ভারতের শিল্পজগতের নক্ষত্র টাটা গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান রতন টাটা মারা গেছেন। বুধবার (৯ অক্টোবর) রাতে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

এ শিল্পপতির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

বার্ধক্যজনিত কারণে রতন টাটা মারা গেছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
গত ৬ অক্টোবর মধ্যরাতে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মুম্বাইয়ের ওই হাসপাতালে। চিকিৎসার পর অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি।

সুস্থ আছেন বলে নিজেই জানান রতন টাটা। বলেন, তাকে নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। কিন্তু বুধবার ফের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে তার। তখনই জানা যায়, অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাতেই এলো এ বিজনেস আইকনের মৃত্যুর খবর।

রতন টাটার মৃত্যুর খবরে ইতোমধ্যে শোক প্রকাশ করে মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্স -এ বার্তা দিয়েছেন হর্ষ গোয়েঙ্কা থেকে শুরু করে গৌতম আদানি, আনন্দ মহিন্দ্রাসহ শিল্পপতিরা। শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

যে ২১ বছর রতন টাটার হাতে টাটা গ্রুপের দায়িত্ব ছিল, তাতে গ্রুপের আয় বেড়ে হয় ৪০ গুণ, মুনাফা বাড়ে ৫০ গুণ। মধ্যবিত্তকে চার চাকার স্বপ্ন দেখান রতন টাটাই। পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা গড়ে ওঠে। যদিও রাজনৈতিক টানাপড়েনে পরে গুজরাতে কারখানা সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়।

৭৫ বছর বয়সে ২০১২ সালে টাটা গ্রুপের নির্বাহী ক্ষমতা ছেড়ে দেন রতন টাটা। সেই জায়গায় পারিবারিক আত্মীয় সাইরাস মিস্ত্রিকে আনা হয়। কিন্তু ২০১৬ সালে সাইরাসকে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ফের অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে ফেরেন রতন টাটা। এরপর ২০১৭ সালে নটরাজন চন্দ্রশেখরণকে অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সমাজসেবামূলক কাজে আরও বেশি করে যুক্ত হন রতন টাটা।

২০০০ সালে ‘পদ্মভূষণ’ সম্মান পান রতন টাটা। ২০০৮ সালে পান ‘পদ্ম বিভূষণ সম্মান’। মহারাষ্ট্র, আসাম সরকারও তাকে সম্মান প্রদান করে। ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজ, লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স, আইআইটি বম্বে, ইয়েল ইউনিভার্সিটি, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, রাজা তৃতীয় চার্লসের থেকেও বিশেষভাবে সম্মানিত হন।

রতন টাটা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হননি। তবে ২০১১ সালে একটি সাক্ষাৎকারে জীবনে প্রেম এসেছিল বলে স্বীকার করে নেন। চার-চারবার বিয়ের পিঁড়িতে বসার উপক্রম হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো সম্পর্ক পরিণতি পায়নি বলে জানান।