রাশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের পাঠানো অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের নমুনা পরীক্ষা শুরু করেছে চট্টগ্রামে অবস্থিত দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল শোধনাগার প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) ৫০ লিটার জ্বালানি তেলের নমুনা ইস্টার্ন রিফাইনারির কাছে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এর আগে বুধবার তেলের নমুনা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছায়।

ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান  বলেন, ‘বৃহস্পতিবার নমুনা পেয়েছি। এরই মধ্যে আমরা ল্যাবে পরীক্ষা শুরু করে দিয়েছি। এই তেল পরিশোধন করা সম্ভব হবে কি না, তা জানতে অনেকগুলো পরীক্ষা করতে হবে। এজন্য এক সপ্তাহ সময় লাগবে।’

ইস্টার্ন রিফাইনারি সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটি এতদিন মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন করে আসছিল। রাশিয়ার তেল এর আগে পরিশোধন করা হয়নি। তাই ইস্টার্ন রিফাইনারির প্ল্যান্টে এই তেল পরিশোধন করা যাবে কিনা, তা নিশ্চিত হতে ৭-৮টি পরীক্ষা করতে হবে।

সূত্রটি জানায়, স্পেসিফিক গ্র্যাভিটি, ডেনসিটি, ডিসপ্লেশন, ডিসকোয়ালিটি, সালফার কনটেন্ট, ডিএনসিবি ও হাইড্রোজেন কনটেন্টসহ বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো উপাদানের উপস্থিতি বা স্ট্যান্ডার্ড মাত্রার তারতম্য হলে তার আরও নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। এসব পরীক্ষার পর জানা যাবে এ তেল আমাদের দেশে ব্যবহার উপযোগী কিনা।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দেয়। ইতোমধ্যে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বের তেলসমৃদ্ধ বিভিন্ন দেশ থেকে কম মূল্যে তেল আমদানির চেষ্টা শুরু করে সরকার। সংকটময় পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার চীন, ভারতসহ কয়েকটি দেশ তেল নিচ্ছে রাশিয়া থেকে। গত মে মাসে বাংলাদেশকেও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাব দেয় দেশটি।

তবে রুশ তেল দেশে ব্যবহার-উপযোগী নয় বলে প্রথম দফায় তা নাকচ করে দেয় বাংলাদেশ। এর কারণ হিসাবে বলা হয়, রাশিয়ার তেলে সালফারের পরিমাণ বেশি থাকায় তা পরিশোধন করতে হয়। এতে খরচ বেশি পড়ার শঙ্কা রয়েছে। নমুনা হিসাবে নিয়ে আসা ৫০ লিটার তেল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে খরচের বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে।

বিপিসির একটি সূত্র জানায়, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হবে কিনা তা নির্ভর করবে মূলত দুটি বিষয়ের ওপর। একটি হলো, দেশটি তুলনামূলক কত কম মূল্যে তেল দিতে পারছে। অপরটি হলো- এই তেল পরিশোধন ব্যয় কেমন হবে। নমুনা পরীক্ষার পর এ বিষয়ে মোটামুটি একটি ধারণা পাওয়া যাবে।

সূত্র মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর নানা নিষেধাজ্ঞার মুখে রাশিয়ার জ্বালানি তেল সরবরাহকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশসহ বেশ কিছু দেশের কাছে সহজ শর্তে জ্বালানি তেল বিক্রির প্রস্তাব দেয়। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের ৫০ লিটার নমুনা কয়েকদিন আগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।