মাদারীপুর,৬ ভাদ্র (২১ আগস্ট) :
মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিন চলবল খাঁ উচ্চ বিদ্যালয় ও দক্ষিন চলবল খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াতের কোন রাস্তা না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। বর্ষার মৌসুমে চলাচলের জন্য এক মাত্র ভরসা ডিঙ্গি নৌকা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর জেলায় ডাসার উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিন চলবল খাঁ উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৯৭ সালে এলাকার জনসাধারনের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিদ্যালয়টি সুনামের সহিত চলছে। ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষার মান অত্যান্ত ভাল। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে এবং বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত করা হয়েছ। পাশেই রয়েছে ৩৭ নং দক্ষিন চলবল খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি হরে কৃঞ্চ পাগলের আশ্রম।
এখানেও প্রায় দেড় শতাধিক ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করে আসছে। বিদ্যালয় দুটি ও হরে কৃঞ্চ পাগলের আশ্রমটি মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ সিমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। বিদ্যালয়টির পড়াশুনার মান ভাল থাকায় গোপালগঞ্জ এলাকার অনেক শিক্ষার্থীরাও দক্ষিন চলবল খাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে আসে।আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে আশ্রমে প্রাথর্না করার জন্য অনেক ভক্তদের সমাগম ঘটে। যাতায়াতের রাস্তা না থাকার কারনে প্রতিদিনই ছোট ডিঙ্গি নৌকা বেয়ে বিদ্যালয় যেতে হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। মাঝে মধ্যেই বিদ্যালয়টিতে যাতায়াতে সময় ঘটে দুর্ঘটনা। বর্ষা মৌসুমে ছোট ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে পারাপার করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা অনেক সময় পানিতে পড়ে গিয়ে কাপড়, বই ভিজিয়ে ফেলে। এতে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ারও শঙ্কা থাকে । বর্ষা মৌসুম ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময় শিক্ষার্থীরা জমির আইল দিয়ে আসতে গিয়ে ধান খেতে পড়ে বই, খাতা ভিজে যাওয়ার ও ঘটনা ঘটেছে অহরহ।
দক্ষিন চলবল খাঁ গ্রামটিতে প্রায় পনের শত লোকের বসবাস। তাদের হাট বাজারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে যেতে হয় নৌকায় চড়ে। তাই তাদের যাতায়াতের এক মাত্র মাধ্যমও ছোট ডিঙি নৌকা।
অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংগীতা বাড়ৈ, সজিব হালদার, প্রান্তি বিশ্বাস ও প্রত্যাশা বাড়ৈ বলেন, রাস্তা না থাকায় বর্ষাকালে আমাদের নৌকায় করে বিদ্যালয়ে আসতে হয়। অনেক সময় নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে বই-খাতা সব ভিজে যায়। বিদ্যালয়ের জন্য একটা রাস্তা নির্মাণ হলে আমাদের বিদ্যালয় আসতে অনেক সুবিধা হতো।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবক বীর মুক্তিযোদ্ধা ধীরেন্দ্র নাথ বাড়ৈ বলেন, আমরা এলাকায় যারাই বসবাস করি, তারা খুবই যাতায়াতের সমস্যায় আছি। নিম্ন এলাকায় রাস্তা যাও আছে, তা সামান্য বৃষ্টিতে ডুবে যায়। পরে নৌকাই আমাদের একমাত্র ভরসা। সব চেয়ে বেশী কষ্ট করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এখানে একটি
জরুরী রাস্তার প্রয়োজন।
দক্ষিন চলবল খাঁ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজন চন্দ্র হালদার বলেন, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়ে অদ্যবধি পর্যন্ত
অত্যান্ত শুনামের সাথে পাঠদান হয়ে আসছে। জেএসি ও এসএসসি পরিক্ষার ফলাফল শতভাগ পাশ। এখানে অত্যান্ত মান সম্মত শিক্ষা প্রদান করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, যাতায়াতের রাস্তার অভাবে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নৌকা বেয়ে বিদ্যালয় আসে, অনেক সময় নৌকা থেকে পরে বই খাতা ভিজে যায়। তাই নবগ্রাম মিশন বাড়ি থেকে দক্ষিন চলবল খাঁ উচ্চ বিদ্যালয় হয়ে সাবেক ইউপি সদস্য ভরৎ সরকারের বাড়ি এবং ভক্তবাড়ির ব্রীজ থেকে মেজর জয়ধর এর বাড়ির ব্রীজ পযর্ন্ত একটি রাস্তা খুবই প্রয়োজন। রাস্তা না থাকায় অনেক ভোগান্তি হয় এলাকার সাধারণ জনগনের, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। আর এ কারনেই অভিভাবকরা বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে দিতে চান না। বর্ষা মৌসুমে সমস্যা আরও বেশি হয়। ডিঙি নৌকা দিয়ে আসতে গিয়ে অনেক সময় পড়ে বই, খাতা ভিজে যাওয়ারও ঘটনাও ঘটছে। বর্তমানে সব শ্রেণি মিলিয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায়১৫০ জন।
হরে কৃঞ্চ পাগলের আশ্রমের সহ-সভাপতি বলেন, প্রতিবছর আশ্রমে অনেক বড় বড় অনুষ্ঠান হয়। দুরদূরান্ত থেকে অনেক ভক্তবৃন্দ আসে। কিন্তু রাস্তা না থাকায় আসা যাওয়ার অনেক সমস্যা। আমাদের দাবি সরকার যাহাতে খুবই দ্রুত একটি রাস্তা নিমার্ন করে দেন।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিন্টু লাল বালা বলেন, নবগ্রাম মিশন বাড়ি থেকে যে রাস্তাটি স্কুল পযর্ন্ত আছে, তাও ভাংঙ্গাচুরা চলাচলের উপযোগী না এবং নিচু হওয়ায় সামান্য বর্ষায় পানিতে ডুবে যায় এবং স্কুল থেকে ভরৎ সরকারের বাড়ি পযর্ন্ত কোন রাস্তা না থাকার কারনে চরম ভোগান্তিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ এলাকার জনসাধারন। ডিঙ্গি নৌকায় করে বিদ্যালয় আসতে হয় শিক্ষক শিক্ষার্থীদের। গত কিছু দিন আগে স্থানীয় এমপি ড.আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি দক্ষিন চলবল খাঁ বিদ্যালয় মাঠে একটি অনুষ্ঠান করে ছিলেন, তখন আমরা যাতায়াতের ভোগান্তির কথা বলেছি এবং তিনি আমাদের রাস্তা নির্মান করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।