আবারও শ্রমিক বিক্ষোভে অশান্ত আশুলিয়া শিল্প এলাকা। বার্ষিক মজুরি ১৫ শতাংশ ও ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করারসহ নতুন আরও কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে আজ বৃহস্পতিবারও কর্মবিরতি পালন করেছেন আশুলিয়ার বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা।
শ্রমিক অসন্তোষের কারণে আজ বৃহস্পতিবার আরও ৮টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে গতকাল বন্ধ করা হয় ১১টি কারখানা। এ নিয়ে মোট কারখানা বন্ধ হলো ১৯টি।
গতকাল সকালে কাজে যোগ দিয়েও ২৫টি কারখানার শ্রমিকরা উৎপাদন বন্ধ রেখে বেরিয়ে যান। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বেশ কয়েকটি কারখানায়।
পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) তথ্যমতে, বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬-এর ১৩ (১) ধারায় আজ বন্ধ কারখানার সংখ্যা ৮টি। কারখানাগুলো হলো এজে সুপার গার্মেন্টস লিমিটেড, মাম গার্মেন্টস লিমিটেড, ফিরোজা গার্মেন্টস লিমিটেড, নাসা সুপার গার্মেন্টস লিমিটেড, নাসা বেসিক লিমিটেড, ট্রাউজার লাইন লিমিটেড, আল মুসলিম অ্যাপারেলস ও এস সুহি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। তবে আজ কারখানায় কাজ না করে করে চলে গেছেন বা কাজ বন্ধ আছে আশুলিয়ায় এমন কারখানার সংখ্যা ১৩টি। আর সবেতনে ছুটি আছে ৮টি কারখানায়।
শিল্প–পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নাসা গ্রুপের তিনটি কারখানা ১৩(১) ধারা অনুসারে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৫-৩০টি কারখানার শ্রমিকেরা কাজে যোগ না দেওয়ায় দুপুরের আগে বিভিন্ন সময়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরে শ্রমিকেরা কারখানা থেকে বের হয়ে যান। তবে হঠাৎ পোশাক খাতে এ ধরনের অস্থিরতার পেছনে ইন্ধন দেখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মালিকপক্ষ। কারা এ ধরনের ঘটনায় ইন্ধন দিচ্ছে তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। এ ছাড়া শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে তৃতীয় পক্ষের কোনো কারসাজি রয়েছে কিনা তাও তদন্ত হচ্ছে।
আশুলিয়ায় গতকাল বুধবার কয়েকটি কারখানায় ইটপাটকেল ছোড়া হয়। বড় ধরনের সংঘাতময় বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে যৌথ বাহিনীর সদস্যরাও সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি।
গত তিন মাসে কয়েক বার আশুলিয়া, সাভার ও গাজীপুরে নানা দাবিতে রাস্তায় নামেন শ্রমিকরা। তবে আশুলিয়া ছিল সবচেয়ে বেশি অশান্ত। অনেক কারখানায় দফায় দফায় ভাঙচুর ও হামলা করা হয়েছে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় ধীরে ধীরে পরিস্থিতি শান্ত হলেও হঠাৎ ফের আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় মালিকপক্ষ উদ্বিগ্ন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইনক্রিমেন্ট নিয়ে গত সোমবার ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি ৯ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, শিল্প খাতে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে এ অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়েছে। পতিত সরকার ও তাদের বন্ধুরাষ্ট্র জড়িত হয়ে কিছু সমস্যা তৈরি করছে। কিছু সমস্যা শ্রমিকরা না বুঝে করছেন। গতকাল বুধবার আগারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূইয়া সমকালকে বলেন, বার্ষিক বেতন-ভাতা ১৫ শতাংশ বাড়ানো ছাড়াও ছুটির টাকাসহ কয়েকটি দাবিতে আজ সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন শুরু করেন শ্রমিকরা। একপর্যায়ে কিছু শ্রমিক কয়েকটি পোশাক কারখানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে অন্য শ্রমিকদের বের করে আনার চেষ্টা করেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ পর্যায়ক্রমে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।
শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার আরও বলেন, আজ ১৩টি কারখানায় কাজ বন্ধ আছে। এর মধ্যে ১০টি কারখানা কর্তৃপক্ষ আজকের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। গতকাল বন্ধ ঘোষণা করা কারখানার সংখ্যা ১১।