পবিত্র রমজান মাস শুরুর কয়েক দিন আগে থেকে মাছ, মাংস, লেবু, বেগুন, শসাসহ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। রোজার সময় এসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকায় বিক্রেতারা আগে থেকে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। ইফতারের সময় লেবুর শরবতের চাহিদা বেশি থাকার এই নিত্যপণ্যেরও দাম বেড়েছে। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।
তবে রোজার ভোগ্যপণ্য হিসেবে পরিচিত ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, চিনির বাজার স্থিতিশীল। রোজা ঘিরে পর্যাপ্ত আমদানি হলেও বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব তথ্য দেখা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে বেগুন প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১২০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
শসা প্রতি কেজি ৭০ থেকে ১০০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সবচেয়ে বেশি লেবুর দাম। এক মাস আগেও লেবুর হালি ছিল ২০ থেকে ৩০ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকায়। উন্নতজাতের লেবুর হালি ১২০ টাকা।
সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগি দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা এবং গরু ও খাসির মাংসের দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।
নিত্যপণ্যের দাম প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘গত রমজান মাসের চেয়ে এই রমজানে বেশির ভাগ পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে, দাম কমেছে। পুরো রমজানে আমাদের ফোকাস থাকবে দামটিকে কিভাবে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়।’
গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। শফিকুল আলম বলেন, ‘রোজার সময় কিছু নিত্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়, বিশেষ করে ভোজ্যতেলের।
ছোলা, খেজুরেরও চাহিদা বাড়ে। প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারের ফোকাস হচ্ছে কিভাবে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়। এর জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক, ট্যারিফ কমিশন। সবার সম্মিলিত প্রয়াসে আজ আমরা বলতে পারি যে অনেক পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘ভোজ্যতেলের সরবরাহ বাড়াতে কাজ করা হচ্ছে। আমরা প্রতিদিন মনিটর করছি কত টন তেল আমদানি হচ্ছে। তাতে আমরা মনে করছি যে সরবরাহ পরিস্থিতি সামনে আরো ভালো হবে।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘সয়াবিন তেলের সরবরাহ পরিস্থিতি আমরা প্রতিনিয়ত মনিটর করছি। আপনারা এর মধ্যে দেখেছেন খোলা সয়াবিন তেলের দাম একটু কমতে শুরু করেছে এবং আশা করছি, সামনে সরবরাহ পরিস্থিতি আরো ভালো হলে দাম আরেকটু ভালো জায়গায় যাবে।’
রংপুর :
রোজার শুরুতেই পাঁচ পণ্য নিজেদের কবজায় নিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। গত তিন দিনের তুলনায় দাম বেড়েছে মুরগি, গরু, খাসি, লেবুর। বাড়তি রয়েছে শসা ও বেগুনের দামও। তবে রোজার পণ্য হিসেবে পরিচিত খেজুর, ছোলা, চিড়া, মুড়ি ও গুড়ের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই নিত্যপণ্যের এই দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।
গতকাল রংপুর সিটি বাজার, ধাপ বাজার, কামাল কাচনা, লালবাগ ও মাহিগঞ্জ বাজার ঘুরে এই দৃশ্য দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজা শুরু হতেই ভোক্তারা বেশি করে বাজার করছেন। বাড়তি চাহিদার কারণে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। কারণ চাহিদার তুলনায় পণ্যের সরবরাহ কম।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ২০-২৫ টাকা বেড়েছে। গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০-২১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১৮০-২০০ টাকা। সোনালি মুরগির দাম বেড়ে ৩০০-৩১০ টাকা হয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, রোজার শুরুতে বেশি সংখ্যায় ক্রেতারা মুরগি কেনেন, এ কারণে দাম বাড়ার প্রবণতা রয়েছে।
মুরগির পাশাপাশি বেড়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। গতকাল বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ছিল ৭৫০ টাকা। যা তিন দিন আগেও ছিল ৭১০ থেকে ৭২০ টাকা। কেজিতে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়েছে খাসির মাংসের দাম। গতকাল এক কেজি খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা।
চাষের চিংড়ি, কই, শিং, তেলাপিয়া, রুই ও পাঙাশ মাছের দাম কেজিতে ২০-৫০ টাকা বেড়েছে। বাজারে আলু, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন সবজির দাম আগের মতো স্থিতিশীল রয়েছে।
সাধারণত রোজার সময় লেবু, বেগুন ও শসার চাহিদা বেশি থাকে। বাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত তিন দিনের ব্যবধানে প্রতি ডজন ৩০ টাকা বেশি দামে লেবু বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানের লেবুর হালি ছিল ২০-৪০ টাকা, যা গতকাল ৪০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর বড় লেবু বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, সেই লেবু এখন ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা।
রংপুর ভোক্তা অধিকারের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা নিয়মিত বাজার মনিটর করছি। কোনো কারণ ছাড়া কোনো ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বৃদ্ধি করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কুমিল্লা :
কুমিল্লায় রমজানে নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। গত দুদিনের ব্যবধানে পাঁচ গুণ বেড়েছে লেবু ও শসার দাম। রমজান উপলক্ষে বাজার সিন্ডিকেট এসব পণ্য মজুদ করে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি দামে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ ভোক্তাদের। এ ছাড়া বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল নিয়ে শুরু হয়েছে তুঘলকি কাণ্ড। বেশি দামে বিক্রির আশায় বাজার থেকে সয়াবিন তেল সরিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে একটি চক্র।
সরেজমিনে নগরীর নিউ মার্কেট, বাদশা মিয়ার বাজার, রানীর বাজার, রাজগঞ্জ, চকবাজার টমছমব্রিজসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এসব তথ্য দেখে গেছে।
নিউ মার্কেটের ক্রেতা মোসলেম উদ্দিন ও আবদুল জলিল মিয়া জানান, বাজারে লেবু ও শসার দাম পাঁচ গুণ বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। সিন্ডিকেট করেই এসব করা হচ্ছে। প্রশাসনের তেমন কোনো নজরদারি নেই।