আমদানি শুল্ক কমানো, ওএমএস-এ চাল বিক্রি ও বাজার তদারকিসহ সরকারের নানা উদ্যোগে কমতে শুরু করেছে চালের দাম। পাশাপাশি খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ৫ টাকা। তবে এখনও অন্যান্য সব ধরনের পণ্যের দাম যেন আকাশছোঁয়া।
রাজধানীর খুচরা বাজারে ৫০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো সবজি। নতুন করে সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা। সঙ্গে আটা-ময়দা, আদা-রসুন কিনতে এখনও ক্রেতার বাড়তি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার ও রামপুরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে প্রতি মাসে ৯টি অত্যাবশকীয় পণ্যের দাম বেঁধে দিতে চায় সরকার। পণ্যেগুলো হচ্ছে-চাল, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল (সয়াবিন, পাম), পরিশোধিত চিনি, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, রড ও সিমেন্ট। মূল্য নির্ধারণের পর নির্ধারিত মূল্য থেকে কেউ বেশি টাকা আদায় করলে শুধু জরিমানা নয়, সরাসরি মামলা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সূত্র জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এ নয়টি পণ্যের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করার কাজ চলছে। আমদানি ও উৎপাদন খরচ, পরিবহণ ভাড়াসহ বিভিন্ন বিষয় সামনে রেখে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। কাজ শেষ হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দাম জানানো হবে।
সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন পণ্য আমদানিকারক ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতি মাসে পণ্যের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেবে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ কাজ শুরু করা হবে। এরচেয়ে বেশি যদি কেউ নেয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে শুধু জরিমানা নয়, মামলা করা হবে। আইনে ৩ বছরের জেল বা কোথাও কোথাও আরও বেশি জেল-জরিমানা আছে। পণ্যের সংখ্যা কোনো বিষয় নয়, অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাড়বে-কমবে। ট্যারিফ কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা সংশ্লিষ্ট মানুষকে নিয়ে এ দায়িত্ব পালন করবেন।
শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজারে বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৭০-৭২ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগেও ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি নাজিরশাইল চালে ৫ টাকা কমে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বিআর-২৮ বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা। যা আগে ৬৪ টাকা ছিল। পাশাপাশি মোটা চালের মধ্যে প্রতি কেজি স্বর্ণা বিক্রি হয়েছে ৫২-৫৪ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগেও ৫৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
কাওরান বাজারের আল মদিনা রাইস এজেন্সির মালিক যুগান্তরকে বলেন, চালের কোনো ঘাটতি না থাকলেও এতদিন মিলাররা সিন্ডিকেট করে নানা অজুহাতে বাড়তি দরে চাল বিক্রি করেছে। ফলে পাইকারি ও খুচরা বাজার হয়ে ক্রেতার চাল বেশি দরে কিনতে হয়েছে। এখন চালের আমদানি শুল্ক কমানোর ফলে ভারত থেকে চাল আমদানি বেড়েছে। সেই চাল বন্দর থেকে ছাড় করে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এতে মিলাররা তাদের চালের দাম কমিয়ে বিক্রি শুরু করেছে। যে কারণে বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম ৪-৫ টাকা কমেছে। আমদানিকারকরা বলছেন, চাল আরও বাজারে আসতে থাকলে দাম আরও কমবে।
এদিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে ৫০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো সবজি। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি শিম বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৬০ টাকা। এক কেজি পাকা টমেটো বিক্রি হয়েছে ১০০-১৩০ টাকা। গাজর ১২০-১৩০ টাকা, বরবটির কেজি ৭০-৮০ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে ৫০-৭০ টাকা, কাঁকরোল ৫০-৭০, পটোল ও চিচিঙ্গা ৫০ টাকা ও প্রতি কেজি করলা বিক্রি হয়েছে ৬০-৮০ টাকা।
মুদি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি সরু দানার মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ১৩০ টাকা ছিল। মাঝারি দানার মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ১৩৫ টাকা কেজি। যা আগে ১২৫ টাকা ছিল। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা আগে ৫০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি চিনি ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমদানি করা রসুন প্রতি কেজি ১৩০ ও শুকনা মরিচ ৫০০ টাকা, জিরা ৫০০, আদা ১৪০, হলুদ ২৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতি কেজি প্যাকেট আটা ৫৮ ও ময়দা ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
রাজধানীর মালিবাগ বাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. আসলাম বলেন, সবজির দাম কিছুটা কমলেও এখনও ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না। বিক্রেতারা তাদের মতো করে দাম নির্ধারণ করে। যার কারণে আমাদের একেক সপ্তাহে একেক দামে সবজি কিনতে হয়। এছাড়া চাল ও পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। তবে বাজারে এখন সব ধরনের পণ্য বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে আমাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
চানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম সহনীয় করতে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। যেখানে যেসব পণ্যের সিন্ডিকেট করা হচ্ছে তা আমরা অভিযানের মাধ্যমে ভাঙতে চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে ডিম, ব্রয়লার মুরগি, চালসহ একাধিক পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। কয়েক দিন আগে মধ্যরাতে কাওরান বাজারে সবজির বাজারে অভিযান পরিচালনা করেছি। দাম বাড়ার পেছনে যারা তাদের চিহ্নিত করেছি। পরদিন থেকে সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।