১৬ ডিসেম্বর, ২০২২:

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে যে তারা বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য তৃতীয় দেশের পুনর্বাসন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং গত সপ্তাহে ঢাকার অনুরোধের প্রতীকী সাড়া হিসেবে তাদের মধ্যে ২৪ জনকে গ্রহণ করেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের কার্যালয়ের বরাত দিয়ে মার্কিন দূতাবাস থেকে বিতরণকৃত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) সহযোগিতায় ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের জন্য একটি পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণের ঘোষণা দিতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র আনন্দিত।

মিডিয়া নোটে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউএনএইচসিআর এর দেওয়া পুনর্বাসন দিক নির্দেশনা বিবেচনা করবে।

 

এতে বলা হয়, এই উদ্যোগটি বৈশ্বিক মার্কিন শরণার্থী গ্রহণ কর্মসূচিরই অংশ হবে। এটি হবে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের ব্যাপারে ব্যাপকভিত্তিক সাড়ার অন্যতম পদক্ষেপ, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত করা।

নোটে বলা হয়েছে, আমরা শরণার্থীদের একটি উদার আশ্রয়দাতা দেশ হিসেবে এবং এই গুরুত্বপূর্ণ পুনর্বাসন উদ্যোগে সমর্থনের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।

মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে এবং এই নৃশংসতার শিকার ব্যক্তিদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতেও সমর্থন দিচ্ছে।

নোটে আরও বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শিকার হওয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দীঘস্থায়ী সমর্থনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত। আমরা বার্মা থেকে বাংলাদেশে ও এ অঞ্চলে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী, বার্মায় চলমান সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের জন্য ১৯০ কোটি ডলারেরও বেশি মানবিক সহায়তা প্রদান করেছি। তাৎক্ষণিক মৌলিক চাহিদাগুলোকে সমর্থন করার পাশাপাশি, নোটে উল্লেখ করা হয়েছে যে ইউআইএস মানবিক সহায়তা শিক্ষা ও জীবিকার সুযোগের উন্নতির মাধ্যমে রোহিঙ্গা এবং ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় সম্প্রদায়ের  অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং মর্যাদাকে শক্তিশালী করে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এর আগে মার্কিন পুনর্বাসন প্রচেষ্টাকে ‘সমুদ্রে এক ফোটা’ হিসেবে তুলনা করেন কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঢাকাকে জানিয়েছিল যে এটি প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে কিছু রোহিঙ্গা নেবে এবং তাদের মধ্যে মাত্র ৬২ জনকে প্রথম ব্যাচের জন্য বাছাই করবে। মোমেন তখন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার জন্য বাংলাদেশের বোঝা ভাগ করে নিতে ব্রিটেন ও জাপানকেও আহ্বান জানিয়েছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদকর্মীদের বলেছেন যে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যে এই দেশগুলোর প্রত্যেকটি ২০১৭ সালে সামরিক-সমর্থিত জাতিগত দমন-পীড়নের মধ্যে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে থেকে অন্তত এক লাখকে নিতে পারে। বারবার পীড়াপীড়ি করা সত্বেও মিয়ানমার এখন পর্যন্ত তাদের আশ্বাস অমান্য করে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলায় ১২ লাখেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদান করছে এবং তাদের বেশিরভাগই মিয়ানমারের সামরিক অভিযানের পরে সেখানে পৌঁছেছে, একে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নির্মূলের জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে এবং অন্যান্য মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো ‘গণহত্যা’ হিসাবে অবিহিত করেছে।

যখন মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের চেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়, তখন থেকে বাংলাদেশ সরকার উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে তারা যেন বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে তৃতীয় দেশের পুনর্বাসন হিসেবে গ্রহণ করে।

সূত্র : বাসস