ষ্টাফ রিপোর্টার :
যশোরে চেতনাশাক মেডিসিন দিয়ে বাড়ির সবাইকে অচেতন করে চুরির অভিযোগে একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ীসহ ৫জনকে আটক করেছে যশোর ডিবি পুলিশ এসময় তাদের কাছ থেকে ৭ ভরি স্বর্ণ, ৭ ভরি রূপার অলংকার ও সাড়ে ৩৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
যশোর ডিবি পুলিশের অভিযানে আটক আসামিরা হচ্ছে যশোর অভয়নগর উপজেলার বাগুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা বর্তমানে কেশবপুরের সাবদিয়া গ্রামের তাসলিমা বাড়ির ভাড়াটিয়া মাসুদ মোল্যার ছেলে তরিকুল ইসলাম, সদরের বিরামপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার খোরশেদ আলমের ছেলে আব্দুস সালাম বিষু, লালমনিরহাট জেলা সদরের দালালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বর্তমানে যশোর শহরের মুড়লী জোড়া মন্দির এলাকার রজব আলীর বাড়ির ভাড়াটিয়া মোহাম্মদ বক্সের ছেলে আল শরিফ গোপাল, ঝিকরগাছা উপজেলার রাজা ডুমুরিয়া গ্রামের শাহজাহান কবিরের ছেলে জাহিদ হাসান জনি এবং মণিরামপুর উপজেলা শহরের সুন্দরী জুয়েলার্সের মালিক তাহেরপুর গ্রামের সাধন চক্রবর্তীর ছেলে সুমন কুমার চক্রবর্তী।
যশোর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, রান্না ঘরে থাকা হলুদের সাথে চেতনা নাশক মিশিয়ে রেখে চলে যায়। আর ওই হলুদ দিয়ে রান্না তরকারি খেয়ে পরিবারের সব লোক অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর চোরচক্রের সদস্যরা ওই বাড়িতে প্রবেশ করে ঘরে থাকা টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন ধরণের মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট দেয়। এভাবে কেশবপুর, মণিরামপুর, ঝিকরগাছা, শার্শা ও সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় চক্রটি চুরি করে আসছিল।
এমনই ঘটনা ঘটে কেশবপুরের দোরমুটিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও খতিয়াখালী গ্রামের বাসিন্দা পবিত্র কুমার গোলদারের বাড়িতে। গত ১ জুন রাতে চক্রটি ঘরের গ্রীল কেটে প্রবেশ করে। সেখান থেকে ৯ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করে নেয়। ৫ জুন এই ঘটনায় কেশবপুর থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী পবিত্র কুমার গোলদার।
এই রকম একাধিক ঘটনার খবর পেয়ে বিষয়টি গুরুত্বে সাথে দেখেন জেলা পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার। ফলে এই ঘটনা উদঘাটনে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ দায়িত্ব দেয়া হয়। তারই সূত্র ধরে গত ১২ অক্টোবর ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলামের উপর দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর পুলিশ ১৮ ও ১৯ অক্টোবর কেশবপুর, মণিরামপুর, শার্শা ও ঝিকরগাছা উপজেলার বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে চারজনকে আটক করে। এরপর তাদের হেফাজত থেকে চেতনা নাশক ঔষধ ও হলুদের গুড়া জব্দ করা হয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তিতে মণিরামপুরের স্বর্ণপট্টিতে অভিযান চালিয়ে সুন্দরী জুয়েলার্সের মালিক সুমন কুমার চক্রবর্তীকে আটক ও তার দোকান থেকে ৭ ভরি ৩ আনা স্বর্ণের ও ৭ ভরি রূপার অলংকার এবং ৩৩ হাজার ৫শ’ টাকা উদ্ধার করা হয়।

*যশোরে মাছ ধরতে এসে খুলনা খালিশপুরের এ্যান্টনির মৃত্যু*
যশোর সদর উপজেলার দাইতলা খালে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন চার বন্ধু। পাড় থেকেই তারা জাল দিয়ে মাছ ধরছিলেন। ওইসময় পা পিছলে খালে পড়ে যান একজন। তাকে বাঁচাতে আরেক বন্ধু হাত বাড়িয়ে দেন। কিন্তু তাদের দু’জনের কেউই সাঁতার জানতেন না। দু’ বন্ধু যখন পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন ঠিক তখনই আরেক বন্ধু।
তাদের দু’জনকে বাঁচাতে খালে ঝাঁপ দেন। একজনকে বাঁচাতে পারলেও আরেকজনকে আর খুঁজে পাননি তিনি। এমনকি স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তার সন্ধান পাননি। শেষমেষ খুলনা থেকে স্পেশাল ডুবুরি দল এসে ওই বন্ধুর লাশ উদ্ধার করে।
মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে বুধবার দুপুরে যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের দাইতলা খালে। মৃত অ্যান্টনি বাড়ি খুলনার খালিশপুর জয়ন্তীপাড়া জংশন রোডের যতীন্দ্র বাড়ির ছেলে। তিনি যশোরের একটি এনজিওতে চাকরি করতেন। ডুবে যাওয়ার খবর শুনে হাজারো মানুষ ছুটে আসে দাইতলা খালপাড়ে। তাদের কেউ কেউ উদ্ধার করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
অ্যান্টনির সাথে থাকা বন্ধু ফেরদৌস হাসান জানান, বুধবার দুপুরে অ্যান্টনি, মেহেদী হাসান, আহসান ও তিনি দাইতলা খালে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর অ্যান্টনি ও আহসান খালে পড়ে যান। আহসানকে খাল থেকে উঠাতে পারলেও অ্যান্টনিকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অ্যান্টনি বাঁচার জন্য হাত তুলে আকুতি জানান। তারা তাৎক্ষণিক কয়েকজন তাকে বাঁচাতে খালে ঝাঁপ দেন। কিন্তু তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে ৯৯৯ এ কল করা হয়। তখন যশোর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখানে গিয়ে অ্যান্টনিকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। পরে খুলনা থেকে স্পেশাল ডুবুরি দল এসে অ্যান্টনির মরদেহ উদ্ধার করে।
ফায়ার সার্ভিস যশোরের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আজিজুল হক জানান, দুপুর ২টা ২০ মিনিটে খবর পান তারা। এরপর ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। বিকেল চারটার পর খুলনা থেকে বিশেষ ডুবুরি দল এসে মরদেহ উদ্ধার করে।
সন্ধ্যার পর চাঁদপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা অ্যান্টনি বাড়ির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।