মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ নদীগর্ভে সাবেক ইউপি সদস্যর বাড়িসহ প্রায় দুইশতাধিক বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। এতে করে সবকিছু হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ভাঙ্গন এলাকার কবলিত মানুষ। ইতোমধ্যে কয়েকশত একর বিভিন্ন প্রকার ফসলি জমিও নদীগর্ভে চলে গেছে। এদিকে নতুন করে ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে নদীর পাড়ের প্রায় শতাধিক পরিবার, বাজার, মসজিদ ও বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। যে কোন সময় রাক্ষুসী আড়িয়াল খাঁ নিয়ে যেতে পারে তাদের বাড়িঘর ও ফসলি জমি। আবার অনেকে বসতবাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে অন্যস্থানে আশ্রয় নিয়েছে। আজ রোববার সকালে সরোজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এ চিত্র। অপরদিকে নদী ভাঙ্গনের খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিংকি সাহা, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের, ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহিম মুরাদ ও ইউপি তহশিলদার রেবেকা সুলতানা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সরেজমিন ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রত্যন্তঞ্চল সাহেবরামপুর এলাকার পূর্ব সাহেবরামপুর লঞ্চঘাট ও নতুন আন্ডারচর গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে গেছে আড়িয়াল খাঁ নদী। বছরের পর বছর আড়িয়াল খাঁর তান্ডবে বিলীন হয়ে গেছে হাজারো বাড়িঘর। এ বছর নতুন করে আড়িয়াল খাঁ নদীগর্ভে চলে গেছে পূর্ব সাহেবরামপুর গ্রামের হিরন সরদার, সাহাদাত সরদার, জালাল সরদার, মজিবর বেপারী, আক্কাস আকন, মোয়াজ্জেম ফকির, সিরাজ ফকির, মোশারফ সরদার, শাহাবুদ্দিন সরদার ও সাবেক ইউপি সদস্য আদেল বেপারীর বসতঘরসহ প্রায় শতাধিক বাড়িঘর। এ ছাড়া নতুন করে বর্তমানে বসতবাড়ি
 ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে আলী সরদার, সবুজ সরদার, লতীফ সরদার, শাহীন সরদার, সজীব বেপারী, সুলতান বেপারী, স্বপন বেপারী, কালাম বেপারী, মন্টু সরদার, বাদশা হাওলাদার, আলিম সরদার, শাহাদাত সরদার, আজিজুল ফকির, সোহাগ ফকিরসহ শতাধিক বাড়িঘর। অপরদিকে বর্তমানে নুতন আন্ডারচর গ্রামের চানমিয়া সরদার, বজলু সরদার, কামাল হাওলাদার, বিউটি বেগম, হাচিনা বেগম ও দাদন সরদারের বাড়িঘর আড়িয়াল খাঁনদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে নতুন আন্ডারচর বঙ্গবন্ধু কলেজ, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নবারুন উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। ভাঙ্গন কবলিত মানুষ  তাদের ভিটামাটি হারিয়ে পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সাদিকুর রহমান ও হাচিনা বেগমসহ বেশ কয়েকজন বলেন, ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নেয়া হলে আমাদের পুরোগ্রাম নদীর পেটে চলে যাবে।
আন্ডারচর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আড়িয়াল খাঁ নদী বিগতদিনে হাজারো বসতবাড়ি কেড়ে নিয়েছে। বর্তমানে জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গন প্রতিরোধের ব্যবস্থা না করা হলে বাকি ফসলি জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোন ক্রমেই বাঁচানো সম্ভব হবে না।
সাহেবরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহিম মুরাদ সরদার বলেন, বর্তমানে আড়িয়াল খাঁ নদী পুর্ব সাহেবরামপুর গ্রাম ও লঞ্চঘাট এলাকার প্রায় ১৫ একর ফসলি জমি, এবং দুই শতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে নতুন করে দেড় কিলোমিটার এলাকারজুড়ে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে সকল ধরনের সহযোগিতা চাই।
মাদারীপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের বলেন, নদী ভাঙ্গন রোধে কাজ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিংকি সাহা বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। এবং ভাঙ্গন ঠেকাতে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।