ঢাকা, ২ ভাদ্র (১৭ আগস্ট):

সর্বস্তরের জনগণকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক আজ ভার্চুয়ালি সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের অভ্যন্তরে ৮টি জেলা (গোপালগঞ্জ, রংপুর, বাগেরহাট, রাঙ্গামাটি, সিলেট, পাবনা, ময়মনসিংহ, বরগুনা) এবং বৈদেশিক মিশন (জেদ্দা, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর) এ ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থেকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেন।

সর্বজনীন পেনশন স্কিম এর শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ফাতিমা ইয়াসমিন, সিনিয়র সচিব, অর্থ বিভাগ এবং আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এছাড়া সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিষয়ক একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন সুবিধাভোগী তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রীর এ কাজকে যুগান্তকারী এবং সাধারণ মানুষের সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক অসাধারণ সংযোজন হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

একটি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তন করার প্রয়োজনীয়তা থেকে ২০০৮ সনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করাসহ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে তিনি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা প্রদান করেছিলেন। যারই ধারাবাহিকতায় ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই মহান জাতীয় সংসদ কর্তৃক সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩’ পাশ করা হয়। বাংলাদেশের প্রায় ১০ কোটি মানুষকে পেনশন সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যে উপর্যুক্ত বৈশিষ্টসম্বলিত এই সর্বজনীন পেনশন স্কিম।

বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। বর্তমানে গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩ বছর হলেও ভবিষ্যতে গড় আয়ু আরো বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে জনমিতিক লভ্যাংশ (Demographic Dividend) এর আওতায় আছে। বর্তমানে আমাদের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬২ শতাংশ কর্মক্ষম। গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি জনিত কারণে ভবিষ্যতে নির্ভরশীলতার হার বৃদ্ধি পাবে বিধায় একটি টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বিধায় সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ উদ্দেশ্যে আইনের আওতায় জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ এবং গভর্নিং কাউন্সিল গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালাও জারি করা হয়েছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে মোট ৬টি  স্কিম থাকবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ৪টি স্কিম চালু হচ্ছে যাথা: প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য ‘প্রবাস’, ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী/প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকগণের জন্য ‘সুরক্ষা’ এবং দ্ররিদ্য সীমার নিচে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের (বাৎসরিক অনুর্ধ্ব ৬০ হাজার টাকা আয়সীমা) মানুষের জন্য অংশপ্রদায়ক ‘সমতা’ স্কিম। সমতা স্কিমে ব্যক্তি প্রদত্ত চাঁদার সমপরিমাণ অর্থ সরকার প্রদান করবে। সরকারি এবং স্বায়ত্ত্বশাসিত/রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আনার বিষয়ে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে সুবিধামত সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বৎসর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বৎসর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বৎসরের ঊর্ধ্ব বয়স্ক একজন সুবিধাভোগী নূন্যতম ১০ বছর চাঁদা প্রদান সাপেক্ষে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে পেনশনারের নমিনি ৭৫ বৎসর পূর্ণ হওয়ার অবশিষ্ট সময় পর্যন্ত পেনশন প্রাপ্য হবেন। চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বৎসর চাঁদা প্রদান করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তা নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে। চাঁদাদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেবল তার জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করা যাবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী বক্তৃতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর শাহাদাৎ বরণের মাসে জাতিকে সর্বজনীন পেনশন উপহার দেওয়ার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে আরও একধাপ অগ্রগতি সাধিত হলো বলে উল্লেখ করেন এবং এ কাজের সাথে সম্পৃক্ত সকলকে ধন্যবান জ্ঞাপন করেন। কোন বৈদেশিক সাহায্য ও কারিগরি সহায়তা ছাড়া এ ধরনের একটি বড় কাজ সম্পাদন করায় অর্থ বিভাগের সক্ষমতার প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট www.upension.gov.bd চালু করা হয়েছে এবং ৪টি স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম ও মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংকে টাকা প্রদান শুরু হয়েছে। সিস্টেম চালু হওয়ার পর থেকে দেশে এবং বিদেশের বাংলাদেশী নাগরিকদের নিকট থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।