সমহারে শুল্কনীতি চালু করছেন ট্রাম্প, কতটা বিপদে পড়বে ভারত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফাইল ছবি : এএফপি
মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত, চীন, কানাডা, ইইউসহ বেশ কয়েকটি দেশের নাম করে বলেছেন, ‘আমরা ওদের পণ্যের ওপর যে শুল্ক বসিয়েছি, তার থেকে অনেক বেশি শুল্ক ওরা আমাদের পণ্যের ওপর বসিয়েছে। এটা অত্যন্ত অন্যায্য ব্যবস্থা।’
ট্রাম্প আরো বলেছেন, ‘ভারত তো আমাদের তুলনায় ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক বসিয়ে রেখেছে। চীন দ্বিগুণ শুল্ক বসিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার শুল্ক চার গুণ বেশি।
আগামী ২ এপ্রিল থেকে ওরা যে হারে আমাদের পণ্যের ওপর মাসুল বসিয়ে রেখেছে, আমরাও একই হারে বসাব। ওরা যদি আমাদের পণ্য ওদের বাজারে ঢুকতে না দেয়, তাহলে আমরাও দেব না। ১ এপ্রিল থেকে করছি না। কারণ, মনে হতে পারে, আমি এপ্রিল ফুল করছি, বোকা বানাচ্ছি।
তাই ২ এপ্রিল থেকে সমহারে শুল্ক চালু হবে।’
ভারতের ওপর কী প্রভাব পড়বে
রেটিং এজেন্সি মুডিজের প্রতিবেদন অনুসারে, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের ওপর ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে।
প্রতিবেদন বলছে, ভারতের খাবার, বস্ত্র ও ওষুধ শিল্প বিপদে পড়তে পারে। যেসব ভারতীয় সংস্থা মার্কিন বাজারের ওপর নির্ভরশীল তারা বিপাকে পড়বে।
তাদের মতে, এর ফলে ভারতীয় মুদ্রার ওপর চাপ বাড়বে, মার্কিন ডলার শক্তিশালী হবে। আর্থিক বৃদ্ধি সুনিশ্চিত করতে রিজার্ভ ব্যাংকের হাতে খুব বেশি বিকল্প থাকবে না।
কোথায় চাপে পড়তে পারে ভারত
যুক্তরাষ্ট্রের ৭৫ শতাংশ পণ্যের ওপর ভারত ৫ শতাংশ হারে শুল্ক বসিয়েছে। ফলে সেই সব জিনিসের ওপর সমহারে শুল্ক বসানোর নীতিতে ভারতের কোনো অসুবিধা হবে না। কিন্তু পোশাক, বস্ত্রশিল্প, চটি-জুতার ওপর যুক্তরাষ্ট্র যদি ১৫ থেকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক বসায়, তাহলে ভারতের অসুবিধা হবে।
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি প্রতিটি জিনিস আলাদা করে বেছে নিয়ে সমহারে শুল্ক বসায়, তাহলে অনেক ক্ষেত্রে ভারতের কোনো অসুবিধা হবে না। ভারতের মতো যুক্তরাষ্ট্র যদি অ্যাভোকাডোর ওপর উচ্চ হারে শুল্ক বসায়, তাহলে নয়াদিল্লির কিছু এসে যাবে না। কারণ ভারত সেভাবে অ্যাভাকাডো আমদানি করে না। তারা যদি ক্ষেত্র অনুসারে শুল্ক বসায় এবং সব কৃষিজ জিনিসের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক বসায়, তাহলে ভারতের ক্ষতি হবে। তখন ভারতকে হয় যুক্তরাষ্ট্রের জিনিসের ওপর শুল্ক কমাতে হবে অথবা পাল্টা কোনো ব্যবস্থা নিতে হবে।’
অর্থনীতিবিষয়ক প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত রায় চৌধুরী ডিডব্লিউকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র হলো ভারতের সবচেয়ে বড় রপ্তানির জায়গাগুলোর মধ্যে একটি। ফলে সমহারে শুল্ক বসানোর নীতির ফলে ভারতের রপ্তানি ধাক্কা খাবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জানুয়ারিতে বিদেশি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলো শেয়ারবাজার থেকে ৭৮ হাজার কোটি রুপি তুলে নিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে তোলা হয়েছে ২৮ হাজার কোটি রুপির মতো। ফলে শেয়ারবাজার রীতিমতো চাপে আছে। ট্রাম্পের এই ঘোষণার প্রভাব সেখানেও পড়তে পারে।’
ভারতীয়-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি
এদিকে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এখন যুক্তরাষ্ট্রে সফর করছেন। তিনি মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিকের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনাও শুরু করে দিয়েছেন।
ইউএস-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি অতুল কাশ্যপ বলেছেন, ‘আমরা আশা করি, এই আলোচনা সফল হবে। এই বাণিজ্য চুক্তি অনেক দিন ধরেই বকেয়া আছে। এর ফলে বিশ্বের দুটি বড় অর্থনীতির দেশ কাছাকাছি আসতে পারবে।’
তিনি আরো জানিয়েছেন, মার্কিন বাণিজ্যের মাত্র আড়াই শতাংশ ভারতের সঙ্গে হয়। এর পরিমাণ বাড়া দরকার। একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রাখতে হবে। দুই দেশ একে অপরের বাজারে যাতে অবাধে ঢুকতে পারে, সেই ব্যবস্থা থাকা দরকার।
অন্যদিকে জয়ন্ত বলেন, ‘নতুন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ভারতের ওপর চাপ বেশি থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের শর্ত বেশি করে চাপাতে চাইবে। ভারতকে তখন ট্রাম্পের অনেক দাবি মেনে নিতে হতে পারে।’