আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে মুমিন বান্দাদের অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের দিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের মনে অবশ্যই এই ধারণা জন্মানো উচিত যে, যখন আল্লাহ্ কোন প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন তখন তিনি তা পূরণ করেই থাকেন, আর প্রতিশ্রুতি পূরণ করাই আল্লাহ্র সুন্নাহ।
‘আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ প্রতিশ্রুতির খেলাফ করেন না।’ (সূরা ঝুমার ২০)
কাজেই যখন কাউকে দেখা যায় যে সে দাবী করছে তার জীবনে আল্লাহ্র দেয়া ওয়াদা কার্যকর হয়নি, কিংবা আল্লাহর প্রতিশ্রুত সাহায্য এসে পৌঁছায়নি কিংবা ভবিষ্যতেও যদি না এসে থাকে তাহলে সেই ব্যক্তির জন্য অনুচিত কাজ হল আল্লাহ্র দেয়া ওয়াদার প্রতি সন্দেহ করা, আর উচিত কাজ হল তার নিজের ঈমানের প্রতি সন্দেহ পোষণ করা। এই সমসস্যা সৃষ্টি হয়েছে তার নিজের কারণে, কারণ যদি কেউ আল্লাহ্র প্রতি সত্যবাদী থাকে তাহলে আল্লাহও তার প্রতি সত্যবাদী থাকেন, আল্লাহ্র প্রতিশ্রুত ওয়াদায় কোন সমস্যা নেই, সমস্যা আমাদের ঈমানে।
এখানে ঈমানদারদের দেওয়া মহান আল্লাহর ২৫টি প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হলো।
১. জান্নাত ২. পরকালে বিশেষ আলো দান ৩. আল্লাহ মুমিনদের সঙ্গে থাকবেন: জেনে রেখ আল্লাহ রয়েছেন ঈমানদারদের সাথে।” (সূরা আনফাল ১৯)
৪. আল্লাহ্র পক্ষ হতে উদারতা, দয়া ও করুণা: “…আর আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহশীল”। (আলে ইমরান ১৫২)
৫. আল্লাহ্র পক্ষ হতে সুরক্ষা ও বন্ধুত্ব বা অভিভাবকত্ব ৬. আল্লাহর পক্ষ হতে করুণা- রহমত: “যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদেরকে তাদের পালনকর্তা স্বীয় রহমতে দাখিল করবেন। এটাই প্রকাশ্য সাফল্য”। (সূরা জাশিয়া ৩০)
৭. বিজয় : ‘মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব। (সুরা রুম: ৪৭ )
৮. গুনাহগুলো মুছে দেবেন : ‘আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদের মন্দ কাজ গুলো মিটিয়ে দেব এবং তাদেরকে কর্মের উৎকৃষ্টতর প্রতিদান দেব।’ (সুরা আনকাবুত: ৭)
৯. আল্লাহ ও মুমিন বান্দাদের ভালোবাসা প্রদান: “যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদেরকে দয়াময় আল্লাহ ভালবাসা দেবেন”। (মারিয়াম ৯৬)
১০. কোন প্রচেষ্টা বৃথা যাবে না: “যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার নষ্ট করি না”। (কাহফ ৩০)
১১. শয়তান হতে সুরক্ষা: ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তার (শয়তানের) আধিপত্য চলে না তাদের ওপর, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আপন পালন কর্তার উপর ভরসা রাখে।’ (সুরা নাহাল: ৯৯)
১২. অবিচলতা ও দৃঢ়তা: “আল্লাহ তা’আলা মুমিনদেরকে মজবুত বাক্য দ্বারা মজবুত করেন। পার্থিবজীবনে এবং পরকালে। এবং আল্লাহ জালেমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা, তা করেন”। (ইবরাহীম ২৭)
১৩. একটি শুভ সমাপ্তি: “যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের জন্যে রয়েছে সুসংবাদ এবং মনোরম প্রত্যাবর্তণস্থল”। (সূরা রাদ ২৯)
১৪. নিশ্চিত রক্ষা করবেন: ‘আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘অতঃপর আমি বাঁচিয়ে নেই নিজের রাসুলগণকে এবং তাদেরকে যারা ঈমান এনেছে এমনিভাবে। ঈমানদারদের বাঁচিয়ে নেওয়া আমার দায়িত্বও বটে।’ (সুরা ইউনুস: ১০৩)
১৫. হেদায়াত-পথ চলার নির্দেশনা: ‘পবিত্র কোরআনের সুরা ফাতিহা পড়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর হেদায়াতের দোয়া করি— ‘আমাদেরকে সরল পথ দেখাও।’ (সুরা ফাতিহা: ৫)
১৬. বারাকাহ-বরকত প্রদান: ‘বরকতময় তিনি, যিনি নভোমণ্ডলে তারকাপুঞ্জ সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে প্রদীপ ও দীপ্তিমান চাঁদ রেখেছেন।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৬৭)
১৭. শান্তি ওনিরাপত্তা: ‘যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শিরকের সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি এবং তারাই সুপথপ্রাপ্ত।’ (সুরা আনআম: ৮২)
১৮. ক্ষমা-মাগফেরাত: ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহান প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’ (সুরা মায়েদা: ৯)
১৯. পূর্ণমূল্য প্রদান: ‘পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের প্রাপ্য পরিপুর্ণভাবে দেওয়া হবে। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেন না।’ (সুরা আলে ইমরান: ৫৭)
২০. কোন ভয় নেই, কোন অবসাদ নেই: ‘নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎকাজ করেছে, নামাজ প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং জাকাত দান করেছে, তাদের জন্যে তাদের পুরষ্কার তাদের পালনকর্তার কছে রয়েছে। তাদের কোনো শঙ্কা নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।’ (সুরা বাকারা: ২৭৭)
২১. অন্ধকার হতে আলোতে আনয়ন: ‘যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরি করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোজখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে।’ (সুরা বাকারা: ২৫৭)
২২. আল্লাহ্ কখনোই কাফিরদেরকে মুসলমানদের উপর জয়ী হতে দেবেন না: “এবং কিছুতেই আল্লাহ কাফেরদেরকে মুসলমানদের উপর বিজয় দান করবেন না।” (নিসা ১৪১)
২৩. সুরক্ষা: ‘আল্লাহ মুমিনদের থেকে শত্রুদেরকে হটিয়ে দেবেন। আল্লাহ কোনো বিশ্বাসঘাতক অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা হজ: ৩৮)
২৪. একটি সুন্দর জীবন-হায়াতে তাইয়্যেবা প্রদান: “যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমাণদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত”। (নাহল ৯৭)
২৫. দুনিয়াতে কতৃত্ব দান-তামকিন: “তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকর্তৃত্বদান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে,যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার এবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে,তারাই অবাধ্য”। (সূরা নূর ৫৫)