নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার চাঁদ ডাইংয়ের মালিক জসিম উদ্দিন মাসুমকে হত্যা ও লাশ গুমের ঘটনায় গ্রেপ্তার তার কথিত প্রেমিকা রুমা আক্তার ও তার বান্ধবী রোকসানা রুকু আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি রেকর্ড করেন নারায়ণগঞ্জ আদালতের সিনিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হায়দার আলী।

এ হত্যাকাণ্ডের আদ্যোপান্ত বর্ণনা দিয়ে সব তথ্য স্বেচ্ছায় ও অকপটে আদালতের বিচারকের খাসকামড়ায় স্বীকার করেন রুমা ও রুকু। রাতে আদালতে দুই আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. কাইউম খান।
তিনি বলেন, পরকীয়া প্রেমিকা রুমা ও তার বান্ধবী রুকু ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। পরে আদালতের নির্দেশে আসামিদের জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
জবানবন্দিতে রুমার দাবি, কাফরুলের তিনটি কক্ষের একটি ফ্ল্যাট নিয়ে তার ছোট বোন, বান্ধবী, ভাবি ও তার বাচ্চা বসবাস করেন।

জসিম উদ্দিন মাসুম গত ১০ নভেম্বর ওই বাসায় আসার পর দুধের সঙ্গে চেতনানাশক দ্রব্য মিশিয়ে তাকে অচেতন করা হয়। এ অবস্থায় দুই দিন ওই বাসায় রাখা হয় তাকে।

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) একটি কক্ষের বাথরুমে নিয়ে জসিম উদ্দিন মাসুমকে হত্যার পর লাশ চাপাতি ও হেক্সো ব্লেড দিয়ে ১১ টুকরা করা হয়। পরে রুমা তার এক বন্ধুকে দিয়ে কালো রঙের বড় তিনটি পলিথিনের ব্যাগ আনিয়ে সেই ব্যাগগুলোর ভেতরে লাশের সাত টুকরো সিএনজিতে করে কুড়িল বিশ্ব রোড ৩০০ ফুট সড়কের রূপগঞ্জের পূর্বাচলে একটি লেকের পাড়ে এবং অন্য চারটি অংশ পাশের একটি কাশবনে ফেলে দিয়ে আসেন রুমা। রুমাকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে তাকে নিয়ে পুলিশ পূর্বাচলে গেলে তার দেখানো মতে কাশবন থেকে জসিম উদ্দিন মাসুমের দেহের আরও চারটি অংশ উদ্ধার করে। হাত, পা ও কোমর থেকে বুকের খণ্ডিত অংশ ছিল পরবর্তী উদ্ধার হওয়া দেহাংশের।

হত্যাকাণ্ডের পর ব্যবহৃত চাপাতি, হেক্সো ব্লেড ও নিহত জসিম উদ্দিন মাসুমের পরনের পোশাক রাজধানীর বনানীর ২০ নম্বর সড়কের একটি বাসায় রেখে আসে রুমা। পরে ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে সেগুলো জব্দ করা হয়।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রুমা স্বীকার করেন, শিল্পপতি মাসুমের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল দীর্ঘদিন ধরে। জসিম উদ্দিন মাসুম একপর্যায়ে রুমাকে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাসও দিয়েছিলেন।
সম্প্রতি মাসুম অন্য নারীর প্রতি আসক্ত হয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এতে মাসুমের ওপর রাগ-ক্ষোভ, ঘৃণা ও আবেগের বসে পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করেন রুমা।

রোববার (১০ নভেম্বর) বিকেলে মাসুম তার বাসা থেকে বের হয়ে গুলশান গিয়ে ব্যাংক থেকে সাড়ে আট লাখ টাকা তোলেন। পরে তিনি অন্য গাড়িতে করে নারায়ণগঞ্জে ডাইং কারখানায় যাবেন বলে ব্যক্তিগত গাড়ি ও চালককে বাসায় ফিরে যেতে বলেন। সেদিন রাতে মাসুম বাসায় ফিরে না আসায় এবং তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় পরদিন সোমবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশান থানায় নিখোঁজের জিডি করেন বড় ছেলে ওবায়দুল ইসলাম শিবু।

এরপর বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকালে রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোড সড়কের পূর্বাচল উপশহরের লেকের পাড় থেকে তিনটি পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির মরদেহের সাত টুকরো উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিনই জিডির সূত্র ধরে এবং প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত করে পুলিশ নিশ্চিত হয় উদ্ধার করা মরদেহের টুকরাগুলো ফতুল্লার শিল্পপতি মাসুমের। খবর পেয়ে স্বজনরা সদর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।