ঢাকা, ২৫ পৌষ (৯ জানুয়ারি) :

আর্থিকখাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অডিট
ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার উদ্বোধন করা হয়েছে। বাংলাদেশে সরকারি দপ্তরসমূহের মধ্যে এ রকম
উদ্যোগ এটিই প্রথম। আজ ঢাকায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ
হুমায়ূন এ সফটওয়্যার উদ্বোধন করেন।

এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, শিল্প
মন্ত্রণালয়ের অডিট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার প্রবর্তন একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। আমরা
অন্যদের থেকে এগিয়ে গেলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অংশ
হিসেবে অর্থনৈতিক শৃঙ্ক্ষলা বজায় রাখতে এবং দুর্নীতি কমাতে এ সফটওয়্যার ভূমিকা রাখবে বলে আশা
করি।

শিল্পমন্ত্রী আরো বলেন, অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ৩টি পক্ষ যথাক্রমে বাণিজ্যিক
অডিট অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয় ও অডিটি অফিসসমূহের ইউজার ফ্রেন্ডলি করত: এ সফটওয়ার ডেভেলপ
করা হয়েছে। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে অডিট অফিসসমূহে মোট আপত্তির সংখ্যা, আপত্তির ধরন, প্রেরিত
জবাবের সংখ্যা, জবাবের ওপর গৃহিত ব্যবস্থা সর্বোপরি অডিট অধিদপ্তর কর্তৃক অডিট আপত্তি
নিষ্পত্তির জারিপত্র ইত্যাদি কোথায় কি অবস্থায় আছে তা খুঁজে বের করা সহজ নয়। কোন অডিট
আপত্তি কোথায় অনিষ্পন্ন অবস্থায় পড়ে আছে তা এ সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে একজন
ব্যবহারকারী অতি সহজে জানতে পারবেন এবং সে মোতাবেক কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবেন।
শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিল্প
প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এবং বাংলাদেশের কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল মোহাম্মদ
মুসলিম চৌধুরী। এছাড়া, বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য অডিট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ,
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্মসচিব মৃত্যুঞ্জয় সাহা, এনট্রান্স লজিক সিস্টেমস্ এর ব্যবস্থাপনা
পরিচালক রুবাইয়াত মাহবুব প্রমুখ। এ সময় শিল্প মন্ত্রণালয় ও দপ্তর/সংস্থাসমূহের সংশ্লিষ্ট
কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘শুধু আইন দিয়ে করাপশন বন্ধ করা যাবে না এবং সেই সাথে
সিস্টেমই পরিবর্তন করতে হবে’ এই বাণীকে ধারণ করে শিল্প মন্ত্রণালয়ে বর্তমান ম্যানুয়াল পদ্ধতির
পরিবর্তে অডিট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার প্রতিস্থাপন একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তিনি আরো
বলেন, অডিট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার প্রতিস্থাপনের ফলে শিল্প মন্ত্রণালয় ও দপ্তর সংস্থার অডিট
আপত্তি দ্রুত নিষ্পত্তিতে সহায়ক হবে। তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়াধীন কর্পোরেশনকে লাভজনক পর্যায়ে
উন্নীত করতে এবং সরকারের নীতি-আদর্শ বাস্তবায়নে যার যার দায়িত্ব সততা, জবাবদিহিতা ও নিষ্ঠার
সাথে পালনের আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল মোহাম্মদ মুসলিম
চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে অদ্যাবধি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সরকারি অফিসমূহে অডিট ব্যবস্থাপনা
কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। ম্যানুয়ালি অডিট আপত্তিসমূহ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে অনেক সময় ব্যয়
হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অডিট আপত্তির প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সঠিকভাবে সংরক্ষিত হয় না বিধায়

বছরের পর বছর অডিট আপত্তিসমূহ অনিষ্পন্ন অবস্থায় থেকে যায়। অধিকন্তু মাঠ পর্যায়ে অডিট
আপত্তি উত্থাপিত হওয়ার পর থেকে চূড়ান্ত জারিপত্র পর্যন্ত একদিকে যেমন দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়
অপরদিকে রিপোর্টসমূহ অপাঠযোগ্য/দুর্বোধ্য থাকে বিধায় এর সঠিক পাঠোদ্ধার সম্ভব হয় না।
ফলশ্রুতিতে অডিট আপত্তি নিষ্পত্তিতে বিঘ্ন ঘটে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, শিল্প মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন ১৩টি দপ্তর/সংস্থার অধীনে প্রায়
২৪৮টি অডিট অফিস রয়েছে। ডিসেম্বর, ২০২১ মাস পর্যন্ত মোট অডিট আপত্তির সংখ্যা  ৪ হাজার
৮৬৯টি। তার মধ্যে সাধারণ ১ হাজার ৬৬১টি, অগ্রিম ২ হাজার ৮১২টি, খসড়া ৬৫টি এবং সংকলনভূক্ত
৩৩১টি। সকল অডিট আপত্তির বিপরীতে মোট টাকার পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।
মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার পুঞ্জিভূত অডিট আপত্তিসমূহ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে
সমস্যাসমূহ/প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয় তা চিহ্নিত করাসহ ত্রি-পক্ষীয় সভার হার বৃদ্ধি এবং
অডিট সংক্রান্ত কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর/সংস্থা এবং
বাণিজ্যিক অডিট অধিদপ্তরের মতামত গ্রহণপূর্বক শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক আর্থিক প্রতিষ্ঠান
বিভাগের নমুনা অনুসরণপূর্বক সংযোজন-বিয়োজন করে Audit Management Software ডেভেলপ করা
হয়েছে।