আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ৪ ফাল্গুন (১৭ ফেব্রুয়ারি):
ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমাদের চলমান উত্তেজনার মধ্যেই মার্কিন নৌবাহিনী প্লেনের সঙ্গে রুশ যুদ্ধবিমান অন্তত তিনবার মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। চলতি সপ্তাহে ভূমধ্যসাগরে টহল দেওয়ার সময় দুই পক্ষের সামনাসামনি হওয়ার এসব ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে পেন্টাগন। এটিকে রাশিয়ার খুবই ‘অপেশাদার কাণ্ড’ বলে অভিযোগ করেছে তারা। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্যাপ্টেন মাইক কাফকা বলেছেন, মার্কিন নৌবাহিনীর পি-৮এ প্লেন ভূমধ্যসাগরের ওপর আন্তর্জাতিক আকাশসীমা দিয়ে উড়ছিল। এসময় সেটি রুশ এসইউ-৩৫ যুদ্ধবিমানের মুখোমুখি হয়।
চলতি সপ্তাহে তিনবার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে অন্তত দুবার রাশিয়ার যুদ্ধবিমান মার্কিন প্লেনের খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল। একবার তাদের দূরত্ব মাত্র পাঁচ ফুটে নেমে গিয়েছিল বলে দাবি করেছে পেন্টাগন। তবে এর সঙ্গে ওই এলাকায় রাশিয়ার বিশাল সামরিক মহড়ার কোনো যোগসূত্র রয়েছে কি না তা জানা যায়নি।
মার্কিন নৌবাহিনীর তথ্যমতে, বোয়িংয়ের তৈরি পি-৮এ প্লেনটি সাবমেরিনবিধ্বংসী, স্থলযুদ্ধের জন্যেও উপযোগী। এটিকে টহল দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন উদ্ধার অভিযানে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী।
কাফকা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে রুশ কর্মকর্তাদের কাছে উদ্বেগ জানিয়েছে। তিনি বলেছেন, এসব ঘটনায় কেউ আহত হননি। কিন্তু এ ধরনের ঘটনায় ভুল বোঝাবুঝি থেকে আরও বিপজ্জনক ফলাফল তৈরি হতে পারে।
পেন্টাগন বলেছে, আন্তর্জাতিক জলসীমা ও আকাশসীমায় আন্তর্জাতিক আইন মেনে নিরাপদে, পেশাগত ও সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে কাজ চালিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র। তারা আশা করছে, রাশিয়াও একই কাজ করবে।
ইউক্রেন ইস্যুতে সম্প্রতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাশিয়া-পশ্চিমা সম্পর্ক। টানা কয়েক সপ্তাহের উত্তেজনার পর চলতি সপ্তাহে রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ঘোষণা দিলেও সেটিকে মিথ্যা বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। তারা বলছে, রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তে সেনা কমানোর বদলে উল্টো বাড়িয়েছে। সেখানে যেকোনো দিন আক্রমণ হতে পারে। এ অবস্থার মধ্যেই ভূমধ্যসাগরে মার্কিন প্লেন ও রুশ যুদ্ধবিমান মুখোমুখি হওয়ার খবর সামনে এলো।
গত বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেনের কাছাকাছি দক্ষিণ ও পশ্চিম সামরিক জেলায় মহড়া শেষ হওয়ায় তাদের আরও সেনা ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রমাণস্বরূপ তারা একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যাতে দেখা যায়, বেশ কিছু ট্যাংক, সাঁজোয়া যান ও স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি ইউনিট ক্রিমিয়া থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
তবে এক জ্যেষ্ঠ পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তা দাবি করেছেন, রাশিয়ার চূড়ান্ত সামরিক মহড়া এখনো চলছে এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ আগ্রাসনের ঝুঁকি ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে থাকবে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, সামরিক উত্তেজনা কমার এখন পর্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য কোনো সংকেত নেই। রাশিয়া কোনো ধরনের সতর্কবার্তা দেওয়া ছাড়াই যেকোনো সময় ইউক্রেন আক্রমণ করতে পারে।
এদিকে, ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, সেনা প্রত্যাহারকে তারা স্বাগত জানাবেন। তবে সেনা ও ট্যাংকের নড়াচড়া মানেই এমনটি ঘটছে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তিনি বলেন, আমরা কোনো রুশ সেনা প্রত্যাহার দেখিনি। আমরা যা দেখছি তা হলো, তারা সৈন্য সংখ্যা বাড়িয়েছে এবং আরও সেনা সেই পথে রয়েছে। সুতরাং, এখন পর্যন্ত কোনো উত্তেজনা কমেনি।