জেনেভা, ১৩ জুলাই :
অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পক্ষে জবাবদিহিতা ও
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং বাংলাদেশে আশ্রিত জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের
মিয়ানমারে দ্রুত পুনর্বাসনের মাধ্যমে চলমান রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করা সম্ভব। এ
প্রেক্ষিতে, গতকাল জেনেভায় মানবাধিকার পরিষদের ৪৭-তম অধিবেশনে রোহিঙ্গা
সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের পর জেনেভাস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কূটনৈতিক
প্রচেষ্টায় এই প্রথম কোন প্রস্তাব বিনা ভোটে জাতিসংঘে গৃহীত হলো। সেই বিবেচনায়
এবারের প্রস্তাবটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় মাইলফলক।
মানবাধিকার পরিষদের চলমান অধিবেশনে বাংলাদেশের উদ্যোগে ইসলামিক সম্মেলন
সংস্থা (ওআইসি)-এর সকল সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের
অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি শীর্ষক প্রস্তাবটি পেশ করা হয়।
মিয়ানমারের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে শুরু থেকেই প্রস্তাবের
বিভিন্ন বিষয়ে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে প্রবল মতভেদ পরিলক্ষিত হয়।
অবশেষে, নিবিড় ও সুদীর্ঘ আপস-আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি গতকাল জাতিসংঘ মানবাধিকার
পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
প্রস্তাবটির ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জেনেভাস্থ জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের
রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মানবিক বিবেচনায়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মম নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের
সীমানা উম্মুক্ত করে দেন। তবে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, গত চার বছরেও
মিয়ানমারের অসহযোগিতা ও অনীহার কারণে অদ্যাবধি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের
প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি।
রাষ্ট্রদূত রহমান আরো বলেন, জাতিসংঘের আলোচ্যসূচিতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান
ও রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার সুরক্ষার বিষয়টি সক্রিয় আলোচনায় রাখা প্রয়োজন। কেবল
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিশ্ব সম্প্রদায়ের রোহিঙ্গাদের
প্রতি মনোযোগ হারানো উচিত হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি জোরপূর্বক
বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পূর্ণ নিরাপত্তা ও সম্মানের সাথে নিজেদের আবাসস্থলে
ফেরত পাঠানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দৃশ্যমান ও কার্যকর ভূমিকা রাখার
আহ্বান জানান।
প্রস্তাবটিতে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় প্রদান করার জন্য বাংলাদেশ
সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। এছাড়া, তাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া পর্যন্ত এ
গুরুভার বহনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখার
আহ্বান জানানো হয়।
গৃহীত এ প্রস্তাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যৌন অপরাধসহ সকল প্রকার
নির্যাতন, মানবতা-বিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের
জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার আওতায় আনা ও তদন্ত প্রক্রিয়া
জোরদার করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত
এবং আন্তর্জাতিক আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকেও সমর্থন জানানো হয়। এছাড়া,
প্রস্তাবটিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলমান সকল প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে এরূপ
পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এখতিয়ারের কথা
পুনর্ব্যক্ত করা হয়।