২৪ কার্তিক (৯ নভেম্বর) : এস এম মিলন স্টাফ রিপোর্টার:

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ নিজ পিতৃভুমি আগমন উপলক্ষে লোহাগড়ার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন সহ সরকারি স্কুল ও কলেজে সতবিনিময় করেন।
আজ ০৮ নভেম্বর ২০২২ (মঙ্গলবার) বেলা ১০টায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ  নিজ জন্মভূমি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার করফা গ্রামে গমন করেন।
সেনা প্রধান প্রথমে লোহাগড়া মধুমতী আর্মি ক্যাম্পের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি মধুমতী রেলওয়ে ব্রীজের কাজের অগ্রগতি এবং বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করে কালনা এলাকায় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।

লোহাগড়ার বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে লোহাগড়ার করফা গ্রামে পৈতৃক ভিটায় বিভিন্ন জন কল্যাণমূলক প্রকল্প প্রস্তাবিত বীর অধ্যাপক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ মোঃ রোকন উদ্দিন আহমেদ ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র নির্মান কাজ পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি নিজের আত্মীয় স্বজন সহ এলাকার অসহায় মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। এসময় সেনাপ্রধানকে দেখতে দূর দুরান্ত থেকে হাজার হাজার উৎসুক জনতা এক নজর দেখার জন্য ভীড় করেন। তারা সেনা প্রধান কে দেখে আনন্দ প্রকাশ করেন।

এরপর সেনাবাহিনীর প্রধানের পিতা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক এস এম রোকন উদ্দিন আহমেদ কতৃক প্রতিষ্ঠিত মল্লিকপুর ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের কার্যক্রম পরিদর্শন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক এস এম রোকন উদ্দিন আহমেদ ভবন উদ্বোধন করেন। স্কুল প্রাঙ্গনে এক সুধি সমাবেশে পরিচালনা কমিটির সভাপতি বাংলাদেশ ব্যাংক এর পরিচালক মো মহসিন হোসেন এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি বক্তব্য রাখেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ,এসবিপি,ওএসপি, এনডিইউ,পিএসসি,পিএইচডি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন চিপ কনসালটেন্ট জেনারেল, এডহক কনস্ট্রাকশন সুভারভিশন কনসালটেন্ট মেজর জেনারেল এ কে এম রেজাউল মজিদ, এনডিসি, এ এফডব্লিউসি, পিএসসি এবং জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও এরিয়া কমান্ডার, যশোর এরিয়া মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাহবুবুর রশীদ, এসপিপি, এনডিইউ, পিএসসি,স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো বসির, নড়াইল জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ হাবিবুর রহমান,উপজেলা চেয়ারম্যান সিকদার আব্দুল হান্নান রুনু,জেলা কমান্ডার মো গোলাম কবির,জেলা পরিষদ সদস্য সৈয়দ সামসুল আলম কচি,উপজেলা আওয়ামীরীগ সভাপতি মুন্সি আলাউদ্দিন,সহ যশোর এরিয়ার উর্ধতন সেনা কর্মকর্তাগণ।

বিদ্যালয়টির পক্ষ হতে সেনাবাহিনীর প্রধানকে মানপত্র প্রদান করা হয়। এসময় সেনাপ্রধান বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অবিভাবকবৃন্দ, সাংবাদিক সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে মতবিনিময় করেন। বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য ২০ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়ার কথা বলেন এবং সেনাপ্রধানের পিতার নামে বৃত্তি প্রদান স্বরূপ বিদ্যালয়ের ১০জন অসহায় শিক্ষার্থীকে আজীবন পড়ালেখার খরচ বহন করবেন। এছাড়াও অন্যান্য অসহায় শিক্ষার্থীদের সর্বত্র পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার সহ এলাকার অসহায় মানুষের মাঝে তিন হাজার শীতকালীন উন্নতমানের কম্বল প্রদান করেন। মতবিনিময় সভায় সেনাপ্রধান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় গ্রামে থাকার স্মৃতিচারন তুলে ধরেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি করফা গ্রামে থেকেছেন সে সময় অনেক কষ্ট করেছেন। কষ্টের সময় যারা পাশে ছিলেন তাদেরকে সারাজীবন মনে রাখবেন এবং তাদের পাশে থাকবেন। আরো বলেন একজন শিক্ষিত মেধাবী পারে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। তিনি সকলকে শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন। নিজ পৈতৃক ভিটায় বারবার আসবেন বলেও সবাইকে প্রতিশ্রুতি দেন।
এসময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন ২০২৪ সালের জুনে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ১৭২ কিলোমিটার রেলপথের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এতে রাজধানীর সঙ্গে সংযুক্ত হবে দক্ষিণ-পশ্চিমের ৯টি জেলা।

উপস্থিত কয়েকজন বক্তব্য রেখে বেস কিছু দাবির বিষয়ে তুলে ধরেন। যেমন লক্ষীপাশা মহিলা কলেজে পরিদর্শনের আমন্ত্রণ,আমাদা কলেজটি এমপিও ভুক্ত, বেকার তরুণ তরুণীদের চাকরি দেওয়া, একতলা ভবনটি চারতলা নির্মাণ করার দাবিগুলো বিবেচনা করার আশ্বাস দেন।

সড়ক নিরাপত্তা কর্মী নিসরাপ চেয়রাম্যান সৈয়দ খায়রুল আলম এর বক্তব্যে দাবি রাখেন কালনা মধুমতী সেতুর উপর নির্মিত রেল সেতুর নামকরণ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন বীর মুক্তিযোদ্ধা লে এম মতিউর রহমানের নামে নামকরণ করার দাবি করলে তিনি বিষয়টি আলোচনা করে বিবেচনা করার আশ্বাস দেন।

এরপর সেনাবাহিনীর প্রধান লোহাগড়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা ‘অংকুর’ এর মোড়ক উন্মোচন করেন।
নড়াইল জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ হাবিবুর রহমান এর সভাপতিত্বে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড. সুভাষ চন্দ্র বোস, নড়াইল জেলা সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ দোলন মিয়া এবং নড়াইল -২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্তোজার পিতা গোলাম মোর্তজা শ্বপন, লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নাসির উদ্দীন সহ এলাকার মুক্তিযোদ্ধাগণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। এসময় বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য ১৫ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়ার কথা বলেন।
এরপর তিনি লোহাগড়া সরকারি আদর্শ মহাবিদ্যালয় গমন করেন এবং সেখানে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর(বিএনসিসি) কতৃক গার্ড অব অনার প্রদান করা হয় এবং শিক্ষকবর্গের সাথে মতবিনিময় করেন।

সেনাপ্রধান আসন্ন শীতকালীন প্রশিক্ষণ উপলক্ষে ৫৫ পদাতিক ডিভিশন এর প্রস্তাবিত প্রশিক্ষণ, অপারেশন ও লজিস্টিক এর প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।

তিনি আজ প্রথম বার নড়াইলের লোহাগড়ায় পরিদর্শন কালীন সময় সেনা প্রধানের সহধর্মিণী, বড় ভাই এস এম রফিক উদ্দিন, ছোট বোন অধ্যাপক রুনু বিথীর সহ নিকটতম আত্মীয়রা সফরসঙ্গী ছিলেন।
সেনা প্রধান প্রথমে লোহাগড়া মধুমতী আর্মি ক্যাম্পে পরিবার সহ আগমন করলে নিকট আত্নিয়দের পক্ষথেকে বধুবরণ করে নেয় বিভিন্ন পুরস্কার এর মাধ্যমে। সেখানে
লোহাগড়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের একদল নৃত্যশিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন। তিনি তাদেরকে পুরস্কৃত করেন।