যশোর প্রতিনিধি: নুরুজ্জামান মিন্টু :
যশোরে স্বামীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করে ফেঁসে গেছেন স্ত্রী। মিথ্যা জখমি সনদ দিয়ে মামলা করায় আদালত স্বামীকে তিন বছরের সশ্রম কারাদন্ড আদেশ দেন। দণ্ডপ্রাপ স্বামী ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যান। উচ্চ আদালতে জখমি সনদ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় স্বামীর সাজার আদেশ বাতিল ও বাদী স্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এরপর যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক সোমবার স্বামীকে খালাস দিয়ে বাদীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। এ নিয়ে আদালতপাড়ায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। স্ত্রী রাবেয়া আক্তার যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর পালপাড়ার একরাম আলীর মেয়ে। স্বামী আজম মাহমুদ যশোরের মণিরামপুর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের বজলুর রশিদের ছেলে। তিনি তখন কুষ্টিয়ার খোকসা থানায় এসআই পদে কর্মরত ছিলেন।আদালত সূত্র জানায়,২০১৯ সালের ১১ জুলাই রাবেয়া তার পুলিশ কর্মকর্তা স্বামীর বিরুদ্ধে যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এ মামলা করেন। তার অভিযোগ ছিল, বিয়ের পর থেকে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আসছিলেন আজম মাহমুদ। তিনি বিভিন্ন সময় ওই টাকার জন্য নির্যাতন করতেন বলে মামলায় উল্লেখ করেন স্ত্রী। মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ সালের ২৭ জুন আজম মাহমুদ স্ত্রী রাবেয়া আক্তারকে বেধড়ক মারপিট করে আহত করেন। এরপর শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করেন তার স্বামী। পরে রাবেয়াকে উদ্ধার করে তার স্বজনেরা যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তিনি দুই দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর হাসপাতাল থেকে জখমি সনদ সংগ্রহ করে মামলা করেন স্ত্রী রাবেয়া আক্তার। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। তদন্ত প্রতিবেদন আজম মাহমুদের বিপক্ষে আসে আদালতে। এরপর ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক নিলুফার শিরীন আজম মাহমুদকে তিন বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠান। ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন আজম। আপিলে জাল জখমি সনদ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়। ২০২২ সালের ১৪ জুন বিচারপতি এএনএম বশির উল্লাহ উভয়পক্ষের শুনানি শেষে নিম্ন আদালতকে বিষয়টি যাচাইয়ের নির্দেশ দেন। একই সাথে জখমি সনদ যদি জাল হয় তাহলে আসামির সাজার আদেশ বাতিল করে বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন। এটি করতে উচ্চ আদালত থেকে ছয়মাস সময় দেয়া হয়।
উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশ পেয়ে যশোরের নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক পিবিআইকে তদন্তের আদেশ দেন। জখমি সনদটি যে জাল ছিল সেটি পিবিআইয়ের তদন্তে প্রমাণিত হয়। ২০২২ সালের পহেলা ডিসেম্বর বিষয়টি আদালতকে অবহিত করে পিবিআই। এরপর গত ২৩ জানুয়ারি আদালত স্বামী আজম মাহমুদকে খালাস দিয়ে স্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেন স্বামীকে। আদালত থেকে আদেশ পেয়ে ২৯ জানুয়ারি স্ত্রীর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন স্বামী। এরপর আদালত স্ত্রী রাবেয়া আক্তারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ৩০ জানুয়ারি রাবেয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে একই বিচারক তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান।