ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, হামাসের কর্মকাণ্ড ও নীতি ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে ফোনালাপে এমন মন্তব্য করেছেন মাহমুদ আব্বাস।
সাম্প্রতিক সময়ে হামাস এবং ইসরায়েলের সংঘাত নিয়ে কথা বলতে গিয়েই তিনি এমন মন্তব্য করেন। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তারপর থেকেই গত কয়েকদিন ধরে দুপক্ষের মধ্যে সংঘাত চলছেই।
ওয়াফার প্রতিবেদন অনুযায়ী, উভয় পক্ষের বেসামরিক নাগরিক, বন্দী এবং আটকদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন মাহমুদ আব্বাস। তিনি ২০০৫ সাল থেকেই ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি রাজনৈতিক দল ফাতাহ’র নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মূলত হামাস এবং ফাতাহ পার্টির মধ্যে তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে।
অপরদিকে গাজা উপত্যকা ২০০৭ সাল থেকেই শাসন করে আসছে হামাস। কিন্তু গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি এই যোদ্ধাদের হামলা সবাইকে হতবাক করে দিয়েছে। হামাস ইসরায়েলে একসঙ্গে কয়েক হাজার রকেট নিক্ষেপ করেছে। সেই সঙ্গে অনেক হামাস যোদ্ধা গাজার সীমানা অতিক্রম করে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করে।
এরপর তারা ইসরায়েলি বাসিন্দাদের ওপর হামলা চালায়। এই হামলাকে গাজা থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের পরিচালিত এ যাবতকালের সবচেয়ে বড়, ভয়াবহ এবং পরিকল্পিত আন্তঃসীমান্ত অভিযান বলে মনে করা হয়। গাজা উপত্যকা ৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১০ কিলোমিটার প্রশস্ত একটি অঞ্চল যা ইসরায়েল, মিশর এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যে অবস্থিত। এখানে প্রায় ২৩ লাখ মানুষ বসবাস করে, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে একটি।
২০০৫ সালে দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে সহিংস ইন্তিফাদার পর ইসরায়েল গাজা উপত্যকা থেকে তাদের সৈন্য এবং প্রায় সাত হাজার বসতি স্থাপনকারীদের প্রত্যাহার করে নেয়। এর এক বছর পর ফিলিস্তিনের নির্বাচনে হামাস নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। এরপর ২০০৭ সালে ফিলিস্তিনের হামাস এবং ফাতাহ পার্টির মধ্যে একটি সহিংস ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়।
সে সময় ফাতাহ পার্টির নেতৃত্বে ছিলেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। গাজায় হামাস বিজয়ী হয় এবং এখন পর্যন্ত তারাই সেখানকার শাসন ক্ষমতায় টিকে আছে। এর মধ্যে গাজা উপত্যকায় বয়ে গেছে তিনটি যুদ্ধ এবং ১৬ বছরের অবরোধ।
এদিকে সর্বাত্মক অবরোধ আরোপের কারণে গাজার পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। গাজার হাসপাতালগুলোতে জ্বালানি ফুরিয়ে আসছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। সেখানকার বিভিন্ন হাসপাতালে যে পরিমাণ জ্বালানি আছে তাতে আর মাত্র ২৪ ঘন্টার মতো সেবা দেওয়া যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গাজায় সর্বাত্মক অবরোধ আরোপের পর থেকে সেখানে জেনারেটরই ছিল একমাত্র ভরসা। কিন্তু জেনারেটর বন্ধ হয়ে গেলে হাজার হাজার রোগীর জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার কার্যালয় তাদের এক ওয়েবসাইটে সতর্ক করেছে।
সম্প্রতি জ্বালানি ও পানিসহ মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বেশ কয়েকটি ত্রাণ সংস্থা গাজায় প্রবেশ করতে দেওয়ার আহ্বান জানানোর পরই জাতিসংঘও এ বিষয়ে সতর্ক করলো।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) দিনের শুরুতেই গাজায় ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের কর্মরত ব্রিটিশ-ফিলিস্তিনি সার্জন গাসান আবু সিত্তা সতর্ক করেছিলেন যে, লোকজনকে সহায়তা দেওয়ার মতো তাদের কাছে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই।