৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব ইজতেমার ৫৮ তম আসরের আজ সমাপ্তি হচ্ছে। বেলা ১২ টায় আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই ধর্মীয় সমাবেশ। আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করবেন মাওলানা সাদের বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ।

আজকের সমাপ্তি পর্বে ফজরের পরে বয়ান শুরু করেন, দিল্লি নিজামউদ্দিন, মারকাজের মাওলানা মোরসালিন, তরজমায় মুফতি আজিম উদ্দিন।

সকাল সাড়ে ৯ টায় হেদায়েতের বয়ান দিয়ে শুরু হওয়া আমল শেষ হবে বেলা ১২ টায় আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে। আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করবেন মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ।

ইজতেমা সৃষ্টির ইতিহাসে এবারের ৫৮ তম ইজতেমা একাধিক কারণে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ইতিহাসের মধ্যে ইজতেমা শুরুর আগেই চারজন মুসল্লি নিহত হয়েছেন।

এই ঘটনায় ইজতেমায় এই প্রথম তিনটি আখেরী মোনাজাতের জন্ম হলো। তিনটি আখেরী মোনাজাতের কারণে এবারই প্রথম শবেবরাত পড়ে গেল ইজতেমায়। আর বিশ্ব ইজতেমায় শবেবরাত পালনের মাধ্যমে আরেকটি নতুন ইতিহাসের জন্ম দিল এবারের বিশ্ব ইজতেমা।

শবেবরাতের ফলে অনেক মুসল্লি এক সঙ্গে ইজতেমা ময়দানে দুই দিন রোজা রেখে ও ইফতার করে নতুন ইতিহাসের জন্ম দিল।

জানা যায়, ২০১১ সালে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্ব ইজতেমাকে দুই ভাগে ভাগ করে প্রথম বিভক্তির জন্ম দেয়। ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর মাওলানা সাদের আগমন ঠেকাতে সৃষ্ট সংঘর্ষে দুইজন মুসল্লি নিহত হন। এরপর থেকে দুই বছর করোনার জন্য ইজতেমা হয়নি। ২০২৩ সাল পর্যন্ত সাদ ও জুবায়ের গ্রুপ পৃথকভাবে দুই পর্বে ইজতেমা
করে। ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাতে ইজতেমা ময়দানে সংঘর্ষ হয় ও এতে চারজন মুসল্লি নিহত হন।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট জটিলতায় এবার বিশ্ব ইজতেমায় তিনটি আখেরী মোনাজাতের সৃষ্টি হয়। প্রথম পর্বে দুই ধাপে দুটি আখেরী মোনাজাত করেন শূরায়ি নেজাম বা জুবায়ের পন্থীরা। দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আরেকটি আখেরী মোনাজাত। মানে এই বছর দুটি থেকে তিনটি আখেরী মোনাজাতের জন্ম হল।

এদিকে সাদপন্থীদের পূর্ব নির্ধারিত ইজতেমা ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি হওয়ার কথা থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার তাদেরকে ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি ইজতেমা করতে দেয়। এতে ১৪ ফেব্রুয়ারি পবিত্র শবেবরাত হওয়ায় ইজতেমা ময়দানেই প্রথমবারের মত পালিত হয় পবিত্র শবেবরাত। মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে শবেবরাত পালন করে শুক্রবার ও শনিবার রোজা, সেহরি ও ইফতার এক সঙ্গে করার সুযোগ পায়।

সাধারণ মুসল্লিরা বলছেন, ‘তিনটি নয়, আমরা একটি আখেরী মোনাজাত করতে চাই। এভাবে যদি আখেরী মোনাজাত বাড়তে থাকে তবে এমন সময়ও আসতে পারে যে, অনেক আখেরী মোনাজাত সৃষ্টি হয়ে ইজতেমার প্রতি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আগ্রহই কমে যাবে। তাই আর আখেরী মোনাজাত সংখ্যায় না বাড়িয়ে একটি আখেরী মোনাজাতের ব্যবস্থা করা উচিত।’ আর তা করতে না পারলে বাংলাদেশে ইজতেমা বিতর্কিত হয়ে দেশান্তরিতও হতে পারে বলে আশঙ্কা মুসল্লিদের।