প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ছয় জেলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে আংশিক এবং সম্পূর্ণ মিলে এক লাখ ৫০ হাজার ৪৭৫টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

সোমবার (২৭ মে) সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় রিমাল পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান এ কথা জানান।

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা ও চট্টগ্রামে মোট ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে খুলনায় এক, সাতক্ষীরায় এক, বরিশালে তিন, পটুয়াখালীতে এক, ভোলায় তিন, চট্টগ্রামে একজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ঘর, গাছ ও দেয়াল চাপা এবং পানিতে ডুবে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ে মোট ১৯টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে রয়েছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর এবং যশোর। ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১০৭টি এবং ইউনিয়ন ও পৌরসভার সংখ্যা ৯১৪টি।

মো. মহিববুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি এবং আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড বাগেরহাট
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় সতর্কবার্তার প্রেক্ষিতে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে নয় হাজার ৪২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র ও স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আট লাখের বেশি লোক আশ্রয় নিয়েছেন। গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়াসহ আশ্রিত পশুর সংখ্যা ৫২ হাজার ১৪৬টি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় গত কয়েকদিন ধরে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে, যার ফলে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। গতকাল (রোববার) সন্ধ্যা থেকে ঘূর্ণিঝড় রিমাল বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় আঘাত হানে। যার প্রভাব দেশের বিস্তৃর্ণ এলাকায় আজ অব্যাহত। আমরা সরকারের সব বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দুর্যোগপূর্ব কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। এখন দুর্যোগপরবর্তী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি।

‘আজ সকাল থেকেই আমরা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করে যাচ্ছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে উপকূলীয় জেলার সংসদ সদস্যদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে স্থানীয় মানুষদের খোঁজখবর নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন।’ বলেন প্রতিমন্ত্রী।
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী
মহিববুর রহমান বলেন, দুর্গত লোকজনকে চিকিৎসাসেবা দিতে মোট এক হাজার ৪৭১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে চালু আছে এক হাজার ৪০০টি।

দুর্যোগকবলিত মানুষের সাহায্যে এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে জানিয়ে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের অনুকূলে ছয় কোটি ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জেলায় জিআর (ক্যাশ) তিন কোটি ৮৫ লাখ নগদ টাকা, পাঁচ হাজার ৫০০ টন চাল, পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য ক্রয়ের জন্য এক কোটি ৫০ লাখ, গোখাদ্য কেনার জন্য এক কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্তদের পুর্নবাসন নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের বরাদ্দের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। প্রত্যেক মন্ত্রণালয় নিজ নিজ বিভাগের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে সেভাবে সহায়তা দেওয়া হবে। এজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সামনের দিকে এই রিপোর্টের ভিত্তিতে সহায়তা অব্যাহত থাকবে। কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করতে পারি সেজন্য আমরা যৌথভাবে বসবো।

মাঠপর্যায় থেকে ডি-ফর্মে প্রতিবেদন পাঠানোর পর ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।

দুর্গত এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা শুনেছি প্রধানমন্ত্রীর একটা প্রোগ্রাম হতে পারে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর অফিসের যোগাযোগ চলছে। প্রোগ্রাম চূড়ান্ত হলে আমরা জানাবো। প্রোগ্রামটা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার আবহাওয়ারও একটা ব্যাপার আছে।