ইফতারে রোজাদারদের কাছে বিশেষ কদর রয়েছে নানা ধরনের শরবতের। কিন্তু লেবুসহ শরবতের বিভিন্ন উপকরণের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় এসব পণ্য কিনতে গিয়ে গলা শুকিয়ে আসার জোগাড় ভোক্তার। এমনকি ইসবগুলের ভূসির দাম পর্যন্ত কেজিতে ৫০০ টাকা বেড়েছে।
ইফতারের অন্যান্য খাদ্যপণ্য ছোলা, চিনি, বেগুন, শসা, খেজুরসহ বিদেশি ফলের দামও বেশ চড়া।
এবার রোজার শুরুতেই বাজার বেসামাল। ফলে ইফতার আয়োজনে সাধারণ মানুষকে এবার খরচ সামলাতে বেশ হিমশিম খেতে হবে।
রমজান মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েও লাগাম টেনে ধরে রাখতে পারছে না। দাম স্থিতিশীল রাখতে চাল, চিনি, সয়াবিন তেল ও খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে সরকার।
তবে তেল ছাড়া আমদানিতে শুল্ক কমানোর প্রভাব পড়েনি অন্য তিন পণ্যে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর বাড্ডা কাঁচাবাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার, জোয়ারসাহারাসহ বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইফতারের শরবতের জনপ্রিয় অনুষঙ্গ লেবুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। প্রতি হালিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে লেবু।
রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ইসবগুলের ভূসির দাম কেজিতে ৫০০ টাকার মতো বেড়ে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ১০০ টাকায়।
ছোলার দাম বেড়ে মানভেদে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগে থেকে উচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছিল চিনি, নতুন করে কেজিতে পাঁচ টাকার মতো বেড়ে খোলা চিনি খুচরায় ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শুল্ক কমানোর পরও বাজারে কয়েক দফা বেড়েছে খেজুরের দাম। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীতে খুচরায় সাধারণ মানের খেজুরের দাম প্রতি কেজিতে মানভেদে ৩০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ভালো মানের খেজুর এক হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে।
গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেগুনের দাম কেজিতে মানভেদে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষক ও কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশে রোজার মাসটি দাম কমানোর মাস হলেও আমার দেশে ব্যবসায়ীদের জন্য মুনাফার মাস, ভোক্তাদের গলা কাটার মাস। ব্যবসায়ীরা যাতে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াতে না পারেন, তার জন্য হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কোনো হুমকি-ধমকিই আমলে নেননি ব্যবসায়ীরা।’
গতকাল দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে বাজার তদারকিতে গিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম বলেন, টাঙ্গাইলে একটি লেবুর গড় দাম পাঁচ টাকা। সেই লেবু ঢাকার বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে এক হালি লেবুর দাম সর্বোচ্চ ৬০ টাকা। তাতে একেকটি লেবুর দাম পড়ে ১৫ টাকা। অথচ আমি আমার নির্বাচনী এলাকা টাঙ্গাইলে খোঁজ নিয়ে জানলাম, সেখানে পাইকারিতে প্রতিটি লেবু পাঁচ-ছয় টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় এসে একটি লেবুর দাম বেড়ে তিন গুণ হয়ে যাচ্ছে। এ অঙ্ক কোনোভাবেই মিলছে না।’
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সরকারের অন্য সংস্থার সঙ্গে মিলে উৎপাদন পর্যায় থেকে সবখানে নজরদারি বাড়াব। কেউ কারসাজি করে দাম বাড়ালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গতকাল চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ইসবগুলের ভুসির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫৫০ থেকে ৫৯০ টাকা পর্যন্ত। পাঁচ মাস আগে পণ্যটির কেজি ছিল এক হাজার ৩৩০ থেকে এক হাজার ৪২০ টাকা। এখন প্রতি কেজি মানভেদে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮৮০ থেকে দুই হাজার ১০ টাকায়।
চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার এলাকার বিক্রেতা ও আনোয়ারা পাশারী স্টোরের মালিক অনিমেষ দত্ত কালের কণ্ঠকে বলেন, খোলা ইসবগুলের ভুসির দাম একটু কম আছে। সজিব কম্পানির ২০ গ্রামের প্যাকেট কিনতে হবে ৬৫ টাকায়। ওই হিসাবে পণ্যটির কেজি তিন হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ইসবগুলের ভুসি গত কয়েক মাস ধরে বাড়ছে। তবে রমজানে চাহিদার তুলনায় পণ্যটির সংকট থাকায় দাম বাড়ছে।
লেবু প্রতি ডজন মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ৩৬০ টাকায়। অথচ একই মানের লেবু এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ২২০ টাকায়। ডজনে বেড়েছে ৮০ থেকে ১৪০ টাকা।
লেবুর দাম বেড়ে যাওয়ার খবরে গতকাল চট্টগ্রাম রিয়াজউদ্দিন বাজারের স্টেশন রোডে অভিযান চালান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এ সময় একাধিক প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফয়েজ উল্লাহ বলেন, প্রতি পিস পাঁচ থেকে সাত টাকায় বিক্রি হওয়া লেবু বিক্রি হচ্ছে ১২-১৩ টাকায়। দ্বিগুণের বেশি দাম বাড়তি নেওয়ার অভিযোগে এই জরিমানা করা হয়েছে।
খাতুনগঞ্জে চিনি ও এলাচের বাজারে বড় অনিয়ম
প্রতি কেজি এলাচ আমদানি করতে ট্যাক্স ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচসহ প্রায় এক হাজার ৪৫০ টাকা পড়েছে। কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী পাইকারি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ লাভ করলে দাম এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকার মধ্যে থাকার কথা। অথচ দেশে ভোগ্য পণ্যের অন্যতম প্রধান পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে এলাচ বিক্রি করা হচ্ছিল দুই হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত।
অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলে বিপাকে চাষিরা
ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দায় এক দিনের ব্যবধানে হালি পেঁয়াজের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। গতকাল পেঁয়াজ প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা করে। গত রবিবার উভয় উপজেলার বাজারগুলোতে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয় তিন হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার ৮০০ টাকা করে। এতে বেশি দামের আশায় অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলে বাজারে এনে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।
মধুখালীতে এক লাফে পেঁয়াজের দাম মণপ্রতি ৮০০ টাকা কমেছে
ফরিদপুরের মধুখালীতে পেঁয়াজের দাম পাওয়ার আশায় সোমবারের হাটে পেঁয়াজের ব্যাপক আমদানি ঘটে। এতে হঠাৎ করে প্রতি মণে ৮০০ টাকা দাম কমায় অনেক চাষিকে পেঁয়াজ ফেরত নিতে দেখা গেছে। গত হাটে যে পেঁয়াজ প্রতি মণ তিন হাজার ২০০ টাকা ছিল, সে পেয়াঁজ সোমবার হাটে দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।