংশ ফারাক্কায় । ১৯৬৮-১৯৬৯ সালে ফরাক্কা ব্যরেজটি একতরফাভাবে নির্মাণ করে ভারত। কিন্তু ভারত কৌশলগতভাবে ব্যারেজটি তখনই চালু করেনি । তখন পাকিস্থানে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুথানের ১৯৭০ সালের জেনারেল ইয়াহিয়া সামরিক শাসন জারি এবং সবশেষে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বধীনতা অর্জনের কাল। তারপরেও ভারত অপেক্ষা করে এবং অবশেষে ১৯৭৫ ইং সালের ২১ এপ্রিল ভারত ফারাক্কা চালু করার পর থেকে অব্যাহতভাবে মরণদশা শুরু হয়েছে ।
নদী আছে পানি নেই, বালু আছে কিন্তু কোথায় যেন কোন মাটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পদ্মার কোলে জেগে উঠা চরে সবুজ ফসল ফলানো সম্ভাব হচ্ছেনা । প্রতি বছর বালু জমতে জমতে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে । পদ্মার ভয়াবহ রুপ দিনে দিনে হারিয়ে ফেলেছে । বিগত বছরগুলোতে এ নদীর ক্ষীণ স্রোতধারা থাকলেও এ বার তাও নেই । একটা বিলে পরিণত হয়েছে । এখন রেলবাজার ঘাটের সামনে মানুষ সাঁতার দিয়ে নদী পার হতে পারছেন। কয়েক বছর পর নৌকার পরিবর্তে গরুর গাড়ী কিংবা সাইকেলে নদী পার হওয়া যাবে বলে সচেতন মহলের ধারণা।
ফারাক্কা ব্যরেজের সব কয়টি গেট বন্ধ করে নদী শাসন করে মেরে ফেলা হয়েছে অসংখ্য নদ নদীকে জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে পরিবেশ জীবন জীবিকায় নেমে এসেছে প্রচন্ড ধ্বস। দেশের এক তৃতীয়াংশ এলাকা ধীরে ধীরে মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে । গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নীচে নেমে যাওযায় উত্তাঞ্চলের বেশীর ভাগ নলকূপে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে যায় । দেখা দেয় তীব্র পানির সংকট । উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের জীবনে অভিশাপ বয়ে এনেছে এই ফারাক্কা ব্যারেজ; এসব এলাকার মানুষ যাকে মরণ ফাঁদ বলে জানে ।
এ ব্যারেজ চালু হওয়ার সময় বলা হয়েছিল এটি উভয় রাষ্টের কল্যাণের প্রতীক। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভরতের বিমাতাসুলভ আচারণের কারণে আজ এ ব্যারেজ দেশের মানুষের জন্য অকল্যাণ। একতরফা পানি প্রত্যাহার করে ভারত তাদের বন্দর, কৃষি, সেচ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা সচল রাখলেও এদেশের কৃষি, নৌযোগাযোগ, পরিবেশ, জীবন-জীবিকাকে ঠেলে দিয়েছে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে । বিভিন্ন সময়ে পদ্মার পানি বন্টন নিয়ে অনেক আলোচনা মাপজোঁক আর পর্যবেক্ষণ হয়েছে । চুক্তি হয়েছে, চুক্তি নিয়ে সংসদে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়ছে। কিন্ত বাংলাদেশের ভাগ্যে কখনই চুক্তি মোতাবেক পানি জুটেনি । তবে পানি এসেছে সংসদে, টেলিভিশন, রেডিও, প্রিন্ট মিডিয়া, অন লাইন পত্রিকায়, টেলিফোনে। এর ফলে শুধু পদ্মা নয় অভিন্ন ৫৪টি নদ-নদীর পানি ভারত একতরফা প্রত্যাহার করে চলেছে । ফলে এপারের নদ-নদীগুলো মরে যাচ্ছে ।
পদ্মা নদী মরে যাওয়ার সাথে সাথে শাখা নদী বড়াল, মরাবড়াল, নারোদ, মুছাখান, ইছামতি, চিকনাই, নাগর, ধলাই, গড়াই, মাথাভাঙ্গা, হিসলা, কাজলা, চিত্রা, সাগোরখালি, চন্দনা, কপোতাক্ষ মরে যাচ্ছে। কালিগঙ্গা, বেলাবত এসব নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে । বর্ষা মৌসুমে কিছু দিনের জন্য এসব নদীতে পানি থাকলেও প্রায় সারা বছর থাকে পানিশূন্য । তাছাড়া এসব নদী মরে যাওয়ার সাথে সাথে দু পার্শ্ব অবৈধভাবে দখল হয়ে গেছে । সরকারী দলের তথা কথিত যারা বালিখোর, টিআর গোর, টেন্ডার বাজ, সরকারী খাদ্য গুদামে গমখোর, খাস পুকুরখোর, তারা ড্রেজার, টলি, ট্রাক, লরি প্রকাশ্যে নামিয়ে নদী থেকে দেদারসে বালি মাটি নিয়ে গিয়ে ইটভাটা, ভরাটসহ বিভিন্ন নির্মাণ কাজ করায় পদ্মাসহ বিভিন্ন নদীর পাড়, কোটি কোটি টাকার নির্মিত বাঁধ নষ্ট করে দিচ্ছে যা দেখার যেন কেউ নেই। দেশের নদী এতটা বিপন্ন হয়েছে যেন এখন এসব নদীর নাম বইয়ের পাতায় কিংবা মানচিত্রে স্থান পেয়েছে ।
বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশর কোটি কোটি মানুষ বন্যা, খরা, জলচ্ছাসের কবলে পতিত হয়, সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়, দুঃখের সীমা থাকে না । অকালে ঝরে যায় লাখ লাখ মানুষ, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগীর প্রাণ । জলবায়ুর উপর দেখা দেয় বিরুপ প্রভাব। এর অন্যতম প্রধান কারণ মরণ বাঁধ ফারাক্কা । মৃত. মৌলানা আবদুল হামিদ খাঁন ভাসানী ফারক্কা ব্যারেজের বিরুদ্ধে ব্যারেজমূখি ফারাক্কা লং মার্চ করেছিলেন, ব্যরেজটির মারাত্বক পরিণতির কথা বিবেচনা করে । বাংলাদেশ ভাটির দেশ হয়ে এবং তুলনামূলকভাবে ভারতের চেয়ে অনেক ক্ষুদ্র দেশ হওয়ার কারণে কখনোই তাদের অভিযোগ স্পষ্ট করে বলতে পারেনি। ফারাক্কা ব্যারেজ উজানে পানি প্রত্যাহারের প্রকল্প নয়। এটি একটি শত-সহস্র বছর ধরে প্রবাহমান আন্তজাতিক নদীর গতিপথের সম্পূর্ণ পরিবর্তন যা আন্তজাতিক আইন কানুনের পরিপন্থী।
প্রতিবছরের মত এবারও দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় একাধিক দফায় হয়েছে। বন্যায় অনিবার্য ছিল নদীভাঙন। বন্যা ও নদীভাঙনে অসংখ্য বাড়ি-ঘর, স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। রাস্তাঘাট, বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফসলাদি বিনষ্ট হয়েছে। বন্যা ও নদীভাঙনের কবলে পড়ে লাখ লাখ মানুষ দুঃখ-দুর্ভোগ, বিপদ-বিপন্নতার শিকার হয়েছে। বহু মানুষ ঘরবাড়ি, জমিজিরাত হারিয়ে পথের ভিখারিতে পরিণত হয়েছে এবং কিছুটা ব্যতিক্রমও দেখা গেছে। যখন বিভিন্ন এলাকায় বন্যা হয়েছে, তখন কোনো কোনো এলাকায় অনাবৃষ্টি ও খরার প্রকোপ লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৈপরীত্যের কারণ, জলবায়ুর পরিবর্তন। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রতিক্রিয়া বিশ্বের অন্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি। একই দেশে একই সময়ে বৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজাত ফল। এটা লক্ষ্য করা গেছে, যেখানে বৃষ্টি হয়েছে সেখানে খুব বেশি হয়েছে। যেখানে হয়নি সেখানে একেবারেই হয়নি। অতীতে এরকমটি কখনো দেখা যায়নি।
বরাবরই এ দেশে বন্যার প্রধান কারণ দুটি। প্রথমত, টানা প্রবল বর্ষণ এবং দ্বিতীয়ত, সীমান্তের ওপারে থেকে নেমে আসা ঢল। এবারের বন্যার জন্য ওপার থেকে আসা ঢলই বিশেষভাবে দায়ী। বাংলাদেশ সংলগ্ন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহ এবং বিহারে প্রবল বর্ষণ হয় । বন্যাও হয় । ওপারের ওই বিপুল পানিরাশি সেখানকার নদীনালা-জনপদ ছাপিয়ে হুড়, হুড় করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। এতে যেখানে বন্যা হওয়ার কথা সেখানে তো হয়, যেখানে হওয়ার কথা নয়, তেমন এলাকাতেও হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত অভিন্ন নদীর সংখ্যা ৫৪টি। এসব নদীর পানির শেষ গন্তব্য বাংলাদেশের ওপর দিয়ে সাগরে। সাগরমুখী এসব নদীর পানি শুধু জনপদে বন্যার তা-বই সৃষ্টি করে না, ভাঙনের বিপর্যয়ও সৃষ্টি করে। প্রতি বছরের মতো এবারও দেখা গেছে, ওপারের পানির চাপ মোকাবিলা করতে না পেরে ভারত বিভিন্ন নদীতে দেয়া বাঁধ একযোগে খুলে দেয় প্রতিবছর এবছর এর ব্যতিক্রম করেনি। বিনা নোটিশে এভাবে পানি ছেড়ে দেয়ায় বাংলাদেশে বন্যা ও নদী-ভাঙনের প্রচন্ডতা ও ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। এরকম অনাহুত-অনাকাক্ষিত বান-ভাঙনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাংলাদেশের রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় আছে বলে মনে হয় না। ভারতের ‘পানি রাজনীতি’ যতদিন সক্রিয় ও বহাল আছে ততদিন বাংলাদেশকে এই ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করতেই হবে। প্রতি বছরের সাধারণ বাস্তবতা এই যে, শুকনো মওসুমে নদ-নদী, খালবিল প্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়ে। সেচ প্রকল্পগুলো অকার্যকর হয়ে যায়। ফসলের আবাদ মারাত্মক অনিশ্চয়তায় পতিত হয়।
অতীতে আমরা দেখছি, পদ্মার পানির ওপর নির্ভরশীল গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প তিস্তার পানির ওপর নির্ভরশীল তিস্তা সেচ প্রকল্পসহ অন্যান্য সেচ প্রকল্প তাদের কমান্ড এরিয়ার সামান্য অংশেই কেবল সেচসুবিধা দিতে পারে। বেশিরভাগ জমি সেচ সুবিধার বাইরে থেকে যায়। জমির মালিকরা তাদের মতো করে আবাদ করতে পারলে করে, না পারলে জমি পতিত থাকে। এভাবে সেচ প্রকল্পাধীন এলাকায় চাষাবাদ প্রতি বছরই মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় এবং উৎপাদন সম্ভবনা কাজে লাগানো সম্ভব হয় না। নদীতীরবর্তী এলাকায় নদীর পানি সেচের জন্য ব্যবহার করার কোনো সুযোগ থাকে না, নদী পানিশূন্য হয়ে পড়ায়। এর বাইরে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভও করে যে সেচব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তাও অনেক ক্ষেত্রে ব্যাহত হয়। মাত্রাতিরিক্তি পানি তোলার কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আর আগের অবস্থানে নেই, বহু নিচে নেমে গেছে। দিনে দিনে পনির স্তর নীচে নেমে যাচ্ছে। অনেক সময় পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায় তাও আর্সেনিক বা অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান মিশ্রিত থাকে, ফসলের জন্য যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। বলা যায়, শুকনো মওসুমে ফসলের আবাদ-উৎপাদন ক্রমেই সংকটাপন্ন ও অসম্ভবপর হয়ে উঠছে। নদী যখন শুকিয়ে যায়, ভূগর্ভস্থ পানিতে যখন টান পড়ে তখন খালবিল, জলাশয়, পুকুর ডোবায়ও কোনো পানি থাকে না। পানির জন্য দেশজুড়েই হাহাকার পড়ে যায়। এতে আবাদ-উৎপাদনই শুধু ব্যাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, এমনকি পান ও ব্যবহারযোগ্য পানিরও প্রকট অভাব দেখা দেয়। পানির দেশে পানির এই আকাল একইসঙ্গে অকল্পনীয় এবং উদ্বেগজনক।
কেন এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে দেশ ও দেশের মানুষ পতিত হয়েছে, তা কারো অজানা নেই। প্রথমত, নদীনালা, খালবিল, জলাশয়, পুকুর ডোবা ভরাট হয়ে পানি ধারণক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। দ্বিতীয়ত, অভিন্ন ৫৪টি
নদীর উজানে ভারত অসংখ্য বাঁধ, প্রতিবন্ধক নির্মাণ করে পানি সরিয়ে নেয়ায় দেশের শত শত নদী এখন শুকনো মওসুমে পানি শূন্যতার শিকারে পরিণত হয়েছে। পানি না দিয়ে বাংলাদেশকে শুকিয়ে মারার ভারতীয় অভিসন্ধির কারণে নদী স্বাভাবিক প্রবাহ হারিয়ে ক্রমাগত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে শতাধিক ছোট নদী মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। বড় নদীগুলোর অস্তিত্বের সংকটও তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। প্রথমেই বলেছি ভাটির দেশ বাংলাদেশ, ভাটির দেশের ক্ষতি হয়, এমন কিছু উজানের দেশের না করার নীতি-বিধানের তোয়াক্কা না করেই ভারত ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে পানি সরিয়ে নিচ্ছে।
গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এ যাবৎ দুটি চুক্তি হলেও বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী পানি পায়নি। চলমান ৩০ সালা চুক্তি বাংলাদেশের ন্যায্য পানিপ্রাপ্তির কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি। আগের চুক্তিতে যতটুকু নিশ্চয়তা ছিল, এ চুক্তিতে তাও নেই। ফলে পানিবঞ্চনা আরো বেড়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের খোলাখুলি বক্তব্য, “শুকনো মওসুমে তিস্তার পানি প্রবাাহ এত কমে আসে, যে, তা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রয়োজনই মেটে না, বাংলাদেশকে আমরা পানি দেবো কিভাবে?”
ভারত স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাংলাদেশকে ন্যায়সঙ্গতভাবে পানির হিস্যা দেবে, একথা আর এদেশের মানুষ বিশ্বাস করে না। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তির সর্বোচ্চ ও সর্বমুখী প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নদীগুলো নাব্য রাখা এবং পানির যে আকাল চলছে তা দূর করার বিকল্প উপায় বা পন্থাও গ্রহণ করতে হবে। ‘নদী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে,’ এটা নিরেট সত্য।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাপক ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনা এবং সব নদীকে পানি সংরক্ষণাগারে পরিণত করা অত্যাবশ্যক। একই সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণ করা দরকার। গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণের কথা এদেশের মানুষ দশকের পর দশক ধরে শুনে আসছে। ব্যারাজটি এখনও নির্মাণ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমান সরকারের তরফে গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণের কথা বার বার বলা হলেও এখন শোনা যাচ্ছে, ভারতের বিরোধিতার কারণে সরকার দ্বিধায় পড়ে গেছে। সরকার ভারতের সহযোগিতা নিয়ে গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণ চায় বলে জানানো হয়েছে। তাতেও কোনো ফলোদয় হয়নি।
ভারতের একতরফা পানি ছিনতাইয়ের প্রতিক্রিয়া মোকাবেলায় যে প্রকল্প, তার বাস্তবায়নে ভারত কিভাবে সহযোগিতা করতে পারে, সাধারণ মানুষের বিচারবুদ্ধিতে তা আসে না। অথচ সরকার ভারতের সহযোগিতার আশায় বসে আছে। তবে দেশে পত্রপত্রিকা টিভিতে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছে ফারাক্কার সব গুলি বাঁধ খুলে দেয়া হয়েছে কিন্তু এটা কোন সুখের খবর নয়, তারা বাংলাদেশের ইলিশ মাছ আহরণ ও বাঁধ সংস্কার করার জন্যই এটা করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার দেশের অবৈধ ভাবে দখল হয়ে যাওয়া নদীখোরদের নদীর পাড় দখল মুক্ত করছন এটা সত্যি প্রশংসার দাবীদার এবং ধন্যবাদও পাচ্ছেন সরকার। তাই এভাবে সময়ক্ষেপণের কোনো মানে হয় না।
এ ব্যাপারে সরকারকে অবশ্যই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং তা এখনই। গঙ্গা-পদ্মা অভিন্ন নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে, এ কথাটি আমরা স্পষ্ট করে বলতে পারিনা কেন ? আমাদের বলা উচিৎ নয় কি ?
মোঃ হায়দার আলী
প্রধান শিক্ষক
মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ল
গোদাগাড়ী, রাজশাহী।