বেলারুশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নতুন মেয়াদে শপথ নিয়েছেন আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো। এ নিয়ে সপ্তমবারের মতো দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন তিনি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রায় ৮৭ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন এই নেতা।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বেলারুশ।

স্বাধীনতার পর দেশটির অস্থায়ী সরকারপ্রধান ছিলেন সাবেক সোভিয়েত বেলারুশ অঙ্গরাজ্যের চেয়ারম্যান স্তানিস্লাভ শুশকেভিচ। ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় বেলারুশে এবং তাতে জয়ী লুকাশেঙ্কো। তারপর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭ বার প্রেসিডেন্ট নির্বচন হয়েছে বেলারুশে, প্রতিবারই জয় পেয়েছেন তিনি।
বেলারুশের সংবিধান অনুসারে দেশটির প্রেসিডেন্টের মেয়াদ ৫ বছরের।

সেই হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর গত ৩৩ বছরের মধ্যে ৩০ বছরই দেশটির সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের পদে রয়েছেন লুকাশেঙ্কো।
মঙ্গলবার বেলারুশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সপ্তমবারের মতো শপথ গ্রহণ করেছেন আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো। শপথ অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় সেরিমোনিয়াল হলে, যা দেশটির রাজধানী মিনস্কের প্যালেস অব ইন্ডিপেন্ডেন্সের মধ্যে সবচেয়ে বড় স্থান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজার হাজার লুকাশেঙ্কোর সমর্থক উপস্থিত ছিলেন, যেখানে তিনি তার সমালোচকদের বিদেশি দালাল বলে নিন্দা করেন, যারা জনগণের সঙ্গে বিরোধিতা করে।

তিনি ভাষণে বিরোধীদের বলেন, ‘আপনাদের জনসমর্থন নেই এবং থাকবে না, আপনাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আমাদের গণতন্ত্র তাদের চেয়ে বেশি যারা নিজেদেরকে এর মডেল হিসেবে উপস্থাপন করে।’
৭০ বছর বয়সী লুকাশেঙ্কো মিনস্কের রাজধানী স্বাধীনতা প্রাসাদে তার উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, ‘পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ আমাদের একনায়কতন্ত্র নিয়ে স্বপ্ন দেখে।’

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বিদেশে বসবাসকারী শত শত বিরোধী সমর্থক লুকাশেঙ্কো-বিরোধী সমাবেশ করেছেন। ভিন্নমত এবং বাকস্বাধীনতার ওপর লুকাশেঙ্কোর দমন-পীড়নের ফলে বিরোধী সদস্যদের কারারুদ্ধ করা হয়েছে অথবা বিদেশে নির্বাসিত করা হয়েছে।

২০২০ সালের নির্বাচনের পর ৯০ লাখ মানুষের দেশটির ইতিহাসে কয়েক মাস ধরে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয় এবং কঠোর দমন-পীড়নের সূত্রপাত হয়। ৬৫ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়, হাজার হাজার মানুষকে পুলিশ মারধর করে। স্বাধীন সংবাদমাধ্যম এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বেআইনি ঘোষণা করা হয়, যার ফলে পশ্চিমা বিশ্ব নিন্দা ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায় আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক তেমন ভালো নয়। ১৯৯৯ সাল থেকে বেলারুশ রাশিয়ার কৌশলগত অংশীদার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাঁধার পর থেকে দু’দেশেল সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে।