ঢাকা, ১৯ আশ্বিন (৪ অক্টোবর ) :
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ বলেছেন, দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, দেশের গণমাধ্যম শিল্পের স্বার্থে আমরা আইন অনুযায়ী বিদেশি চ্যানেলের বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার বা ক্লিনফিড বাস্তবায়নের কাজ করছি। সুতরাং দেশ ও সবার স্বার্থের বিপক্ষে কেউ অবস্থান গ্রহণ করবেন বা তাদের পক্ষে কেউ ওকালতি করবেন এটি কখনো কাম্য নয়।
আজ দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মালিকদের সংগঠন এসোসিয়েশন অভ টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (এটকো) প্রতিনিধিবৃন্দ ক্লিনফিড বাস্তবায়নের পদক্ষেপের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে এলে মন্ত্রী তাদের বৈঠক শেষে একথা বলেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মকবুল হোসেন এসময় উপস্থিত ছিলেন। এটকো সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী, সিনিয়র সহ–সভাপতি মোজাম্মেল হক বাবু, ডিবিসি২৪ চ্যানেলের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সময় টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জোবায়ের, দীপ্ত টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহিদুল হাসান, দেশ টেলিভিশনের উপ–ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান, ডিবিসি২৪ চ্যানেলের প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ বৈঠকে যোগ দেন।
মন্ত্রী দেশের সকল গণমাধ্যম, শিল্পী–কলাকুশলীকে এ আইনের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, ‘আইন অনুযায়ী বিদেশি চ্যানেলের বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার বা ক্লিনফিড বাস্তবায়নের জন্য সকল পক্ষের সাথে দুই বছর আগে থেকে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে এবং আগস্ট মাসের বৈঠকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ছিল যে
১ অক্টোবর থেকে আমরা এই আইন কার্যকর করবো। কিন্তু এটি নিয়ে একটি মহল থেকে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা হয়েছে। আমি আশা করবো এই বিভ্রান্তি ছড়ানো থেকে তারা বিরত থাকবে। সরকার আইন বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর এবং প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে সাহস না জোগালে আমরা এ কাজগুলো কখনো করতে পারতাম না।’
বাংলাদেশের আকাশ উন্মুক্ত, বাংলাদেশে কোনো চ্যানেল সরকারের পক্ষ থেকে বন্ধ করা হয়নি, বন্ধ করতেও বলা হয়নি’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, আমাদের দেশের চ্যানেলগুলো ভালো অনুষ্ঠান প্রচার করতে পারে এবং অনেকেই করে। যে সমস্ত বিদেশি চ্যানেল আমাদের আইনকে তোয়াক্কা করে না, আমাদের আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে, আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতিকে চোখ রাঙায় সেগুলোর পক্ষে ওকালতি করা সমীচীন নয় বলে আমি মনে করি। অবশ্যই সব চ্যানেলের জন্যই আমাদের দ্বার উন্মুক্ত। কিন্তু আইন মেনে দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করে সেই চ্যানেল সম্প্রচার হতে হবে।
বিদেশি চ্যানেলের পরিবেশক ও ক্যাবল অপারেটরদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, যে সমস্ত বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে ক্লিনফিড দেয়, আকাশ ডিটিএইচ এগুলো চালাচ্ছে। অন্যরাও যদি এগুলো না চালায় তাহলে লাইসেন্সের শর্তভঙ্গ হবে। সুতরাং শর্তভঙ্গের কাজ কেউ করবেন না।
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘বিদেশি চ্যানেলগুলো পাকিস্তানে, নেপালে, শ্রীলংকায় ক্লিনফিড পাঠায়। আর ক্লিনফিড পাঠানোর জন্য যে বড় রকমের বিনিয়োগ ও কারিগরি সুবিধা লাগে এসব কথামালা বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টারই অংশ। এখন ডিজিটাল প্রযুক্তিতে এগুলো সহজেই করা সম্ভব এবং সেটি সংশ্লিষ্ট চ্যানেল করতে পারে। এই দায়িত্ব প্রথমত সংশ্লিষ্ট চ্যানেলের, দ্বিতীয়ত যারা সেই চ্যানেল ডাউনলিংক করার অনুমতি নিয়েছেন, তাদের। তারা ব্যবসা করার স্বার্থেই এই সমস্ত চ্যানেল ডাউনলিংক করার জন্য অনুমতি নিয়েছেন এবং লাইসেন্স দেয়ার সময় ক্লিনফিডের শর্তের কথা বলা আছে। ক্যাবল অপারেটররাও সেই শর্তের কথা মেনেই তারা লাইসেন্স নিয়েছেন। এবং এমন নয় যে, তারা ছাড়া বাংলাদেশে আর কেউ ক্যাবল অপারেটরের লাইসেন্স চায় না। আমাদের কাছে বহু ক্যাবল অপারেটরের লাইসেন্সের দরখাস্ত জমা পড়েছে। আমরা সেগুলো পরীক্ষা–নিরীক্ষা করছি। সুতরাং আইন ভঙ্গ করলে, শর্তভঙ্গ করলে বা বিভ্রান্তি ছড়ালে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সভায় মন্ত্রী আরো বলেন, ক্যাবল অপারেটরবৃন্দসহ সবপক্ষকে নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি ১ নভেম্বর থেকে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে ক্যাবল অপারেটিং সিস্টেমকে তারা ডিজিটালাইজ করবে। আমি আশা করবো এই সময়সীমা সবাই অনুসরণ করার চেষ্টা করবেন। আমি আশা করবো সবাই দেশের স্বার্থ এবং আইন মানাকে তুলে ধরবেন।
তথ্যসচিব মোঃ মকবুল হোসেন জানান, ‘আমি দেশের সকল জেলার ডেপুটি কমিশনারদের সাথে ভিডিও কনফারেন্স করেছি, ক্লিনফিড আইন বাস্তবায়নে সরকার প্রস্তুত আছে।’
বৈঠকে এটকোর সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী বলেন, ক্লিনফিডের বিষয়টি আমাদের প্রাণের দাবি। ২০০৬ সালে বাস্তবায়নের জন্য আইন করা হলেও সেটি বাস্তবায়ন করা যায়নি। সবাইকে চিন্তা করতে হবে দেশের জন্য ভালো কোনটি। সারা পৃথিবীতে ক্লিনফিডের বিষয়টি রয়েছে। এর ফলে প্রচুর অর্থ দেশ থেকে চলে গেছে। এখন শুধু টেলিভিশন মালিকরা লাভবান হবে না, পুরো দেশ লাভবান হবে।
এর আগে ডিবিসি২৪ চ্যানেলের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ক্যাবল অপারেটরদের ওপর নির্দেশ ছিলো যেসব চ্যানেলের ক্লিনফিড আছে, সেগুলো চলবে। কিন্তু সব চ্যানেল বন্ধ করে দিয়ে তারা বিদেশের কাছে ভুল বার্তা দিয়েছে।
এটকোর সিনিয়র সহ–সভাপতি মোজাম্মেল হক বাবু বলেন, টিআরপির ক্ষেত্রে নৈরাজ্য চলছিলো। কোনো অনুমতি ছাড়া একটি প্রতিষ্ঠান টিআরপি করছিলো। তারা কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতো। এটি বন্ধ করার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের জন্যও মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।