ঢাকা, (১৬ জুন):
প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ নিজামুল হক নাসিম বলেছেন আইনের একটি বিষয়েই সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে।
তিনি বলেছেন, সাংবাদিকরা কোন অন্যায় করলে প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ করা যায় এবং কাউন্সিল সেই অভিযোগের বিচার করতে পারে।
কিন্তু প্রেস কাউন্সিল আইনে তারা অভিযোগের বিচার করতে পারলেও, আইনের ১২ ধারায় তিরস্কার করা ছাড়া তাদের আর কোন শাস্তি দেবার ক্ষমতা নাই।
তিনি উল্লেখ করেন, এখন এই তিরস্কারের পাশাপাশি সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার ক্ষমতা প্রেস কাউন্সিলকে দেয়ার জন্য আইনে সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
“ঢাল নাই, তলোয়ার নাই, নিধিরাম সর্দার- প্রেস কাউন্সিল এরকম অবস্থায় রয়েছে। এর থেকে এই প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার জন্য সরকার প্রেস কাউন্সিল আইনের ১২ ধারায় এই সংশোধনী আনার পদক্ষেপ নিয়েছে,” বলেন প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান।
সাংবাদিক নেতাদের অনেকে মনে করেন এই প্রস্তাব গৃহীত হলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হবে।
কিন্তু প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নিজামুল হক নাসিম বলেছেন, এই সংশোধনী আনা হলে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা খর্ব হবে না।
আইনে যা আছে
প্রেস কাউন্সিল আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। আইনটি প্রণয়নের পাঁচ বছর পর ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় প্রেস কাউন্সিল।
এই আইনে প্রেস কাউন্সিলকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিচার করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
কোন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কেউ পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকতা-নীতির পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ করতে চাইলে তিনি প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ বা মামলা দায়ের করতে পারেন।
এর পর আইন অনুযায়ী প্রেস কাউন্সিল তাদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে অভিযোগের বিচার করে থাকেন।
অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনটির ১২ ধারায় শাস্তির বিধান রয়েছে।
এই ধারায় বলা হয়েছে, কোন পত্রিকা বা কোন সংবাদ সংস্থা কোন সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে অসদাচরণ অথবা সাংবাদিকতার নীতি ভঙ্গ করেছে এবং কারও বিরুদ্ধে অন্যায় খবর প্রকাশ করেছে- এ ধরনের অভিযোগ বা মামলার বিচার করে প্রেস কাউন্সিল সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক এবং পত্রিকা বা সংবাদ সংস্থার সম্পাদককে তিরস্কার, নিন্দা অথবা সতর্ক করতে পারে।
বর্তমান আইনে এর বাইরে আর কোন শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা প্রেস কাউন্সিলকে দেয়া হয়নি।
প্রেস কাউন্সিল মনে করছে বর্তমান বাস্তবতায় তিরস্কার বা নিন্দা করার এই শাস্তি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।
তাই শুধু তিরস্কার নয়, এখন ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করারও প্রস্তাব করা হয়েছে।
আর এই জরিমানা করার ক্ষমতা পেলেই প্রেস কাউন্সিল শক্তিশালী হবে বলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা মনে করছেন।
তবে আইনে শুধু পত্রিকা বা প্রিন্ট মিডিয়া এবং সংবাদ সংস্থার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিচার করার ক্ষমতা দেয়া আছে প্রেস কাউন্সিলকে।
কিন্তু গত কয়েক দশকে বেসরকারি টেলিভিশন বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং অনলাইন বা ডিজিটাল মাধ্যমের অনেক প্রসার হয়েছে।
অন্যায় করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে প্রেস কাউন্সিলের কোন ক্ষমতার কথা আইনে উল্লেখ করা নেই।
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সাংবাদিক নেতাদের
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থক বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজে’র সভাপতি ওমর ফারুক জরিমানার এমন প্রস্তাব নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এ ধরনের প্রস্তাব নিয়ে সরকার এবং প্রেস কাউন্সিলের পক্ষ থেকে তাদের সাথে কখনও আলোচনা করা হয়নি।
মি: ফারুক বলেন, “আর্থিক জরিমানা করার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।”
একইভাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিরোধী দল বিএনপি সমর্থক বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজে’র সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহও।
তিনি বলেছেন, গণমাধ্যম এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করতে বর্তমান সরকার একের পর এক কালো আইন করছে।
এখন সাংবাদিকদের ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার প্রস্তাবকে তিনি নিবর্তনমূলক বলে মনে করেন এবং এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।
“এ ধরনের জরিমানার বিধান করা হলে তা সাংবাদিকরা মেনে নেবে না,” বলেন মি: আব্দুল্লাহ।
তবে প্রেস কাউন্সিলের কর্মকর্তারা বলেছেন, সাংবাদিক প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করেই অনেক আগে এই সংশোধনী প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে।
প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম জানিয়েছেন, তিনি দায়িত্ব পাওয়ার আগে এই প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। তিনি এই দায়িত্ব পেয়েছেন ২০২১ সালের আক্টোবরে।
মি. হক বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা তাদের উদ্দেশ্য নয়।
“জরিমানা করার ব্যাপারে আইনের সংশোধনী প্রস্তাব বড় কোন বিষয় নয়। বর্তমান বাস্তবতায় এটি একটি ছোট পরিবর্তন,” বলেন তিনি।
সাংবাদিকদের ডাটাবেজ
সারাদেশে সাংবাদিকদের ডাটাবেজ তৈরি করারও উদ্যোগ নিয়েছে প্রেস কাউন্সিল।
কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বলেছেন, পত্রিকাগুলোর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের এবং সারাদেশে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের তালিকা সংগ্রহ করা হবে।
সেই তালিকা প্রেস কাউন্সিল যাচাই বাছাই করে একটি ডাটাবেজ করবে।
এছাড়াও বেসরকারি টেলিভিশন এবং ডিজিটাল মাধ্যমের সাংবাদিকদের ডাটাবেজ একইভাবে তৈরি করবে প্রেস ইনস্টিটিউট বা পিআইবি।
সাংবাদিক যারা তালিকাভূক্ত হবেন, ছয় মাস পর পর তাদের কর্মকাণ্ড সরকারের ঐ প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যালোচনা করবে বলেও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে সাংবাদিক নেতাদের অনেকের।
সূত্র : বিবিসি বাংলা, ঢাকা