সবুজ বাংলাদেশ প্রতিনিধি : ১১ অক্টোবর ২০২২,
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর এলাকার সুজাপুরে লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষ্যে সোমবার বিকালে এবারও ব্যাপক নারীর সমাগমে বসেছিল ৬৩ বছরের ঐতিহ্যবাহী বউমেলা। এ মেলায় শুধু নারীরাই ক্রেতা। নারীরা মেলায় থাকাকালীন মেলায় ঢুকতে পারেন না কোনো পুরুষ। এমনকি কারও জামাইকেও প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না নারীরা মেলায় থাকাকালীন।
ঐতিহ্যবাহী সুজাপুর সর্বজনীন দুর্গামন্দির চত্বরে শিশু আর নারীদের জন্য আয়োজিত এ মেলা চত্বরের আশপাশে বিপুলসংখ্যক পুরুষ ভিড় জমালেও থাকে না তাদের মেলায় প্রবেশের কোনো অনুমতি। বিক্রেতার মধ্যে পুরুষ থাকলেও শিশু ও নারী ক্রেতাদের নিয়ে জমে উঠেছিল দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী এ বউমেলাটি। তবে মেলা থেকে নারীরা বেরিয়ে আসার পর সন্ধ্যায় ভাঙা মেলায় প্রবেশের অনুমতি পান পুরুষরা।
সরেজমিন দেখা যায়, সকাল থেকেই ত্রিপল ও শামিয়ানা টাঙিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন দোকানিরা। নারীদের প্রসাধনসামগ্রীই মেলার প্রধান উপজীব্য হলেও ছোটদের খেলনাসামগ্রী, গৃহস্থালির নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ রকমারি মুখরোচক খাবারও ছিল। বিকাল গড়িয়ে এলে সেখানে ভিড় জমতে শুরু করেন বিভিন্ন বয়সি নারী ও শিশুদের।
বউমেলায় কেনাকাটা করতে আসা সান্ত্বনা রানী, পিংকি গুপ্তা, স্নিগ্ধা, সুমিত্রা রানীসহ স্থানীয় নারীরা বলেন, ‘লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষ্যে প্রতি বছর এ ঐতিহ্যবাহী বউমেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় শুধু নারীরাই ক্রেতা, আবার অনেক দোকানে নারীরাই বিক্রেতা হওয়ায় নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ানোসহ কেনাকাটা করা যাচ্ছে। এ যেন অন্য রকম আনন্দ। প্রতি বছর বহু আত্মীয়স্বজন আসে বাড়িতে। এ মেলাটি উপভোগ করতে।’
দোকানিরা জানান, ‘মেলার ক্রেতা যেহেতু নারীরাই; তাই প্রসাধনীসামগ্রীই বিক্রি হয় বেশি। নারীদের প্রসাধনীর পাশাপাশি শিশুদের খেলনার বিক্রিও ভালো বলে জানান তারা।’
মেলার আয়োজক সুজাপুর সার্বজনীন দুর্গামন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি অশেষ রঞ্জন দাস, সহসভাপতি স্বপন সরকার, সাধারণ সম্পাদক গৌচন্দ্র সরকার ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুজন সরকারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল মেলায়। অশেষ রঞ্জন দাস বলেন, ‘লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষ্যে বছরের পর বছর ধরে আয়োজন করা হচ্ছে বউমেলার। এটি বেশ পুরনো একটি মেলা। জমিদার বিমল বাবুর সময় দীর্ঘ ৬৩ বছরের বেশি সময় থেকে মেলাটি শুরু হয়। তিনি লক্ষ্মীপূজার পর দিন এক মেলার আয়োজন করেছিলেন। আজও মেলাটি চলছে। মেলাটি শুধু নারীদের জন্যই। তাই মেলায় পুরুষের প্রবেশ নিষেধ। মেলায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি মন্দিরের স্বেচ্ছাসেবক দল সার্বিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকে। সবার প্রচেষ্টায় সুষ্ঠু ও আনন্দমুখর পরিবেশে মেলাটি সম্পন্ন করা হয়েছে।