ঢাকা, ১৭ শ্রাবণ (১ আগস্ট) :
আজ আগস্টের প্রথম দিন। শোকাবহ আগস্টের প্রথম দিন। ১৯৭৫ সালের এ মাসেই
বাঙালি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানকে। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে, এ আগস্ট মাসেই, ২১ আগস্ট গ্রেনেড ছুঁড়ে হত্যার
চেষ্টা হয়েছিল জাতির পিতার কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ভাগ্যক্রমে
সেদিন তিনি বেঁচে গেলেও এই ঘটনায় সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী,
আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং পাঁচ
শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন।
আগস্টের কালরাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে
প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর
সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজি
জামাল, বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে শেখ
ফজলুল হক মনি, তাঁর সহধর্মিনী আরজু মনি ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য
ও আত্মীয়-স্বজন।
এই ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ডের পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং
ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প। ‘দ্য টাইমস অব লন্ডন’ এর ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায়
উল্লেখ করা হয় ‘সবকিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সবসময় স্মরণ করা হবে। কারণ, তাঁকে
ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই।
একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশের লাখ
লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকান্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।’
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের রায় কার্যকর করে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। একইভাবে
বাঙালির আত্মঘাতী চরিত্রের অপবাদেরও অবসান ঘটানো হয়েছে।
শোকাবহ আগস্টে সমগ্র জাতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী,
ভ্রাতৃপ্রতিম ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক- রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ যথাযোগ্য মর্যাদা,
শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও ভাবগম্ভীর আর বেদনাবিধুর পরিবেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে
জাতীয় শোক দিবস পালন করবে।
তবে, এবার জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি সীমিত পরিসরে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালন
করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
মাসব্যাপী আগস্টের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে: ৫ আগস্ট শেখ কামালের জন্মদিন
উপলক্ষ্যে সকাল সাড়ে ৮ টায় আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের
প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন।
৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষ্যে সকাল ৯ টায় বনানী
কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে সকালে ঐতিহাসিক
৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং
বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে
আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। এদিন জাতীয় শোক দিবস
উপলক্ষ্যে দেশের সকল মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা
অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও ১৬ আগস্ট বিকেলে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
হবে।
নারকীয় গ্রেনেড হামলা দিবস ২১ আগস্ট উপলক্ষ্যে সকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু
এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধা নিবেদন। বিকেলে ঘরোয়া
ভাবে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।