টানা হরতাল-অবরোধ ও রাজনৈতিক সহিংসতার প্রভাব বেশ ভালোই টের পেয়েছে সরকারি-বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো। যাত্রী কমে গিয়েছিল প্রায় ২৫ শতাংশ। আতঙ্ক কাটিয়ে ডিসেম্বরের শেষে এসে কেটেছে সেই খরা। অনেকটা স্বাভাবিক যাত্রী পরিবহন। বেড়েছে টিকিটের চাহিদা। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যটন গন্তব্যগুলোতে অধিকাংশ ফ্লাইটের টিকিট শেষ। জানুয়ারিতেও এ ধারা অব্যাহত থাকার আশা এয়ারলাইন্সগুলোর।
স্কুল-কলেজে পরীক্ষা শেষে ছুটি, বড়দিন এবং ইংরেজি নববর্ষ সামনে রেখে আকাশপথে টিকিটের চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজার, সিলেট, চট্টগ্রামসহ পর্যটন গন্তব্যে কাঙ্ক্ষিত সব তারিখেই টিকিট চাহিদা বেশি। অধিকাংশ ফ্লাইট চলছে পূর্ণ যাত্রী নিয়ে।
দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী পরিবহন করা এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, হরতাল-অবরোধের কারণে আকাশপথে প্রায় দেড় মাস অচলাবস্থা ছিল। যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর আতঙ্কে বিমানবন্দর পর্যন্ত যাওয়ার সাহস দেখাননি। টানা এ ধরনের কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ ক্লান্ত। তারা এখন হরতাল-অবরোধের মধ্যেও সাহস নিয়ে ভ্রমণে বের হচ্ছেন। অনেকে নিরাপদে পর্যটন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য বেছে নিচ্ছেন আকাশপথ। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অধিকাংশ ফ্লাইটের টিকিট বিক্রি শেষ। জানুয়ারিতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন তারা।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট, সৈয়দপুর, যশোর, রাজশাহী, বরিশাল রুটে শতাধিক ফ্লাইট পরিচালিত হয়। এসব ফ্লাইট পরিচালনা করে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা, নভোএয়ার ও এয়ার অ্যাস্ট্রা। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিমান ও ইউএস-বাংলা সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন করে বলে জানিয়েছে শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (বিপণন ও বিক্রয়) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতি বছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে পর্যটন স্থানগুলোতে ভিড় থাকে। সে কারণে অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়কে অভ্যন্তরীণ রুটের জন্য ভরা মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পর্যটন স্থানগুলোও এ সময় পর্যটকদের অপেক্ষায় থাকে, প্রস্তুতি থাকে ভালো ব্যবসা করার। এখন পর্যটন নগরী কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও সিলেটে টিকিটের চাহিদা বেশি। প্রতিদিন গড়ে ১২টি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান।’
তবে হরতাল-অবরোধের কারণে পর্যটন গন্তব্যগুলোতে গত নভেম্বর মাসে যাত্রী তুলনামূলক বেশি কমেছিল বলে জানিয়েছে বেসরকারি এয়ারলাইন্স সংস্থাগুলো। এ বিষয়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের আগে অভ্যন্তরীণ রুটে যত যাত্রী ছিল, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তার চেয়ে গড়ে ১৫ শতাংশ টিকিট বিক্রি কম হয়। বিশেষ করে পর্যটন গন্তব্য কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেটে যাত্রী অনেক কম ছিল। এখন আগের মতোই টিকিট বিক্রি স্বাভাবিক আছে।’
তিনি বলেন, ‘ইউএস-বাংলা এখন দিনে অভ্যন্তরীণ রুটে ৭০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে। এসব ফ্লাইটে টিকিটের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে স্কুলগুলোতে পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই টিকিট বুকিং হয়ে গেছে। সঙ্গে বড়দিন ও থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষে কক্সবাজারের টিকিটের চাহিদা বেশি।’
কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ সাতটি গন্তব্যে দিনে ২৩-২৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করে বেসরকারি এয়ারলাইন্স নভোএয়ার। প্রতিষ্ঠানটির হেড অব সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নভেম্বরে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের কারণে আকাশপথে সরাসরি প্রভাব পড়েছিল। এতে পর্যটন গন্তব্যে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ যাত্রী কমে যায়। এখন আবার ফ্লাইট স্বাভাবিক আছে। কোনো ফ্লাইটই ফাঁকা যাচ্ছে না।’
দেশে ট্রাভেল এজেন্টদের শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)। সারাদেশে সংগঠনটির সাড়ে তিন হাজার সদস্য রয়েছে। দেশ-বিদেশে অ্যাভিয়েশন ও পর্যটন খাতের সুষ্ঠু উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে সংগঠনটি।
হরতাল-অবরোধে অভ্যন্তরীণ রুটে উড়োজাহাজ টিকিট কেমন বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে সংগঠনটির মহাসচিব আব্দুস সালাম আরেফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের কারণে মানুষ আতঙ্কে আছে। নভেম্বরে ভয় নিয়ে কেউ বেড়াতে যেতে চায়নি। ফলে গত বছরের তুলনায় তখন এয়ারলাইন্সের টিকিট বুকিং গড়ে ৪০ শতাংশ কম ছিল। এখন আবার টিকিট বিক্রি স্বাভাবিক হয়েছে।’