শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পতনের এক মাস পূর্তিতে ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণে দেশে ‘শহীদী মার্চ’ পালন করার ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টায় কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে কর্মসূচি শুরুর ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, কলাবাগান, মিরপুর রোড ধরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ও রাজু ভাস্কর্য হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে কর্মসূচি শেষ হবে।

দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী শাসন-শোষণের পর ছাত্র-জনতার প্রবল গণ-আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে ও আন্দোলনে হতাহতদের স্মরণে আজ থেকে সারাদেশে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম এই কর্মসূচিতে ছাত্র-জনতাকে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আবদুল্লাহ, আবু বাকের মজুমদারসহ অন্য সমন্বয়করা উপস্থিত ছিলেন।
সারজিস আলম বলেন, ‘দেশ সংস্কারে যারা বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছেন তাদের এখনই স্মরণ করার সময়। এজন্য বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণে ও গণ-অভ্যুত্থানের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে শহীদি মার্চ করব। আমরা চাইব, পুরো বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই শহীদি মার্চে অংশগ্রহণ করবে। সারাদেশে গণজোয়ার নামবে।’

কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরে সারজিস বলেন, ‘শহীদি মার্চে অন্তর্র্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া, দেশ নিয়ে প্রত্যাশা এবং কেমন রাজনীতি চাই এসব বিষয় ব্যানার ফেস্টুনে তুলে ধরতে চাই। চিত্রকর্মের মাধ্যমেও অংশগ্রহণ করতে পারেন।’

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবি নিয়ে শিক্ষার্থী-চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলনের শুরু জুলাইয়ের এক তারিখ থেকে। এরপর মাসের মাঝামাঝিতে সেই আন্দোলন রূপ নেয় সহিংসতায় এবং পরে তা পরিণত হয় সরকারের পদত্যাগের এক দফা আন্দোলনে।
আন্দোলনের মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত সাড়ে সাতশ’র বেশি ছাত্র-জনতা নিহত হওয়ার তথ্য এসেছে সংবাদমাধ্যমের খবরে, আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির হিসাবে ৭০ শতাংশ মৃত্যুই হয়েছে গুলিতে।

ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে গেলে আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর ছাত্রদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশে এসে ৮ আগস্ট অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে সমম্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়ের আন্দোলনকারীদের সংগঠিত করা হবে। আমরা সমম্বয়করা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে সারাদেশে সফর করব। সফরের সময় আমরা মানুষের কথা শোনার চেষ্টা করব। আমরা মধ্যস্থতাকারী হবো। জনগণের কথা শুনব এবং তা সমাজে ছড়িয়ে দেবো। আশা করি সমাজের মানুষ তা বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী একটি চক্র চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট, দখলদারি করছে। আন্দোলনকারীরা একতাবদ্ধ হয়ে এসবের বিরুদ্ধে কাজ করবেন। এছাড়া দুর্নীতি ও বিপ্লব রক্ষার জন্য তারা কাজ করবেন। আমরা তাদের কিছু সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার চেষ্টা করব। তারা এর বাইরে কাজ করবে না।’

বাকের বলেন, ‘আমরা শুরুতে অল্প কিছু কমিটি অনুমোদন দিয়েছিলাম। জেলাভিত্তিক আমাদের কোনো কমিটি নেই। আমরা দেখছি সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে অনেকেই অপকর্ম করছে। আমরা এর সঙ্গে জড়িত নই।’

সফরের পর কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করা হবে কি না জানতে চাইলে আরেক সমম্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা বরং এই প্রশ্ন সাধারণ মানুষকে করুন। তারা (আমাদের কাছ থেকে) নতুন কোনো রাজনৈতিক দল চায় কি না। জনগণ নির্ধারণ করবে তারা দ্বি-দলীয় রাজনীতি থেকে বের হতে চায় কি না। আমরা কেবল তাদের ভাষাকে বাস্তবে রূপান্তরের কাজ করি।’