রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলী : দীর্ঘ ৫ বছর কারাদন্ডের পর পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া চার আসামি হাইকোর্টে খালাস পাওয়ার পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টায় রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তারা।
মুক্তি পাওয়া চারজন হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র মোখলেসুর রহমান ওরফে বাবলু, জেলা বিএনপির সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক কে এম আখতারুজ্জামান, পৌর বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সভাপতি আজিজুর রহমান ওরফে শাহীন এবং বিএনপির স্থানীয় নেতা শামসুল আলম।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতের রায়ে ওই মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ৯ জনসহ ৪৭ আসামির সবাইকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ মামলার চারজন ফাঁসির আসামি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে বন্দী ছিলেন। হাইকোর্টের আদেশ কারাগারে পৌঁছানোর পর মঙ্গলবার তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
এই নেতাদের মুক্তি উপলক্ষে সকাল থেকেই ঈশ্বরদী থেকে গাড়িবহর নিয়ে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে এসে অপেক্ষা করতে থাকেন। নেতাদের মুক্তির কিছুক্ষণ আগে কারাগারের সড়ক সংলগ্ন ফটকটি খুলে দেওয়া হয়। তখন নেতাকর্মীরা কারাগারের সীমানার ভেতরে ঢুকে পড়েন। কারাগারের প্রধান ফটক থেকে চারজন বের হলে তাদের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় চারপাশ।
উল্লেখ্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকাকালে পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে তাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ঈশ্বরদী রেলওয়ে পুলিশ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে তৎকালীন ছাত্রদল নেতা ও ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ সাতজনকে আসামি করেন। পরের বছর পুলিশ কোনো সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র জমা দেয়। তখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু আদালত সে অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে অধিক তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিতে পাঠান। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মামলাটির পুনঃতদন্ত হয়। ১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল পুলিশ ঈশ্বরদীর বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীসহ ৫২ জনের নামে আদালতে আবার অভিযোগপত্র জমা দেয়।
এরপর ২০১৯ সালের ৩ জুলাই রায় দেন পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. রুস্তম আলী। রায়ে ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ৪৭ আসামির সবাইকে খালাস দেন হাইকোর্ট।
মোঃ হায়দার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক,
রাজশাহী।